মেয়ের সামনে মাকে ধর্ষণ, সেই এসআই বরখাস্ত

SHARE

অভিযুক্ত এসআই জাহাঙ্গীর আলম। ফাইল ফটো

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),খুলনা প্রতিনিধি,বৃহস্পতিবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২১ : খুলনায় মেয়ের সামনে মাকে ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তার মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) গোয়েন্দা শাখার এসআই মো. জাহাঙ্গীর আলমকে সাময়িক বরখাস্ত (সাসপেন্ড) করা হয়েছে। এদিকে এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্ত এসআইয়ের বিরুদ্ধে ধর্ষণের প্রাথমিক সত্যতা মিলেছে। ঘটনার সময় তিনি মাদকাসক্ত ছিলেন। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে।

এদিকে, ধর্ষণের শিকার নারীর ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া আদালত ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী তার মেয়ের জবানবন্দি রেকর্ড করেছেন।

খুলনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসান আল মামুন জানান, বৃহস্পতিবার তারা হোটেল সুন্দরবন পরিদর্শন এবং হোটেলের মালিক ও কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। এছাড়া ধর্ষণের শিকার নারীর সঙ্গেও কথা বলেছেন। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসআই জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে ধর্ষণের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে।

তিনি আরও জানান, প্রত্যক্ষদর্শী ঐ নারীর মেয়েকে আজ মহানগর হাকিম আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়। আদালত তার জবানবন্দি রেকর্ড করেছেন। এসআই জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে ধর্ষণের ঘটনা তদন্তে খালিশপুর জোনের সহকারী কমিশনার হুমায়ুন কবীরকে প্রধান করে এক সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়া এসআই জাহাঙ্গীরকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে।

ওসি আরও জানান, আদালতের অনুমতি নিয়ে এসআই জাহাঙ্গীরকে খুমেক হাসপাতালে নেওয়া হবে। সেখানে তার শরীরের বিভিন্ন আলামত ও ডিএনএ নেওয়া হবে।

তদন্ত কমিটির প্রধান ও সহকারী কমিশনার হুমায়ুন কবীর জানান, ইতোমধ্যে তদন্ত শুরু হয়েছে। দুয়েক দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে।

হোটেল সুন্দরবনের কর্মচারী গোলাম মোস্তফা জানান, মঙ্গলবার রাতে তাকে নিয়ে ভুক্তভোগী ওই মা-মেয়ের কক্ষে গিয়ে নক করেন জাহাঙ্গীর। দরজা খুলে দেওয়ার পর তাকে (গোলম মোস্তফা) মারধর করে সেখান থেকে তাড়িয়ে দেন। এরপর কক্ষের ভেতরে কী ঘটেছে তা তিনি দেখেননি। তবে ওই নারীর চিৎকারে হোটেলের লোকজন মেইন গেটে তালা লাগিয়ে দেয়।

হোটেলের পরিচালক মো. মিশারুল ইসলাম মনির বলেন, রাতে তিনি বাসায় ছিলেন। গভীর রাতে স্টাফদের কাছ থেকে এ ধরনের খবর পেয়ে দ্রুত হোটেলে এসে এসআই জাহাঙ্গীরকে আটকে রেখে পুলিশে খবর দেন।

খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারের (ওসিসি) সমন্বয়কারী ডা. অঞ্জন কুমার চক্রবর্তী জানান, ধর্ষণের শিকার নারীকে ওসিসিতে ভর্তির পর প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া তার শরীর ও পোশাক থেকে বিভিন্ন আলামত সংগ্রহসহ ডাক্তারি পরীক্ষা করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, বাগেরহাটের মোংলা উপজেলার ওই নারী তার অসুস্থ মেয়ে ও ভাগ্নেকে সঙ্গে নিয়ে মেয়েকে ডাক্তার দেখানোর জন্য গত মঙ্গলবার বিকেলে খুলনায় আসেন। কিন্তু রাত হয়ে যাওয়ায় ডাক্তারের সিরিয়াল না পেয়ে তারা বাধ্য হয়ে নগরীর শহীদ হাদিস পার্ক সংলগ্ন লেয়ার যশোর রোডস্থ সুন্দরবন আবাসিক হোটেলে ওঠেন। ওই নারী তার মেয়েকে নিয়ে হোটেলের তৃতীয় তলার ৩১৩নং রুমে এবং তার ভাগ্নে ছিল ৩০৮নং রুমে। রাত সোয়া ২টার দিকে ডিবির এসআই জাহাঙ্গীর আলম হোটেলের বয় গোলাম মোস্তফাকে সঙ্গে নিয়ে পুলিশ পরিচয়ে তাদের রুমের দরজা খুলতে বলেন। তখন তিনি দরজা খুলে দিলে ভিতরে প্রবেশ করে ওই নারীর কাছে জানতে চান সঙ্গে থাকা মেয়েটি তার কী হয়। এসময় তিনি তার মেয়ে পরিচয় দিলেও এসআই জাহাঙ্গীর তা মানতে চাননি। এক পর্যায় হোটেল বয়কে ধমক দিয়ে বাইরে বের করে দিয়ে ওই রুমের দরজা ভিতর থেকে বন্ধ করে দেন। দরজা বন্ধ করে দিয়ে ওই নারীকে মেয়ের সামনে ধর্ষণ করেন। এরপর হোটেলের কর্মচারীরা তাকে আটকে থানায় খবর দিলে পুলিশ গিয়ে তাকে থানায় নিয়ে আসে।

এ ঘটনায় বুধবার ভোর রাতে ওই নারী বাদী হয়ে খুলনা থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। এসআই জাহাঙ্গীর বর্তমানে খুলনা জেলা কারাগারে রয়েছেন।