ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),কুমিল্লা প্রতিনিধি,মঙ্গলবার, ২৩ নভেম্বর ২০২১ : কুমিল্লা শহরের পাথরিয়াপাড়ায় নিজ কার্যালয়ে নৃশংসভাবে খুন হয়েছেন সিটি করপোরেশনের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সৈয়দ মোহাম্মদ সোহেল (৫০) ও তার সহযোগী হরিপদ সাহা (৫৫)। গতকাল বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে প্রকাশ্য দিবালোকে মুখোশ পরা ১০-১২ জন দুর্বৃত্ত তার কার্যালয়ে ঢুকে বৃষ্টির মতো গুলি করে বীরদর্পে বেরিয়ে যায়। পরে স্থানীয় লোকজন গুরুতর অবস্থায় তাদের উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক কাউন্সিলর সোহেল ও হরিপদকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধি জুয়েল (৪০), আউয়াল হোসেন রিজু (২৫), রাসেল (২৮), মাজেদুল হক বাদল (২৫) ও সোহেল চৌধুরী চিকিৎসাধীন রয়েছেন বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের পরিচালক মো. মহিউদ্দিন।
নিহত মো. সোহেল কুমিল্লা মহানগরী আওয়ামী লীগের সদস্য ও ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি। তিনি কুসিকের প্যানেল মেয়রও। সোহেলের বাড়ি নগরীর সুজানগরে। বাবার নাম শাহজাহান মিয়া। ২০১২ ও ২০১৭ সালে তিনি কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। দ্বিতীয় মেয়াদে প্যানেল মেয়র হন। ছয় ভাই ও চার বোনের মধ্যে সোহেল দ্বিতীয়। তার স্ত্রী, এক ছেলে ও দুই মেয়ে আছেন। এ ছাড়া হরিপদ সাহা ওয়ার্ড শ্রমিক লীগের সভাপতি। তিনি নগরীর সাহাপাড়ার রমণী মোহন সাহার ছেলে।
ঘটনার পরপরই সরেজমিন নিহত কাউন্সিলর সোহেলের কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায় অগণিত মানুষের ভিড়। শত শত মানুষ পাথরিয়াপাড়া সড়কে বিক্ষোভ করছেন। র্যাব ও পুলিশ ক্ষুব্ধ জনতাকে সরানোর চেষ্টা করছে। শোকাবহ অনেকেই আহাজারি করছেন। কাউন্সিলর কার্যালয়ের ভিতরে সোহেলের বসার স্থানে রক্তের ছোপ ছোপ দাগ। কার্যালয়ের চেয়ার ভাঙা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে র্যাব-পুলিশ।
পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন জানান, বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে পাথরিয়াপাড়া থ্রি স্টার এন্টারপ্রাইজে কাউন্সিলর কার্যালয়ে বসা ছিলেন কাউন্সিলর মো. সোহেল। এ সময় কালো মুখোশধারী একদল দুর্বৃত্ত কার্যালয়ে ঢুকে তাকে লক্ষ্য করে বৃষ্টির মতো গুলি ছোড়ে। পিস্তলের দুটি গুলি তার মাথায়, দুটি বুকে, অন্য চারটি গুলি পেট ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে লাগে। সোহেল চেয়ার থেকে মেঝেতে পড়ে যান। তার সঙ্গে অন্তত আটজন গুলিবিদ্ধ হন। গুলির শব্দ শুনে স্থানীয়রা এসে তাদের কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে সোহেল ও তার সহযোগী হরিপদ মারা যান। হাসপাতালের এক সূত্র জানান, কাউন্সিলর সোহেলের শরীরে আটটি গুলি লাগে। তার মধ্যে মাথায় দুটি, বুকে দুটি ও বাকি চারটি লাগে শরীরের অন্য অংশে।
হামলায় আহত জুয়েল বলেন, ‘গুলির আওয়াজ শুনে রাস্তায় বের হয়ে দেখি সন্ত্রাসীরা এলোপাতাড়ি গুলি চালাচ্ছে। এ সময় আমার পায়ে গুলি লাগে। তারপর কী হয়েছে বলতে পারছি না।’ কাউন্সিলর সোহেলের ভাগনে মোহাম্মদ হানিফ বলেন, ‘সবাই আসরের নামাজ পড়ছিল। এ সময় গোলাগুলির আওয়াজ শোনা যায়। দৌড়ে গিয়ে দেখি মামা রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছেন। আমি নিজে মামাকে কাঁধে করে বের করি।’
জেলা পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ বলেন, ‘কাউন্সিলর সোহেল মারা গেছেন বলে শুনেছি। হাসপাতাল থেকে খবর নিন। আমরা অন্যান্য বিষয় সামাল দিচ্ছি।’ এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুমিল্লা মহানগরী আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আরফানুল হক রিফাত বলেন, ‘সোহেলের শরীরে অন্তত ১০টি গুলি করা হয়েছে। শনিবার তার সঙ্গে একটি সভা করে এসেছি। সোহেল তার এলাকায় অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিলেন। আমরা হত্যার বিচার চাই।’ স্থানীয় লোকজন বলছেন, হামলাকারীরা পাশের জগন্নাথপুর ইউনিয়নের হতে পারে। চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে একটি সন্ত্রাসী গ্রুপের সঙ্গে বিরোধ চলছিল কাউন্সিলর সোহেলের। গত সপ্তাহে ওই গ্রুপের শাহ আলম নামে একজন সোহেলের এলাকায় এসে ফাঁকা গুলি করে যান। গতকাল (সোমবার) তারা গুলি করে ভারত সীমান্তের দিকে চলে যান। পাথরিয়াপাড়া থেকে ভারতের সীমান্ত নিকটবর্তী।
কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান বলেন, ‘আমি কাউন্সিলর সোহেলের মৃত্যুর বিষয়টি জেনেছি। স্থানীয় এমপি মহোদয়, পুলিশ সুপার সাহেবের সঙ্গে কথা হয়েছে। সবাই পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছেন। আমরা অপরাধীদের শনাক্ত করে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’