ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),ঢাকা প্রতিনিধি,বৃহস্পতিবার, ১৮ নভেম্বর ২০২১ : ছোট বা মাঝারি মানের জঙ্গি জেল থেকে বেরিয়ে হয়ে উঠছে দুর্ধর্ষ। কারাগারেই মিলছে জঙ্গিদের কাছ থেকে ভয়ংকর দীক্ষা, পদ-পদবি। বিষয়টিতে উদ্বেগ জানিয়ে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট বলছে, মনিটরিংয়ের অভাবেই এমনটি হচ্ছে। জঙ্গিদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরাতে এবার কারাগারে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে বিশেষজ্ঞদের।
২০১৮ সালে ফেসবুকে উগ্রবাদী পোস্ট দেওয়ায় গ্রেপ্তার হন আব্দুল্লাহ আল নোমান ওরফে বাছির। কারাগারের জঙ্গি সেলে জায়গা হয় তার। একবছর তিন মাস পর বাছির যখন জামিনে মুক্ত হয় তখন সে নব্য জেএমবির সামরিক শাখার কমান্ডার হয়ে বের হয়।
জঙ্গিবাদে দীক্ষা নিয়ে কারাগার থেকে বেরিয়ে ২০২০ সালের ২৪ জুলাই রাজধানীর পল্টনে পুলিশ চেকপোস্টে বোমা হামলা করে বাছির। সম্প্রতি তাকে আবারও গ্রেপ্তার করেছে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট।
পুলিশের এ ইউনিটটি বলছে, ছোট বা মাঝারি জঙ্গিরা কারাগারে ঢুকে দেখা পাচ্ছে বড় জঙ্গিদের। নিয়মিত যোগাযোগের মাধ্যমে জঙ্গিবাদের দীক্ষা মিলছে জেলেই।
ডিএমপির সিটিটিসির অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, গ্রেপ্তার করার পরে তারা জেলখানায় থাকে, পুনরায় আবার জামিন পায়। এ পুরো প্রক্রিয়ার মধ্যে আমাদের আর কোনো মনিটরিং থাকে না। জিজ্ঞাসাবাদের উঠে এসেছে জেলখানায় থাকাকালে তাদের সহযোগীদের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল। জেলখানায় গিয়েও তারা নতুন একটা সঙ্গ পায় এবং ওখানে যে সব জঙ্গি আছে তাদের সঙ্গে পুনরায় আলোচনা চলে। আমরা যদি একটা বিশ্লেষণ করি তাহলে দেখব যে মধ্যম মানের জঙ্গি পুনরায় দুর্ধর্ষ হয়ে উঠছে জেলে যাওয়ার পরই।
ধর্মের জঙ্গিবাদী ব্যাখ্যা মোকাবিলা করতে এবার কারাগারে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে ইসলামিক চিন্তাবিদ। জঙ্গিদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরাতে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে মনোবিজ্ঞানী, সমাজবিজ্ঞানীও।
প্রকল্প বাস্তবায়নে এরইমধ্যে চিঠি দেওয়া হয়েছে কারা কর্তৃপক্ষকে। সরকারের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরাও।
সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ তৌহিদুল হক বলেন, যে গ্রেপ্তার হয়েছে সে হয়তো ছোটখাট হামলা করেছে, হয়তোবা বিভিন্ন হামলায় অংশগ্রহণ করেছে। কিন্তু কারাগারে গিয়ে সে আরও বড় অপরাধীর সঙ্গে পরিচয় হলো, তখন সে বড় অপরাধীর সংস্পর্শে গিয়ে শীর্ষ অপরাধী হয়। সেখানে তাদের কাছ থেকে হামলা করার কৌশল শেখে। এরপর যখন সে বের হয়ে আসল, বের হয়ে আসার পর এ ধরনের অপরাধে অন্যান্য দেশগুলোতে যারা আছে, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তখন সে ধ্বংসমূলকভাবে সমাজ, রাষ্ট্রের জন্য বিরোধী অবস্থানপূর্ণ একটি অবস্থায় চলে যায়। অন্যান্য দেশে এ সব অপরাধীকে দীর্ঘ সময় মনিটরিংয়ে রাখতে হয়। জামিনে হোক বা মুক্ত হওয়ার পরও। কিন্তু আমাদের এ দেশে এ কার্যক্রমের যথেষ্ট ঘাটতি আছে। জঙ্গিদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরাতে কারাগারে বিশেষজ্ঞ নিয়োগ সাধুবাদ জানান তিনি।
সরকারের সন্ত্রাস দমন ও আন্তর্জাতিক অপরাধ প্রতিরোধ নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় আওতায় রয়েছে কারামুক্ত জঙ্গিদের পুর্নবাসন কার্যক্রমও। ৮টি পরিবারকে এরই মধ্যে পুর্নবাসনও করা হয়েছে।