ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),বরিশাল প্রতিনিধি,সোমবার,২৩ আগস্ট ২০২১ : বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুনিবুর রহমানের সরকারি বাসভবনে হামলা ও সংঘর্ষ পরবর্তী ঘটনায় বিভাগীয় কমিশনারের আহ্বানে সিটি মেয়রের উপস্থিতিতে সমঝোতা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। রোববার (২২ আগস্ট) রাত ৯টা থেকে রাত পৌনে ১১টা পর্যন্ত ওই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠক শেষে মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি এ কে এম জাহাঙ্গীর বলেন, বৈঠকে সাম্প্রতিক বিষয় নিয়েই আলোচনা হয়েছে। পুরো বিষয়টি ইতিবাচক ছিল। আমি আশা করছি উদ্ভুত সমস্যার দ্রুত সমাধান হবে।
তিনি বলেন, আলোচনায় উভয়পক্ষের মামলা প্রত্যাহারের বিষয়েও সমঝোতা হয়েছে।
তবে কোন শর্তে সমঝোতা হয়েছে, সে বিষয়ে কিছু জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন এ কে এম জাহাঙ্গীর।
বৈঠকে উপস্থিত আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতা জানান, বিভাগীয় কমিশনার মো. সাইফুল হাসান বাদল তাদেরকে চায়ের দাওয়াত দিয়েছিলেন। সেই দাওয়াতেই মূলত সমঝোতা বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়েছে। পরে রাতের খাবার খেয়ে তারা ফিরেছেন।
বৈঠকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভাগীয় কমিশনার মো. সাইফুল হাসান বাদল, রেঞ্জ ডিআইজি এস এম আকতারুজ্জামান, বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. শাহাবুদ্দিন খান, জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার, পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন এবং র্যাব-৮ এর অধিনায়ক ডিআইজি জামিল হাসান।
অপরদিকে, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম জাহাঙ্গীর ছাড়াও রাজনীতিবিদদের পক্ষে ছিলেন বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ, মহানগর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুস এবং প্যানেল মেয়র গাজী নঈমুল হোসেন লিটু।
প্রসঙ্গত, গত বুধবার (১৮ আগস্ট) রাতে বরিশাল সদর উপজেলা পরিষদ চত্বরে অবৈধ বিলবোর্ড, ব্যানার, ফেস্টুন উচ্ছেদ করতে অভিযান চালান বরিশাল সিটি করপোরেশনের কর্মীরা। কিন্তু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাদের অভিযান বন্ধ করে সকালে অভিযানে চালাতে বলেন। কিন্তু সেটি না মেনে ইউএনওর সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন সিটি কপোরেশন কর্মী এবং আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। একপর্যায়ে তারা ইউএনওর বাসভবনে হামলা চালান। এ সময় ইউএনওর নিরাপত্তায় আনসার সদস্যরা গুলি চালালে বেশ কয়েকজন আহত হন। খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে গেলে পুলিশের সঙ্গেও হামলাকারীদের সংঘর্ষ হয়। এতে বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্যও আহত হন।
এই ঘটনায় পরদিন বৃহস্পতিবার দুপুরে বাসভবনে হামলার অভিযোগে সিটি করপোরেশনের কর্মচারী, আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের আসামি করে ইউএনও ও পুলিশ বাদী হয়ে দুটি মামলা করে। সেই দুটি মামলাতেই বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহকে প্রধান আসামি করা হয়। একই ঘটনায় সিটি করপোরেশন ও আওয়ামী লীগের নেতারাও থানায় মামলা করতে গিয়েছিলেন, কিন্তু থানা থেকে তাদের মামলা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করা হয়।
পরে বরিশালের অতিরিক্ত মহানগর হাকিম মাসুম বিল্লাহর আদালতে বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুনিবুর রহমান ও কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি নুরুল ইসলামসহ আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে দুটি মামলার আবেদন করে সিটি করপোরেশন। আদালত অভিযোগ দুটি আমলে নিয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্ত করে আগামী ২৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। মামলা দুটির মধ্যে একটির আবেদন করেছেন বরিশাল সিটি করপোরেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা বাবুল হালদার এবং অন্যটি সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র ও জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম খোকন। দুটি মামলায়ই ইউএনওকে প্রধান আসামি করা হয়েছে।