ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),ঢাকা প্রতিনিধি,শনিবার,২১ আগস্ট ২০২১ : ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে গ্রেনেড হামলা মামলার দণ্ডিত ১৮ আসামি এখনো ধরা পড়েনি।
তবে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ কয়েকজনের বিদেশে অবস্থান নিশ্চিত হয়ে ইন্টারপোলে রেড নোটিশ জারি অব্যাহত রেখেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় মামলা থেকে জামায়াতের সাবেক নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, জঙ্গি নেতা মুফতি আব্দুল হান্নানসহ তিন আসামিকে বাদ দেওয়া হয়।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে বিচার শেষে মামলায় মোট ৪৯ জনকে আসামি করা হয়। এর মধ্যে ১৯ জনকে যাবজ্জীবন ও ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও বিএনপি নেতা আবদুস সালাম পিন্টুসহ ৩১ জন কারাগারে আটক আছেন। দণ্ডের বিরুদ্ধে তারা উচ্চ আদালতে আপিল করেছেন।
পলাতক আসামিদের মধ্যে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডনে, বিএনপি নেতা শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন কায়কোবাদ ব্যাংককে, হানিফ এন্টারপ্রাইজের মালিক হানিফ কলকাতায়, মেজর জেনারেল (অব.) এটিএম আমিন যুক্তরাষ্ট্রে লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম জোয়ারদার কানাডায়, বাবু ওরফে রাতুল বাবু ভারতে, মাওলানা তাজুল ইসলাম দক্ষিণ আফ্রিকায় অবস্থান করছে।
এছাড়া জঙ্গি নেতা শফিকুর রহমান, মুফতি আব্দুল হাই, মাওলানা আবু বকর, ইকবাল খলিলুর রহমান, জাহাঙ্গীর আলম, মাওলানা জুবায়ের ওরফে দেলোয়ার পাকিস্থানে রয়েছেন।
গ্রেনেড হামলায় সরাসরি জড়িত আসামি ফরিদপুরের আনিসুর মুরসালিন ও তার ভাই মুক্তাকিন দীর্ঘদিন ভারতের তিহার কারাগারে আটক আছে বলে জানা গেছে। ধারণা করা হচ্ছে হারিছ চৌধুরী লন্ডন, মালয়েশিয়া কিংবা ভারতে থাকতে পারেন। ২০১৫ সালের ১২ নভেম্বর তার বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের নোটিশ ইস্যু করা হয়। ২০২০ সালের ২৩ জুলাই নোটিশের মেয়াদ পাঁচ বছর বাড়ানো হয়।
পুলিশ সদর দপ্তর থেকে জানা গেছে, তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি পুলিশের আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারপোলে নোটিশ পাঠানো চিঠি দেয় সিআইডি। ১৩ এপ্রিল ইন্টারপোল থেকে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে নোটিশ ইস্যু করা হয়। তবে ২০১৬ সালের ৮ জানুয়ারি ইন্টারপোল আর্টিকেলে তারেক রহমানের রাজনৈতিক আশ্রয় রয়েছেন উল্লেখ করে।
তবে পরের বছর ১৫ মার্চ তারেক রহমানের রেড নোটিশ বাতিল করে ইন্টারপোল। একই বছরের ২৭ নভেম্বর ক্যান্টনমেন্ট থানায় মানিলন্ডারিং আইনে দায়ের করা মামলায় তারেক রহমানের বিরুদ্ধে নোটিশ জারি করার অনুরোধ করা হয়। তবে এখনো পর্যন্ত তারেক রহমানের বিরুদ্ধে নোটিশ জারি করা হয়নি। সহকারী পুলিশ মহাপরিদর্শক (এআইজি) মিডিয়া মো. সোহেল রানা বলেন, ‘আমরা ইন্টারপোলের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রেখে যাচ্ছি। ঘটনার সঙ্গে জড়িত দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের দেশ-বিদেশ থেকে গ্রেপ্তার করে আইনের মুখোমুখি করার চেষ্টাও অব্যাহত আছে। তবে আসামিরা বিভিন্ন সময় স্থান পরিবর্তন করায় সঠিকভাবে তথ্য সংগ্রহ করা কষ্টসাধ্য হয়ে যাচ্ছে।’
গ্রেনেড হামলা ও বিচার : ২০০৪ সালের ২২ আগস্ট রাজধানীর মতিঝিল থানায় এসআই ফারুক আহমেদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তৎকালীন রাজনৈতিক সচিব সাবের হোসেন চৌধুরী ও আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত আব্দুল জলিল বাদি হয়ে পৃথক তিনটি মামলা দায়ের করেন। এছাড়াও আওয়ামী লীগ নেতা আ ফ ম বাহাউদ্দিন অপর আরেকটি মামলা দায়ের করেন।
তদন্ত শুরু হলে পুলিশ হামলার দায় আওয়ামী লীগের ওপর চাপানোর চেষ্টা করে। সাজানো হয় জজ মিয়া নাটক। এরপরই থেমে যায় মামলার তদন্ত কার্যক্রম। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে নতুন করে চাঞ্চল্যকর এ মামলাটি তদন্ত শুরু হয়। ২০০৮ সালের ১১ জুন আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন সিআইডির তৎকালীন সিনিয়র এএসপি ফজলুল করিম।
চার্জশিটে বিএনপি-জামাত জোট সরকারের উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, তার ভাই মাওলানা তাজউদ্দিন, হুজি নেতা মুফতি আব্দুল হান্নানসহ ২২ জনকে আসামি করা হয়। ওই বছরের ২৯ অক্টোবর একত্রে চার মামলায় হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে দুটি চার্জ গঠন করেন আদালত। ২০০৯ সালের ৯ জুন ৬১ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়।
২০১১ সালের ৩ জুলাই তারেক রহমান, হারিছ চৌধুরী, লুৎফুজ্জামান বাবর, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ৩৬ জনকে আসামি করে সম্পূরক চার্জশিট দেন সিআইডির তৎকালীন বিশেষ পুলিশ সুপার আবদুল কাহার আকন্দ।
২০১২ সালের ১৮ মার্চ দ্বিতীয় দফায় চার্জ গঠন করেন আদালত। ২০১৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর সাক্ষ্য গ্রহণের মাধ্যমে জজ মিয়া নাটকের অবসান হয়। ২০১৭ সালের ৩০ মে সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়। ওই বছরের ১২ জুন আত্মপক্ষ সমর্থন ও ১৩ অক্টোবর যুক্তিতর্ক শুরু হয়। ২০১৮ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষ হয়। একই বছরের ১০ অক্টোবর মামলা দুটির রায় ঘোষণা করেন ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নুর উদ্দিন।