ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),কক্সবাজার প্রতিনিধি,সোমবার, ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২ : মেজর অবসরপ্রাপ্ত সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যাকাণ্ডে কোর্টের দেয়া পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়েছে। রায়ে কোর্টের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে খারাপ অতীত রেকর্ডের পরও ওসি প্রদীপকে পুলিশ পদক দেয়ায় পদকের মর্যাদার অসম্মান করা হয়েছে। রোববার (৬ ফেব্রুয়ারি) সিনহা হত্যার ২৮৮ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়ে এ কথা বলা হয়েছে।
এর আগে গত সোমবার (৩১ জানুয়ারি) কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাইল অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলায় টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক লিয়াকত আলীর মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন। এছাড়া নন্দুদুলাল, সাগর, রুবেল, আয়াজ, নিজাম, নূরুল আমিনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করেন। আর এপিবিএন’র ৩ সদস্যসহ ৭ জনকে খালাস দেন বিচারক।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের জুলাই মাসে সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান ‘জাস্ট গো’ নামে একটি ডকুমেন্টারি বানানোর জন্য কক্সবাজারের বিভিন্ন পর্যটন স্পট এবং মেরিন ড্রাইভ সড়কের পাশের পাহাড় ও সমুদ্রের প্রাকৃতিক দৃশ্যের ভিডিও ধারণ করতে এসেছিলেন। এ সময় তার দুই সহযোগী সাহেদুল ইসলাম সিফাত এবং শিপ্রা দেবনাথ সঙ্গে ছিলেন। এরই অংশ হিসেবে টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের মারিশবুনিয়া এলাকার মুইন্যা পাহাড়ের ভিডিও চিত্র ধারণ শেষে মেরিন ড্রাইভ সড়ক দিয়ে কক্সবাজার ফিরছিলেন।
৩১ জুলাই রাত সাড়ে ৯টার দিকে শামলাপুর বাজারের কাছে এপিবিএন পুলিশ চেকপোস্টে বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক লিয়াকতের গুলিতে নিহত হন সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। এ সময় আটক করা হয়েছিল সাহেদুল ইসলাম সিফাতকে। তল্লাশি চালানো হয় সিনহা যে হোটেলে থাকতেন সেখানে। ওই হোটেল থেকে আটক করা হয় অপর সহযোগী শিপ্রা দেবনাথকে। পরে ঘটনাটি নিয়ে সারাদেশে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
ঘটনার চার দিন পর ২০২০ সালের ৫ আগস্ট সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে ৯ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে কক্সবাজারের জ্যেষ্ঠ বিচারক তামান্না ফারাহ’র আদালতে মামলা করেন। এতে প্রধান আসামি করা হয় টেকনাফের বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক লিয়াকত আলীকে। ওসি (বরখাস্ত) প্রদীপ কুমার দাশকে করা হয় দুই নম্বর আসামি। মামলার তিন নম্বর আসামি করা হয় বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের উপপরিদর্শক (এসআই) নন্দদুলাল রক্ষিতকে।
আদালত মামলাটির তদন্তভার দেন কক্সবাজারের র্যাব-১৫-কে। এরপর জানা যায় আসল ঘটনা।
২০২০ সালের ৬ আগস্ট ওসি প্রদীপ, পরিদর্শক লিয়াকতসহ মামলার আসামি সাত পুলিশ সদস্য আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। পরে তদন্তে নেমে হত্যার ঘটনায় স্থানীয় তিন বাসিন্দা, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) তিন সদস্য ও ওসি প্রদীপের দেহরক্ষীসহ আরও সাত জনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। এরপর মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি কনস্টেবল সাগর দেবের আত্মসমর্পণের মাধ্যমে আলোচিত এই মামলার ১৫ আসামির সবাই আইনের আওতায় আসে।
এই মামলায় চার মাসের বেশি সময় তদন্ত শেষে ২০২০ সালের ১৩ ডিসেম্বর ৮৩ জন সাক্ষীসহ অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা র্যাব-১৫-এর জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম।
১৫ জনকে আসামি করে দায়ের করা অভিযোগপত্রে সিনহা হত্যাকাণ্ডকে একটি ‘পরিকল্পিত ঘটনা’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।