পটুয়াখালীর শাওনের হোভারক্রাফট আবিষ্কার, চলবে তেলবিহীন

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),প্রযুক্তি ও গবেষণা প্রতিনিধি, সোমবার,২২ নভেম্বর ২০২১ : সী-প্লেনের আদলে তৈরি করা হয়েছে হোভারক্রাফট। যা নদীপথে চলবে জ্বালানী তেলবিহীন। সৌর বিদ্যুতের সহায়তায় ঘণ্টায় প্রায় ৪০ কিলোমিটার বেগে ছুটবে এটি। প্রায় নয় মাস অক্লান্ত পরিশ্রমের পর হোভারক্রাফটি তৈরি করেছেন ক্ষুদে বিজ্ঞানী মাহবুবুর রহমান শাওন। তার নতুন এ আবিষ্কারে চমক লেগেছে এলাকাজুড়ে। শাওনের দাবি সরকারি সহায়তা পেলে বাণিজ্যিকভাবে হোভারক্রাফট বাজারজাত করে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিতে পারবেন তিনি।

পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার মহিপুর ইউনিয়নের মোয়াজ্জেমপুর গ্রামের মাদ্রাসা শিক্ষক নাসির উদ্দিনের ছেলে শাওন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ প্ল্যানেটর কলেজের রোবোটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। ছোটবেলা থেকেই একের পর এক প্রযুক্তি আবিষ্কার করছেন।

২০১৮ সালে জ্বালানি ও চালকবিহীন গাড়ি ও বাতাসের সাহায্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনসহ বেশ কিছু প্রযুক্তি আবিষ্কার করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। ২০১৯ সালে হোভারক্রাফট আবিষ্কারের চিন্তা মাথায় আসে। পরে তার বাবার সহায়তায় সী-প্লেনের আদলে হোভারক্রাফট আবিষ্কারে সফল হন।

জানা যায়, সম্পূর্ণ ফাইভার ও এ্যালোমিনিয়াম দিয়ে তৈরি করা হয়েছে এর অবকাঠামো। যা জ্বালানী তেলবিহীন সম্পূর্ণ সোলার সিস্টেমে তিনজন যাত্রী নিয়ে নদীপথে চলতে পারবে। এছাড়াও হোভারক্রাফটিতে ব্যবহার করা হয়েছে আধুনিক সব প্রযুক্তি।

শাওন জানান, হোভারক্রাফট তৈরিতে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৪ লাখ টাকা। ওই এলাকায় হাইভোল্টেজ ব্যাটারি না থাকায় বর্তমানে এটি ইঞ্জিনের মাধ্যমে চলছে। বর্তমানে হোভারক্রাফটটি কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে পর্যটকদের বিনোদনের জন্য ব্যবহার করতে চান তিনি।

মোয়াজ্জেমপুর গ্রামের বাসিন্দা মানিক মিয়া জানান, হোভারক্রাফটি শাওন আমাদের চালিয়ে দেখিয়েছে। আমরা একসঙ্গে চারজন এটিতে উঠেছি। নদীপথে চলতে বেশ ভালো লেগেছে।

অপর বাসিন্দা রহিম মিয়া জানান, শাওন একটার পর একটা নতুন প্রযুক্তি আবিষ্কার করেই চলছে। এই ক্ষুদে বিজ্ঞানী আমাদের এলাকার গর্ব। আমরা চাই তার তৈরি হোভারক্রাফট সরকারি সহায়তার মাধ্যমে সারা বিশ্বে পৌঁছে যাক।

শাওনের পিতা নাসির উদ্দিন জানান, ছোটবেলা থেকেই শাওনের খেলার সঙ্গী ছিল ইলেকট্রিক যন্ত্রপাতি। চতুর্থ শ্রেণিতে পড়াকালীন সময়ে সে বাতাসের সাহায্যে বিদ্যুৎ তৈরি করেছিল এবং সেই বিদ্যুৎ দিয়ে আমরা মোবাইল চার্জ দিয়েছি। সপ্তম শ্রেণিতে পড়াকালীন সে সিকিউরিটি এ্যালার্ম তৈরি করে। যার মাধ্যমে চোর ধরতে সক্ষম হই। এছাড়া জ্বালানী ও চালকবিহীন গাড়ী তৈরি, এবার সে হোভারক্রাফট তৈরি করেছে।

তিনি আরও বলেন, এসব প্রযুক্তি উদ্ভাবনে সব সময় শাওনকে উৎসাহ যুগিয়েছি এবং জমি বিক্রি করে হলেও তাকে সাহায্য করেছি।

সরকারি মোজাহার উদ্দিন বিশ্বাস কলেজের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক ইউসুফ আলী জানান, শাওনের আবিষ্কারগুলো সত্যিই প্রশংসনীয়। তাকে উচ্চতর প্রশিক্ষণ দিলে সে আরও ভালো কিছু করতে পারবে।

ক্ষুদে বিজ্ঞানী শাওন জানান, দীর্ঘ নয় মাস দিন-রাত কঠোর পরিশ্রমের পর হোভারক্রাফট তৈরি করতে সক্ষম হয়েছি। আমার বাবা আমাকে উৎসাহ যুগিয়েছে। এটার এখন লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি দরকার। যেটা পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে আমদানি করতে হবে এবং ইতিমধ্যে অর্ডার করা হয়েছে। বর্তমানে হোভারক্রাফটি কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে পর্যটকদের বিনোদনে ব্যবহার করতে চাই। তবে সরকারি সহায়তা পেলে এটি বানিজ্যকভাবে তৈরি করা সম্ভব।

কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হক জানান,  ক্ষুদে বিজ্ঞানী শাওন এর আগেও বেশ কিছু প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন। তার সকল উদ্ভাবন প্রশংসনীয়। তাকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সকল ধরনের সহায়তা করা হবে।