ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),ঢাকা প্রতিনিধি,শনিবার, ০১ জানুয়ারি ২০২২ : করোনার কারণে এবার ইংরেজি নববর্ষের প্রথম দিন বই উৎসব হচ্ছে না। তবে বিতরণ কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। শনিবার (১ জানুয়ারি, ২০২২) থেকে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেয়া হবে।
এবারের শিক্ষাবর্ষে ৪ কোটি ১৭ লাখ ২৬ হাজার ৮৫৬ শিক্ষার্থী রয়েছে। তাদের মাঝে ৩৪ কোটি ৭০ লাখ ২২ হাজার ১৩০ কপি পাঠ্যপুস্তক বিনামূল্যে বিতরণ করা হবে।
এর মধ্যে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য ব্রেইল পদ্ধতিতে পাঠ্যপুস্তক এবং পাঁচটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের মাতৃভাষায় মুদ্রিত পাঠ্যপুস্তকও রয়েছে। তবে নতুন বছরের প্রথম দিনে সব শিক্ষার্থীকে বই দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। পর্যায়ক্রমে তা পাবে শিক্ষার্থীরা।
বৃহস্পতিবার (৩০ ডিসেম্বর, ২০২১) রাজধানীর আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসএসসির ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ করেন। এরপরই ‘পাঠ্যপুস্তক উৎসব’ উদ্বোধন করেন তিনি।
এসময় শিক্ষামন্ত্রী ডা.দীপু মনি বলেন, নতুন বছরের ৯৫ শতাংশ বই তৈরি হয়েছে। ইতোমধ্যে সেগুলো বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পৌঁছে দেয়া হয়েছে। বাকি ৫ শতাংশ বই জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে স্কুলগুলোতে পৌঁছানো হবে।
তিনি বলেন, মোট প্রায় ৩৮ কোটি বইয়ের মধ্যে মাধ্যমিকের ২১ কোটি বই মুদ্রণ ও বাঁধাই করা হয়েছে। বাকি ১৭ কোটির বেশি দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করা হয়েছে। অবশিষ্ট বই শিগগির স্কুল পর্যায়ে পাঠানো হবে।
২০১২ সাল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে উৎসবের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দিচ্ছে সরকার। এই কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় সারাদেশে একযোগে বছরের প্রথম দিন (১ জানুয়ারি) শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অভিভাবক, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা-কর্মচারির উপস্থিতিতে উৎসবমুখর ও আনন্দঘন পরিবেশে বই বিতরণ উদযাপিত হয়ে আসছে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে ২০২১ সালে বই উৎসবকে বর্ণিলভাবে সাজানো হয়। তবে বিশ্বব্যাপী করোনা পরিস্থিতির কারণে সেটি সম্ভব হয়নি।
কিন্তু প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সফলভাবে ১ জানুয়ারি ৯ কোটি ৩৭ লাখ ৭৫ হাজার ৮৯৩টি বই সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বাড়িতে পৌঁছে দেন।
২০২২ শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিক স্তরে ৯ কোটি ৩০ লাখ ৩৪ হাজার ৩০টি, প্রাক-প্রাথমিক স্তরে ৬৬ লাখ ৫ হাজার ৪৮০টি, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্য ২ লাখ ১৯ হাজার ৩৬৪টি বই বরাদ্দ করা হয়েছে। সবমিলিয়ে মোট ৯ কোটি ৯৮ লাখ ৫৮ হাজার ৮৭৪টি বই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেয়া হবে।
প্রাক- প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যপুস্তক-পঠন-পাঠন সামগ্রীর মধ্যে আমার বই এবং অনুশীলন খাতা বরাদ্দ রয়েছে। এই সংখ্যা ৩৩ লাখ ২ হাজার ৭৪০টি।
অন্যদিকে ৫১২টি উপজেলা ও থানায় বাংলা ভার্সনে এবং ৫৬টি জেলায় ইংরেজি ভার্সানের বই বরাদ্দ হবে। প্রথম শ্রেণিতে মোট ১ কোটি ২৪৯৬ হাজার ৪৯৪টি পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করা হবে। এর মধ্যে বাংলা ভার্সনে ৫১২টি উপজেলা এবং থানায় ১ কোটি ২৩ লাখ ৭৬ হাজার ৫৯৯টি, ইংরেজি ভার্সনে ৫৬টি জেলায় ১ লাখ ১৯ হাজার ৮৯৫টি বই দেয়া হবে।
দ্বিতীয় শ্রেণিতে মোট ১ কোটি ২১ লাখ ৪৩ হাজার ৩০৯টি বই বরাদ্দ রয়েছে। এর মধ্যে বাংলা ভার্সনে ১ কোটি ২০ লাখ ২৩ হাজার ৭৮০ এবং ইংরেজি ভার্সনে ১ লাখ ১৯ হাজার ৫২৯টি বই দেয়া হবে।
তৃতীয় শ্রেণিতে মোট ২ কোটি ৩৬ লাখ ৫ হাজার ১৮৬টি বই বিতরণ করা হবে। এর মধ্যে বাংলা ভার্সনে ২ কোটি ৩৩ লাখ ৯৯ হাজার ৩৪৮টি এবং ইংরেজি ভার্সনে ২ লাখ ৫ হাজার ৮৩৮টি বই দেয়া হবে।
চতুর্থ শ্রেণিতে মোট ২ কোটি ২৯ লাখ ৪৫ হাজার ৯৯৭টি বই বিতরণ করা হবে। এর মধ্যে বাংলা ভার্সনে ২ কোটি ২৭ লাখ ৫৮ হাজার ৭৬৭টি এবং ইংরেজি ভার্সনে ১ লাখ ৮৭ হাজার ২৩০টি বই বরাদ্দ করা হয়েছে।
পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য মোট ২ কোটি ১০ লাখ ২৪ হাজার ৫২৩টি বই বরাদ্দ করা হয়েছে। এর মধ্যে বাংলা ভার্সনে ২ কোটি ৮ লাখ ৬০ হাজার ১৯৩টি এবং ইংরেজি ভার্সনে ১ লাখ ৬৪ হাজার ৩৩০টি বই রয়েছে।
এছাড়া ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর শিশুদের জন্য নিজস্ব বর্ণমালা সম্বলিত মাতৃভাষায় প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণির পঠন-পাঠন সামগ্রী, প্রাথমিক স্তরের পাঠ্যবই প্রণয়ন এবং সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ২০২২ শিক্ষাবর্ষে ৫টি ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী (চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, গারো ও সাদরী) শিশুদের মাঝে প্রাক-প্রাথমিক এবং প্রাথমিক পর্যায়ে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করা হচ্ছে।
ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর পাঠ্যপুস্তক বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, চট্টগ্রাম, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, শেরপুর, নেত্রকোণা, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, নঁওগা, নাটোর, সিরাজগঞ্জ, দিনাজপুর, জয়পুরহাট, চাঁদপুর, ফেনী, কক্সবাজার, সুনামগঞ্জ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ-মোট ২০ টি জেলায় সরবরাহ করা হবে।
২০১০-২০২১ সাল পর্যন্ত সর্বমোট ৪০০ কোটি ৫৪ লাখ ৬৭ হাজার ৯১১ কপি বই বিতরণ করা হয়েছে।
