গুটিয়ে নেওয়ার খবরে আলেশা মার্ট অফিসের সামনে বাড়ছে ভিড়

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),ঢাকা প্রতিনিধি,বৃহস্পতিবার, ১৮ নভেম্বর ২০২১ : ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আলেশা মার্টের তল্পিতল্পা গুটিয়ে নেওয়ার খবরে রাজধানীর বনানীর প্রধান কার্যালয় এবং করপোরেট অফিসে ভিড় করছেন গ্রাহকরা। কেউ কেউ আসছেন পণ্য ডেলিভারি নিতে, কেউ ভিড় করছেন জমা দেওয়া অগ্রিম টাকা ফেরত নিতে। পণ্য ডেলিভারি কিংবা টাকা ফেরত না পেয়ে গতকাল বুধবার (১৭ নভেম্বর) অনেক গ্রাহক ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন।এক পর্যায়ে গ্রাহকরা উত্তেজিত হয়ে প্রধান কার্যালয়ের ভেতর ঢুকে কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিতণ্ডা ও হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন। দ্রুত সময়ের মধ্যে টাকা ফেরত না দিলে আলেশা মার্টের কার্যালয়ে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটানোর হুমকি দিয়ে ক্ষুব্ধ গ্রাহকরা বেরিয়ে যান।

আলেশা মার্ট অবিশ্বাস্য সব অফার দিয়ে দেশের মানুষের কাছে আলোচনায় আসে। তাদের ফাঁদে পা দিয়ে গ্রাহকরা আলেশা মার্টে বিপুল পরিমাণ টাকা বিনিয়োগ করেন। বর্তমানে গ্রাহকরা তাদের কাছ থেকে বিনিয়োগের টাকা কিংবা পণ্য পাচ্ছেন না। গ্রাহকদের দেওয়া চেকও ফেরত আসছে ব্যাংক থেকে। ফলে বাড়ছে বিনিয়োগকারীদের দুশ্চিন্তা।গতকাল দুপুরে বনানীর কামাল আতাতুর্ক সড়কের পোস্ট অফিসের পাশের তৃতীয় তলায় আলেশা মার্টের করপোরেট অফিসে গিয়ে দেখা যায়, শুধু সাধারণ গ্রাহকই নন, ওই অফিসে পণ্য ও টাকা ফেরত পেতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্য এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিজ্ঞাপনের টাকার জন্য বিজ্ঞাপনকর্মীরাও ভিড় করছেন। গ্রাহকদের কেউ অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন, কেউ সোফায় বসে আছেন। সবার মধ্যে উদ্বেগ ও উত্কণ্ঠা।গ্রাহকরা টাকা হারানোর ভয়ে থানায় মামলা করতে চাচ্ছেন না। তাঁরা মনে করছেন, থানায় মামলা করলে আলেশা মার্টের মালিক ও কর্মকর্তাদের ধরে নিয়ে যাবে পুলিশ। এতে তাঁরা আর পণ্য পাবেন না।রংপুরের ইকবাল, কামরুল ও মামুন—তিনজনই ঠিকাদার। এ বছরের জানুয়ারির শেষের দিকে তিন বন্ধু মিলে আলেশা মার্টে দেড় কোটি টাকার মোটরসাইকেল অর্ডার করেন। ছয় মাস পর ২০ লাখ টাকার কয়েকটি মোটরসাইকেল ডেলিভারি দেয় আলেশা মার্ট। আর পণ্য পাবেন না, এই ধারণা থেকে তাঁরা আলেশা মার্টে টাকা ফেরত পাওয়ার আবেদন করেছেন। গত ১১ নভেম্বর আলেশা মার্ট কর্তৃপক্ষ আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি তারিখ উল্লেখ করে প্রায় ৯০ লাখ টাকার তিনটি চেক দিয়েছে। চেকটি ইসলামী ব্যাংক বনানী শাখার হলেও সেটিতে আলেশা মার্টের নাম লেখা নেই। সেখানে লেখা আলেশা অ্যাগ্রো। গত মঙ্গলবার আলেশা মার্ট বন্ধের খবর পেয়ে ঢাকায় অবস্থানরত তাঁদের বড় ভাই ডা. বুলবুলকে করপোরেট অফিসে পাঠান।

ডা. বুলবুল বলেন, ‘যেহেতু অনেক টাকা বিনিয়োগ করা আছে, তাই অফিসে এসেছি খোঁজ নিতে।

এদিকে বরিশালের খাইরুল বাশার নামের অনার্সপড়ুয়া এক শিক্ষার্থী গত ৬ জুলাই আলেশা মার্টে মোটরসাইকেল কেনার জন্য তিন লাখ ৩১ হাজার টাকা জমা দেন। তিন মাসেও মোটরসাইকেল না পেয়ে তিনি সেপ্টেম্বরে টাকা ফেরতের আবেদন করলে ৫ অক্টোবর তারিখ উল্লেখ করে একটি চেক দেওয়া হয়। ওই তারিখে চেক নিয়ে গেলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানায়, হিসাবে টাকা নেই। পরে তিনি যোগাযোগ করলে অফিস কর্তৃপক্ষ তাঁকে বলে, আলেশা মার্টের একটি মোটা অঙ্কের পেমেন্ট গেটওয়ে পরিষেবায় আটকে আছে। পণ্য ডেলিভারি নিশ্চিত করার পরও পেমেন্ট গেটওয়েগুলো টাকা ছাড়ছে না। এ কারণে অনেক গ্রাহককে টাকা ফেরত দেওয়া যাচ্ছে না।খাইরুল বাশার বলেন, ‘আলেশা মার্ট আগের ক্যাম্পেইনগুলোতে পণ্য অর্ডার করার পর নির্দিষ্ট সময়ের আগেই পণ্য ডেলিভারি দিয়েছিল। এখন তারা টালবাহানা করছে।’আলেশা মার্টে বিনিয়োগ করে সাধারণ গ্রাহকদের সঙ্গে হতাশ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই পুলিশ সদস্য বলেন, কী বলব, বলতেও লজ্জা করছে। লোভনীয় অফারের ফাঁদে পড়ে একটি মোটরসাইকেলের জন্য লাখ টাকার মতো বিনিয়োগ করেছিলাম। তিন মাসেও ডেলিভারি পেলাম না। শুনলাম অফিস বন্ধ হয়ে যাবে, তাই খোঁজ নিতে এলাম।বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত হিরন নামের এক গ্রাহক অভিযোগ করে বলেন, ‘অর্ডার করার পাঁচ মাসেও পণ্য ডেলিভারি দেয়নি। পরে টাকা ফেরতের কথা বলে একটি চেক দেওয়া হয়। নির্দিষ্ট সময়ে ব্যাংকে গেলে চেকটি ডিস-অনার হয়। পরে অফিসে বিষয়টি জানানো হলে আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের একটি তারিখ দিয়ে আবার নতুন চেক দেওয়া হয়।’২০২১ সালের ১ জানুয়ারি অনলাইনে পণ্য বিক্রির কার্যক্রম শুরু করে আলেশা মার্ট। পণ্য দেওয়ার নাম করে তারা সংগ্রহ করেছে গ্রাহকের কোটি কোটি টাকা। পরে অনেক গ্রাহককে পণ্য বুঝিয়ে দেয়নি বলে অভিযোগ ওঠে। ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে আলেশা মার্টে ক্যাশ অন ডেলিভারি (সিওডি) বা পণ্য হাতে পাওয়ার পর পেমেন্ট পদ্ধতি নেই। ফলে সেখানে পণ্য কিনতে হলে অবশ্যই আগে থেকে অনলাইনে পেমেন্ট দিতে হবে। পেমেন্টের কয়েক মাস পর পণ্যের ব্যাপারে গ্রাহকদের আশ্বাস দেওয়া হয়। আলেশা মার্টের লেনদেনে অস্বচ্ছতা থাকার কারণে গত ১৭ জুলাই ওই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বিকাশ কর্তৃপক্ষ লেনদেন বন্ধ করে দেয়। আলেশা মার্টের কার্যালয়ে ঢুকে কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলার জন্য চেষ্টা করা হলেও কেউ মুখ খুলতে রাজি হননি।