ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),বিশেষ প্রতিনিধি,মঙ্গলবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২১ : আমাদের দৈনন্দিন জরুরি অনেক কাজে বিভিন্ন ধরনের কাগজ বা দলিলে স্ট্যাম্প ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া অর্থ লেনদেনের চুক্তিসহ অনেক কাজে স্ট্যাম্প ব্যবহার করা হয়। তার আগে অবশ্যই আমাদের স্ট্যাম্প কী, কীভাবে ব্যবহার করে ও লেখার নিয়ম সম্পর্কে জানতে হবে।
মূলত বিভিন্ন প্রকার দলিল, চুক্তিপত্র, সেল ডিড, হলফনামা, প্রমিসরি নোট, বিনিময় বিল, আমদানি রপ্তানি সংশ্লিষ্ট দলিলসহ নানা ধরনের দলিলের আইনগত স্বীকৃতির জন্য স্ট্যাম্প ব্যবহার করা হয়।
বাজারে বিভিন্ন ধরনের স্ট্যাম্প পাওয়ার যায় যেমন- ১, ২, ৫, ১০, ২০, ৫০, ১০০ ইত্যাদি। ভবিষ্যতে আইনগতভাবে স্বীকৃতির জন্য আবশ্যক এই রকম সব ধরনের দলিলেই স্ট্যাম্প যুক্ত করতে হয়।
তবে কোন দলিলের জন্য আপনি কত টাকার স্ট্যাম্প কিনবেন তাও স্ট্যাম্প আইন ১৮৯৯-এর তফসিল দ্বারা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। যেই দলিলের জন্য যত টাকার স্ট্যাম্প যুক্ত করার কথা বলা হয়েছে ঠিক সেই স্ট্যাম্পই আপনাকে যুক্ত করতে হবে।
স্ট্যাম্প লেখার নিয়ম
জরুরি কাগজ ও দলিলকে আইনগতভাবে বৈধ করার জন্য স্ট্যাম্প করা হয়। তাই নিজেদের মতো করে স্ট্যাম্প লেখা যাবে না। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী স্ট্যাম্প লিখলেই কেবল এটি বৈধতা পাবে। চলুন জেনে নেই স্ট্যাম্প লেখার নিয়ম –
জরুরি কাগজ ও দলিলকে আইনগতভাবে বৈধ করার জন্য স্ট্যাম্প করা হয়। তাই নিজেদের মতো করে স্ট্যাম্প লেখা যাবে না। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী স্ট্যাম্প লিখলেই কেবল এটি বৈধতা পাবে। চলুন জেনে নেই স্ট্যাম্প লেখার নিয়ম –
প্রথমেই দলিলের একদম শুরুতেই কালারফুল জায়গাটাতে *গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার* লেখা থাকবে। ঠিক মাঝ বরাবর। একদম পুরো পৃষ্ঠাজুড়ে যে মার্জিন থাকে সেই উপরের ভার্টিক্যাল মার্জিন বরাবর মাঝে লেখাটি থাকবে।
তার নিচে হাতের বামে করে যে বিষয়ের দলিলের জন্য যত টাকা স্ট্যাম্প লাগবে সে টাকার পরিমাণ লেখা থাকবে। মাঝে কয়েনের প্রথম পিঠের ধানের শীষ, শাপলা ফুল সম্বলিত লোগো আঁকা থাকবে। ডানেও ঠিক একইভাবে একই টাকার পরিমাণ লেখা থাকবে।
কালারফুল চার কোণা বক্সের নিচে লোগো সম্বলিত মুদ্রার নিচ বরাবর স্ট্যাম্পের টাকার সমমানের লিখতে হবে। পুরো কাজটাই থাকবে দলিলের প্রথম পৃষ্ঠার শুরুতেই মার্জিনের সর্ব প্রথমে। এরপরে দলিলের যাবতীয় সব কিছু লিখতে হবে। টাকার পরিমান পরিবর্তন ব্যতীত সকল স্ট্যাম্প লেখার নিয়ম এক রকম।
কোন দলিলে কত টাকার স্ট্যাম্প ব্যবহার করতে হবে
আমাদের দৈনন্দিন জীবনের জরুরি অনেক কাজেই দলিল করতে হয়। এ জন্য দলিলের গুরুত্ব এবং তাৎপর্য অনুযায়ী নির্ধারিত হয় দলিল সম্পর্কিত সব কিছু। সেই সঙ্গে দলিলের বিষয়ের ওপর নির্ভর করেও স্ট্যাম্পের মূল্যমান বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে।
স্ট্যাম্প আইন ১৮৯৯ এর তফসিলটি সর্বশেষ ২০১২-২০১৩ অর্থবছর পর্যন্ত সংশোধন করা হয়েছে এবং বর্তমানে কোন দলিলে কত টাকার স্ট্যাম্প ব্যবহার করতে হবে সেটি এই সংশোধনের ওপর ভিত্তি করেই নির্ধারণ করা হয়ে থাকে।
আর তাই পুরনো মূল্যের স্ট্যাম্প দিয়ে দলিল লেখা হলে তা বাতিল বলে গণ্য হবে ও কোনো রকম আইনগত ভিত্তি থাকবে না। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক কোন দলিলে কত টাকার স্ট্যাম্প ব্যবহার করতে হবে-
১. রাজউকের প্লট ও ট্যাক্সের দলিলের জন্য মোট মূল্যের ওপর ২ শতাংশ টাকার সমমানের স্ট্যাম্প।
২. ট্রাস্ট ডিড ক্যাপিটাল দলিলের মূল্যের ওপর ২ শতাংশ টাকার সমমানের স্ট্যাম্প।
৩. অছিয়তনামার কপির জন্য ৩০ টাকার স্ট্যাম্প।
৪. নকলের কবলা, বন্ড, বণ্টননামা, সার্টিফায়েড কপির দলিলের জন্য ৫০ টাকার স্ট্যাম্প।
৫. অনুলিপি, খাস-মোক্তারনামা দলিলের জন্য ১০০ টাকার স্ট্যাম্প।
৬. হলফনামা, বায়নার হলফনামা, হেবার ঘোষণাপত্র, না দাবি পত্র, বাতিলকরণ দলিলের জন্য ২০০ টাকার স্ট্যাম্প।
৭. চুক্তিনামা দলিল, অঙ্গীকারনামা, বায়নানামার দলিল, মেমোরেন্ডাম অব অ্যাগ্রিমেন্ট, রিডেম্পশন, সোলেনামা বা আপসনামার দলিলের জন্য ৩০০ টাকার স্ট্যাম্প।
৮. আমমোক্তারনামা দলিল ও সাফকবলা দলিলের জন্য ৪০০ টাকার স্ট্যাম্প।
৯. তালাকের হলফনামার দলিলের জন্য ৫০০ টাকার স্ট্যাম্প।
১০. অংশীদারি দলিলের জন্য ২ হাজার টাকার স্ট্যাম্প।
১১. মর্টগেজ বা বন্ধকের দলিল সম্পাদনের ক্ষেত্রে—
ক. ১ টাকা থেকে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত ২ হাজার টাকা;
খ. ২০ লাখ ১ টাকা থেকে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত ৫ হাজার টাকা।
গ. ১ কোটি ১ টাকার ওপরের ক্ষেত্রে ৫ হাজার টাকার ও প্রতি লাখের জন্য ২ শতাংশ হারে মোট টাকার মূল্যমানের স্ট্যাম্প লাগবে।
১২. শিক্ষানবিশ দলিলের ক্ষেত্রেও স্ট্যাম্পের টাকা এটাচড করতে হয়। সেক্ষেত্রে ১৫০ টাকার স্ট্যাম্প যুক্ত করতে হয়।
১২. ক্লার্ক শিপের আর্টিকেলসমুহের চুক্তিতে ৪০০ টাকার স্ট্যাম্প।
১৩. কোনো কোম্পানির আর্টিকেল অব অ্যাসোসিয়েশনের ক্ষেত্রে সর্ব নিম্ন দুই হাজার থেকে সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা মূল্যের স্ট্যাম্প।
১৪. রোয়েদাদের ক্ষেত্রে শতকরা হিসেবে স্ট্যাম্প।
১৫. বিল অব লেডিং এর জন্য ৫০, ১০০,৫০০ টাকার স্ট্যাম্প।
১৬. বটমরি বন্ডের ক্ষেত্রে পণ্যের শতকরা দুই শতাংশ সমমানের স্ট্যাম্প অ্যাডজাস্ট করতে হয়।
১৭. চার্টার পার্টির ক্ষেত্রে ৫০০ টাকার স্ট্যাম্প।
১৮. শুল্ক বন্ড বা কাস্টমস বন্ডের ক্ষেত্রে এক হাজার কিংবা দুই হাজার টাকার সমমানের স্ট্যাম্প।
১৯. রেস্পন্ডেশিয়া বন্ড দলিলের ক্ষেত্রে বটমরি বন্ডের সমমূল্যের টাকার স্ট্যাম্প।
২০. প্রতিবাদী বিল বা নোটের ক্ষেত্রে দুইশ’ টাকা মূল্যের স্ট্যাম্প।
২১. প্রক্সির ক্ষেত্রে বিশ টাকা সমমানের স্ট্যাম্প যুক্ত করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
২২. জাহাজ মাস্টারের প্রতিবাদী প্রজ্ঞাপনের জন্য ৩০০ টাকার স্ট্যাম্প যুক্ত করার কথা বলা হয়েছে। বলা হয়ে থাকে, এসব নিয়ে দ্বিমত পোষণ করলে তবে আলোচনা সাপেক্ষে একটা নির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায়।
২৩. যেসব সম্পত্তির মূল্য ৪০০ টাকার ঊর্ধ্বে সেসব সম্পত্তির ক্ষেত্রে রসিদের জন্য স্ট্যাম্প যুক্ত করতে হয় এবং তার মূল্য ১০ টাকা ধরা হয়ে থাকে।