ভাসমান মসজিদে নামাজ পড়ছেন মুসল্লিরা

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),আশাশুনি (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি, বুধবার, ০৬ অক্টোবর ২০২১ : সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের হাওলাদার বাড়ি বায়তুন নাজাদ জামে মসজিদটি নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার উপক্রম হয়েছে। দুর্ঘটনা এড়াতে নৌকার উপর ভাসমান মসজিদ তৈরি করে নামাজ আদায় করছেন মুসুল্লিরা।

মঙ্গলবার (৫ অক্টোবর) দুপুরে জোহর নামাজের মধ্য দিয়ে ওই ভাসমান মসজিদটির উদ্বোধন করা হয়।

এলাকাবাসী জানান, এ ভোগান্তি চলছে টানা দুই মাস। তবে সেখানকার মুসল্লিদের নামাজের জন্য নৌকার উপর বিশেষভাবে তৈরি একটি ভাসমান মসজিদ করে দিয়েছে আলহাজ শামসুল হক ফাউন্ডেশন।

হাওলাদার বাড়ি বায়তুন নাজাদ জামে মসজিদের ঈমাম ও খতিব হাফেজ মঈনুর রহমান জানান, প্রাকৃতিক দুর্যোগ আম্ফান ও ইয়াসের সময় খোলপেটুয়া নদীর বন্যতলা এলাকার বাঁধ ভেঙে যায়। নদী ভাঙনটি ধীরে ধীরে লোকালয়ের দিকে ধেয়ে আসতে শুরু করে। গত ১০ আগস্ট থেকে নদীর পানি মসজিদে প্রবেশ করে। রাস্তাটিও ধসে যায়। এরপর থেকে মসজিদে নামাজ আদায় ও আজান দেওয়ার জন্য সাঁতরে যেতে হতো। তবে সম্প্রতি ঘটনাটি বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশের পর আজান দেওয়ার জন্য একটি নৌকা কিনে দেন একজন হৃদয়বান ব্যক্তি।

তিনি জানান, মঙ্গলবার এলাকার মুসল্লিদের কথা চিন্তা করে আলহাজ শামসুল হক ফাউন্ডেশন নৌকার উপর বিশেষভাবে নির্মিত একটি ভাসমান মসজিদ উপহার হিসেবে দিয়েছে। ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে চেয়ারম্যান প্রকৌশলী নাসিরউদ্দীন এটি তুলে দেন। দুপুরে জোহরের নামাজের মধ্য দিয়ে মসজিদ উদ্বোধন করা হয়।

হাফেজ মঈনুর রহমান আরও বলেন, ভাসমান এ মসজিদটিতে একসঙ্গে ৫০-৫৫ জন নামাজ আদায় করতে পারবেন। নামাজ আদায়ের জন্য অনেক উপকার হয়েছে। মূল মসজিদটি যে কোনো মুহূর্তে নদীগর্ভে চলে যাবে। এখন থেকে আজান দেওয়া ও নামাজ আদায় ভাসমান মসজিদেই করব। এলাকার ৩০০-৪০০ পরিবার এ মসজিদে নামাজ আদায় করতেন। জুম্মার দিন এত মানুষের জায়গা এখানে হবে না। জুম্মার দিনে পার্শ্ববর্তী কোনো মসজিদে নামাজ আদায় করতে হবে। 

ভাসমান মসজিদটির দৈর্ঘ্য ৫০ ফুট, প্রস্থ ১৬ ফুট। রয়েছে আজান দেওয়ার জন্য একটি মাইক সেট, ওজুখানা, পানি ব্যবহারের জন্য চারটি ট্যাব ও একটি টয়লেট। মুসল্লিদের মসজিদে এসে তেলাওয়াত করার জন্য চারটি কোরআন শরীফ।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গত দুই বছর ধরে বিভিন্ন সময় এই অঞ্চলের মানুষ পানির নিচে তলিয়ে থাকে। এলাকার মসজিদগুলোতে নামাজের সময় পানি উঠে যায়। এই পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে এই ভাসমান মসজিদটিতে মুসল্লিরা নামাজ আদায় করতে পারবেন।

মসজিদ কমিটির সভাপতি মৌলভী ইবাদুল সানা জানান, গত দুই মাস ধরে আমরা নামাজ আদায় করতে পারছি না। ভাসমান মসজিদটি পেয়ে অনেক উপকার হয়েছে। যারা দিয়েছেন তাদের জন্য আমরা দোয়া করব।

আলহাজ শামসুল হক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী নাসিরউদ্দীন জানান, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিওতে দেখেছি মসজিদের ঈমাম সাহেব সাঁতরে মসজিদে গিয়ে আজান দিচ্ছেন। সেটি দেখার পর আমরা মর্মাহত হয়েছি ও এই প্রত্যন্ত অঞ্চলে এসেছি।

তিনি বলেন, এখানকার মানুষের নামাজের প্রতি অনেক আগ্রহ রয়েছে। সে কারণে নৌকার উপর বিশেষভাবে নির্মিত অস্থায়ী একটি ভাসমান মসজিদ তৈরি করে দিয়েছি। এখন থেকে পানিতে নিমজ্জিত মসজিদের মুসল্লিরা এইখানে নামাজ আদায় করতে পারবেন। ওই মসজিদের দায়িত্বপ্রাপ্ত কমিটি এই ভাসমান মসজিদের দায়িত্বপালন করবেন।