৫০ বছর ধরে মসজিদ রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে হিন্দু পরিবার

SHARE
amanati-mosque-south-24-pargana

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),আন্তর্জাতিক প্রতিনিধি,মঙ্গলবার, ১১ জানুয়ারি ২০২২ : ধর্মীয় সহিংসতা থাবা বসিয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। ভারতসহ অনেক দেশই যখন ধর্মীয় রোষানলে পুড়ছে, তখন ব্যতিক্রমী চিত্র দেখা যায় পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলায়।

সেখানে ধর্মীয় ভেদাভেদ ভুলে সম্প্রীতির অনন্য নজির গড়লেন পশ্চিমবঙ্গের এক হিন্দু পরিবার। গত ৫০ বছর ধরে স্থানীয় একটি মসজিদ রক্ষণাবেক্ষণ করে আসছেন তারা। হিন্দু-মুসলিম একত্রে বসে ইফতার, প্রার্থনায় মগ্ন হওয়া সেখানকার নিয়মিত দৃশ্য।

ধর্মীয় সম্প্রীতির এ অনন্য দৃষ্টান্তের জন্ম দিয়েছে বসু পরিবার। যারা উত্তর ২৪ পরগনা জেলার পশ্চিম ইছাপুরে অবস্থিত আমানতি মসজিদের রক্ষণাবেক্ষণ করে আসছেন ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে।

দেশভাগের পর, ধর্মীয় দাঙ্গার কারণে ১৯৬৫ সালে বাংলাদেশের খুলনা জেলা থেকে পশ্চিমবঙ্গে আসেন দীপক বসু। এই অঞ্চলের তৎকালীন মালিক শেখ ওয়াজি মোল্লার কাছ থেকে জমি বদল করে পান পশ্চিম ইছাপুরের ১৬ বিঘা জমি। সেখানেই বিদ্যমান শত বছরের পুরোনো আমানতি মসজিদ।

সেদিন থেকেই মসজিদটি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নেন দীপক বসু ও তার পরিবার। মসজিদ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা থেকে শুরু করে ওযুর পানি সরবরাহ করা- সব কাজই করেন হিন্দু এই পরিবারটি।

মসজিদের বর্তমান রক্ষণাবেক্ষণকারী পার্থ সারথি বসু বলেন, হিন্দু ধর্মমতে প্রথম শিক্ষা হচ্ছে সব ধর্মকে সম্মান করা। এটাই হিন্দুদের আদর্শ। আমিও একটা হিন্দু ধর্মের ছেলে। আমি সেই আদর্শকে সামনে রেখেই, আমার মুসলমান ভাইদের সঙ্গে নিয়ে ইসলাম ধর্মকে বুকে আগলে ধরে সেই পথ কে অনুসরণ করি।

মসজিদকে ঘিরেই গরে উঠেছে ওই অঞ্চলের সবরকম উদযাপন। মসজিদের দেয়ালে লেখা ‘প্রভুকে প্রণাম করো।’ অনেক হিন্দু ধর্মাবলম্বীরাও আসা যাওয়ার পথে প্রণাম করে মসজিদটিকে। কেউবা মসজিদ প্রাঙ্গণে জ্বালিয়ে রাখেন সন্ধ্যা প্রদীপ।

ধর্ম নির্বিশেষে একসাথে বসে ইফতার করা, এক সঙ্গে সব ধর্মের লোক একত্রিত হয়ে প্রার্থনা করা এই অঞ্চলের পরিচিত দৃশ্য। তবে কেউ আঘাত করে না কারো ধর্মকেই।

মসজিদের ইমাম মোহাম্মদ আখতার আলী বলেন, আমরা ধর্মটাকে কোনভাবেই রাজনীতির মধ্যে ঢুকতে দেব না। অর্থাৎ এই হানাহানি আমরা কখনোই করব না, করতে চাই না। এজন্য আমি ব্যক্তিগতভাবে পার্থদাকে ভাইয়ের মতোই প্রচণ্ড ভালোবাসি।