ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),শিক্ষা প্রতিনিধি,রোববার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২১ : রোববার (১২ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টা। ঢং ঢং করে বেজে উঠলো কাঙ্ক্ষিত ঘণ্টা। আর এর মধ্যদিয়েই দীর্ঘ ১৮ মাস পর শুরু হলো প্রথম দিনের। স্কুলে প্রবেশ করেই আনন্দ-উচ্ছ্বাসে আত্মহারা হয়ে পড়ে শিক্ষার্থীরা। এ স্কুলের মত একইভাবে খুলনা মহানগর ও জেলার দেড় হাজারেরও বেশি স্কুল মুখরিত হয়ে ওঠে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের পদচারণায়।
এদিকে, শিক্ষার্থীদের বরণ করতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিটি শ্রেণিকক্ষ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আঙিনা সাজানো হয় রঙিন কাগজ, জরির মালা, বিভিন্ন রঙের বেলুন ও কাগজের ফুল দিয়ে। আজ অনেকটা আনন্দে আপ্লুত শিক্ষার্থীরা। যে কারণে অনেকেই আগেভাগে চলে আসে স্কুলে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বাগমারা আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিশু শ্রেণি থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত মোট ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ৩৮৪ জন। তার মধ্যে স্কুল খোলার প্রথম দিনে দু’টি ক্লাসে উপস্থিত ছিল ৯২ জন। তার মধ্যে তৃতীয় শ্রেণিতে ৫০ জন এবং ৫ম শ্রেণিতে ৪২ জন। স্কুলে মোট ১১ জন শিক্ষিকা এবং একজন দপ্তরি। তার সকলেই উপস্থিতি ছিলেন।
স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা তহমিনা আক্তার বলেন, ‘স্কুলের সকল শিক্ষিকা একত্রিত হয়ে ১১ তারিখ স্কুল খোলার কাজে পরিষ্কার-পরিছন্নতার জন্য নিয়জিত ছিলাম। স্কুল খোলার শুরুতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ক্ষেত্রে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য মাস্ক পরিধান করানো হয়েছে।’
নগরীর সেন্ট জোসেফস উচ্চ বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী বিজয় রায় বলে, ‘স্কুল ১০টায় শুরু হলেও অনেক দিন পর স্কুল খোলায় ৭টার সময় চলে এসেছি। স্কুল খুব সুন্দর করে সাজিয়েছে। দেখে ভীষণ ভালো লাগছে।’
একই স্কুলের ১০ম শ্রেণির দীপ্ত সরকার বলেন, ‘অনেক দিন পর সহপাঠীদের সঙ্গে দেখা হয়েছে। করোনার কারণে ঘর বন্দি থাকতে থাকতে অস্থির হয়ে উঠেছিলাম। এখন স্কুল খুলেছে আবার আগের মতো আমরা স্কুলে এসে ক্লাস করতে পারবো। এর চেয়ে আনন্দের আর কি হতে পারে।’
সরকারি করোনেশন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণির ছাত্রী রাজিয়া সুলতানার মা বলেন, ‘এতো দিন বন্দি জীবন ছিল আমার মেয়ের। এতে সে অনেক মানসিক চাপে থাকতো। এখন ক্লাসে এসে সহপাঠীদের সঙ্গে দেখা হওয়ায় স্বাভাবিক জীবন ফিরে পাবে। এতে স্বস্তির নিশ্বাস নিতে পারছি আমরা।’
সরকারি করোনেশন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা মোছা. মাকামী মাকছুদা জানান, গেট থেকেই তাপমাত্রা মেপে এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজার মাখিয়ে শিক্ষার্থীদের স্কুলে প্রবেশ করানো হয়েছে। এছাড়া মাস্ক পড়া ছিল বাধ্যতামূলক। তবে, কেউ মাস্ক না আনলে স্কুলের পক্ষ থেকে তাদের মাস্ক দেওয়া হয়। এছাড়া শিক্ষার্থীদের রজনিগন্ধা ফুলের স্টিক এবং চকলেট দিয়ে বরণ করা হয়।
সালাহ উদ্দিন ইউসুফ সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ঠাকুরদাস তরফদার জানান, শিক্ষার্থীদের বরণের জন্য সকাল ৭টায় স্কুলে এসে বসে আছি। যদিও ক্লাস শুরু সকাল ১০টায়। করোনার কারণে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ থাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি শেষে আজ থেকে চালু হয়েছে সশরীরে ক্লাস। এতে শিক্ষার্থীসহ অভিভাবকরা অনেক খুশি।
হাজী শরীয়াত উল্লাহ বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক শেখ জাহিদুজ্জামান জানান, স্বাস্থ্যবিধি মেনে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করানো হয়েছে। প্রথম দিনেই ৯০ ভাগ শিক্ষার্থী উপস্থিত হয়েছেন। দীর্ঘ দিন বন্ধ থাকার পর স্কুল খোলায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সঙ্গে আমরাও অনেক আনন্দিত।
খুলনা সরকারি মহিলা কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক বিকাশ রায় জানান, শিক্ষা নিকেতনের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সম্পর্ক অতি প্রাচীন এবং অত্যাবশকীয়। সংক্রামক ব্যধির আগ্রাসন সে সম্পর্ক ভেঙে গৃহবন্দি করেছিল শিক্ষার্থীরা। আজ সে বন্দিদশা ছেড়ে আবার শিক্ষায়তনে ফিরেছে শিক্ষার্থীরা। এটা আসলে কতটা আনন্দের তা ভাষায় ব্যক্ত করে বোঝানো যাবে না।
মাদ্রাসাতুল ইত্তিহাদের প্রিন্সিপাল জহির আমিন জানান, অনেকদিন পর বাচ্চাকাচ্চাদের কোলাহলে মুখরিত হয়ে গেলে মাদ্রাসা আঙ্গিনা। দীর্ঘ দিন পর ঘণ্টাধ্বনির শব্দ পেল শিক্ষার্থীরা। তাদের পদচারণায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে।
খুলনা জেলা শিক্ষা অফিসার খন্দকার রুহুল আমীন জানান, শিক্ষামন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মেনে খুলনা জেলার সকল সরকারি বেসরকারি স্কুল,কলেজ ও মাদরাসা আজ খুলেছে। এর মধ্যে ৪২০টি স্কুল, ১২৫টি মাদ্রাসা ও ৭৩টি কলেজ রয়েছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের সূত্রে জানা যায়, খুলনা জেলায় ১ হাজার ১৫৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ৪২০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে মহানগরে ১৫৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ১শটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়। বাকিগুলো জেলার ৯টি উপজেলায় অবস্থিত।