ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),ঢাকা প্রতিনিধি,শনিবার,২১ আগস্ট ২০২১ : প্রকাশ্য দিবালোকে আর্জেস গ্রেনেড মেরে হত্যার চেষ্টা করা হবে, এটা কখনো কেউ স্বপ্নেও ভাবেনি, জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘সরকারের সহযোগিতা ছাড়া এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে না।’
শনিবার (২১ আগস্ট) রাজধানী বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে এক আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আলোচনা সভায় যুক্ত হন। এ সময় ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘আগস্ট মাস আসে আমাদের জন্য শুধু কষ্ট আর শোকের বার্তা নিয়ে। ১৫ আগস্ট হারিয়েছি বাবা-মা, পরিবার-পরিজনকে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ দেশের স্বাধীনতার জন্য সারাজীবন সংগ্রাম করেছেন। দুখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চেয়েছেন। যখন দেশ স্বাধীন হলো, যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ে তুলে মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে অগ্রযাত্রা শুরু হলো, মানুষ আশার আলো দেখলো, তখন জাতির কাছ থেকে তাকে কেড়ে নেওয়া হলো। শুধু তাকেই না, পুরো পরিবারকে হত্যা করা হলো।‘
২০১১ সালের পর বিএনপি-জামাত জোট ক্ষমতা দখল করেই আওয়ামী লীগের ওপর অত্যাচর শুরু করে, অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর সারা দেশে নির্যাতন শুরু করলো। হাজার হাজার নেতাকর্মীদের হত্যা ও গ্রেপ্তার, নারীদের ওপর পাশবিক অত্যাচার—ঠিক যেন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর মতো একই কায়দায় নির্যাতন শুরু করলো। গোপালগঞ্জে ছাত্রলীগ নেতা তুষারকে হত্যা করলো, সিলেটে ব্রিটিশ হাইকমিশনারনের আনোয়ার চৌধুরী ওপর গ্রেনেড হামলা হলো। তিনি আহত হলেন। সেখানে ৪-৫ জন নিহত হলো, অনেকেই আহত হলো। আমরা এর প্রতিবাদ করলাম। এই হত্যকাণ্ড-নির্যাতন-জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসের প্রতিবাদ করে শান্তির পক্ষে সমাবেশ ও র্যালি করতে চেয়েছিলাম। আমরা চেয়েছিলাম, এটি মুক্তাঙ্গনে করতে। কিন্তু বিএনপি সরকার অনুমতি দেয়নি। অনেক চেষ্টা করেও হলো না। তখন আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম, আওয়ামী লীগ অফিসের সামনে করব। পোস্টার করা হলো, পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিলাম। সমগ্র ঢাকাসহ সারা দেশে এটা প্রচার করা হলো। ঠিক রাত সাড়ে ১১টা-১২টার দিকে অনুমতি আসলো—মুক্তাঙ্গনে করা যাবে। তার পরের দিন আমাদের র্যালি। তখন আমরা মনে করলাম, যখন আমরা অনুমতি চাইলাম, তখন দিলো না, এখন হঠাৎ করেই এত গভীর রাতে দেওয়ার অর্থ কী? ওই চিঠি তো খুলে পড়ারও কথা না। আমরা তখন মনে করলাম, যেহেতু আওয়ামী লীগ অফিসের সামনে মাইকসহ সবকিছু প্রস্তুত, সেহেতু আমরা সেখানেই করব। এত রাতে তারা অনুমতি দিলো, এর রহস্য কী, আমরা এ ব্যাপারে সন্দিহান ছিলাম। এই যে প্রকাশ্য দিবালোকে আর্জেস গ্রেনেড মেরে এভাবে হত্যার চেষ্টা চালাবে, এটা কখনো কেউ স্বপ্নেও ভাবতে পারেনি। কিন্তু এর আগে খালেদা জিয়া বক্তব্য দিয়েছে, আমার নাম ধরেই বলেছে যে, প্রধানমন্ত্রী তো দূরের কথা বিরোধী দলীয় নেতাও কোনাদিন হতে পারব না।’
‘সেদিন ট্রাকেই অস্থায়ী মঞ্চ করা হয়েছে। আমি উঠে বক্তব্য দিলাম। মাইকটা রাখতে যাব, ওই সময়ে আমাদের ফটো সাংবাদিক গোর্কি এসে বলল, আপা, আমি তো ছবি নিতে পারিনি। সাংবাদিকরা সব ট্রাকের চালকের ওপর যে ছাদটা তার ওপরে বসা। ওরাও চিৎকার শুরু করলো যে, আপা, আমরা ছবি নিতে পারি নাই। একটু মাইক ধরেন। মাইকটা তখনও আমার হাতে। আমি নিচে নামছিলাম, থমকে দাড়ালাম ওখানে। দাঁড়াতেও পারি নাই, এরইমধ্যে গ্রেনেডের আওয়াজ। সাথে সাথে হানিফ ভাই পাশে দাঁড়িয়েছিলো। হানিফ ভাই এমনভাবে দাঁড়াচ্ছিলো, কেন যেন বারবার ঘুরে দাঁড়াচ্ছিলো। আমি বললাম, আমি তো কাউকে দেখতে পাচ্ছি না। আপনি একটু সরেন। তিনি বললেন যে, না আমি সরব না, এখানেই দাঁড়াবো। সাথে সাথে আমাকে ধরে ফেললো। আমার সাথে মামুন ছিল, নজিব ছুটে আসলো। আমার আশপাশে যারা ছিল, ছুটে এসে আমাকে একদম ঘিরে ধরলো। একটার পর একটা গ্রেনেড আওয়াজ হচ্ছে। আমি বসা, বারবার ওঠার চেষ্টা করছি। কিন্তু, ওরা আমাকে ছাড়েনি। আমার চশমাটা ছিটকে পড়ে গেল। কিন্তু আমি দেখলাম যে আমার গায়ে শুধু রক্ত পড়ছে। অর্থাৎ ওই যে স্প্লিন্টারগুলো সব এসে হানিফ ভাইয়ের গায়ে লাগছে, মাথায় লাগছে। আমার শরীরের ওপর সেই রক্ত পড়ছে। কয়েক সেকেন্ড থেমে আবার আমার কাছে মনে হলো এটা যেন কেয়ামতের মতো। কিছুই দেখা যাচ্ছে না। চারিদিকে ধোয়া। ঠিক জানি না আল্লাহ কীভাবে যেন হাতে তুলে বাঁচালো। আমার গায়ে একটাও স্প্লিন্টারও লাগেনি। কিন্তু আওয়াজে যে ক্ষতিটা হয়েছিলো…আমার একটা কানে শুনতে পাই না। সেই ট্রাকের ওপর থাকা অনেকেই আহত হয়েছেন। ট্রাকের সিঁড়িতে যারা দাঁড়িয়েছিল, তারা আহত। সেদিন ওই ট্রাকে একটা টেবিল দেওয়া হয়েছিলো, সাধারণত টেবিল থাকে না। কিন্তু ওই দিন টেবিল দেওয়া হয়েছিলো। একটা পর্যায়ে যখন থামল, আমি উঠে দাঁড়ালাম। ওরা ভাবছিল, আমি বোধহয় আহত। কারণ, আমার সারা শরীর রক্তাক্ত। আমি বললাম, আমার কিছু হয়নি। দেখলাম হানিফ ভাইয়ের মাথা রক্তাক্ত অবস্থায়। ওনার ছেলে খোকনসহ ছাত্রলীগের যারার সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে, প্রত্যেকে আহত। এমনকি আমার সাথে জেনারেল তারেক, সেও আহত…সবাই।’
‘যখন আমি গাড়িতে উঠতে যাব, দরজাটা খুলে মাহবুব দাঁড়ানো, তখনই গুলি আসলো। ওই গুলিতেই কিন্তু মাহবুব মারা গেল। কয়েকটি গুলি গাড়িত এসে লাগলো। যখন গাড়িটি ঘুরিয়ে জিরো পয়েন্টের কাছে, তখন আমি শুনছি হইচই আওয়াজ…। গাড়ি কিন্তু একটানে চালিয়ে নিয়ে আসলো। পরে জানলাম, ওখানে এই আহত অবস্থায় মানুষ ছটফট করছে। তখন সহায়তায় কোনো পুলিশ এগিয়ে আসেনি। উল্টো পুলিশ এসে লাঠিচার্জ শুরু করলো। আমাদের এক মহিলা কর্মী আহত, তার স্বামী এসেছে, তাকে লাথি মেরে পুলিশ বের করে দিয়েছে। তারা লাঠিচার্জ এবং টিয়ার গ্যাস মারা শুরু করলো। যেখানে এই ধরনের ঘটনা ঘটলে সাধারণত পুলিশ এগিয়ে আসে সাহায্য করতে, এখানে দেখা গেলো উল্টো। তার মানে— যারা আক্রমণকারী, তাদের রক্ষা করতেই এই টিয়ার গ্যাস ও লাঠিপেটা। একটা সরকারের যদি সহযোগিতা না থাকে, তাহলে এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারেন না।’
‘আমার গাড়িটা যখন ৫ নম্বরে সুধা সদনে ঢুকল, ঢোকার সাথে সাথে পুরো গাড়িটা বসে গেলো। গাড়িটা যে এত দূর টেনে নিয়ে এসেছে, আমার ড্রাইভারটা সাহসী ছিল। মতিন নিয়ে আসছে…। আসার সাথে সাথে গাড়িটি বসে গেল। আমি যখন নামছি, রেহানা তো চিৎকার করছে। আমি বললাম, আমার কিছু হয়নি। আমি বললাম যে, হানিফ ভাই আমাকে ধরে ছিলেন। তার শরীরের স্প্লিন্টার সেই রক্তই আমার গায়ে। আমি ওখানে দাঁড়িয়েই সাথে সাথে আমাদের ড্রাইভার আলী হোসেন আর শাহজাহানকে পাঠালাম যে, যত দূর পারো, যাদেরকে পাও হাসপাতালে নিয়ে যাও। তারপর চিকিৎসা চললো। সবথেকে দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো—যারা বিএনপিমনা ডাক্তার, তারা কেউ মেডিক্যাল হাসপাতালে ছিল না। আর বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো আহতকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। সেটা সম্পূর্ণ বন্ধ। আমাদের ডাক্তার রোকেয়া আইভী রহমানসহ প্রায় ৭০ জনকে একা এনেসথেসিয়া দিয়েছে। এভাব আমাদের মাইন্ডের যারা, সবাই ছুটে আসছে। ওরা চিকিৎসা দিতে চেষ্টা করেছে। লাইন দিয়ে রোগী, যেখানে যাকে সুযোগ হয়েছে, তাকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।’
‘আমি চারিদিকে সবাইকে পাঠালাম যে, কে কোন হাসপাতালে আছে, তাদের চিকিৎসা, তাদের রক্ত দেওয়া, তাদের কী করা লাগবে—আমাদের সবাই সহযোগিতা করলো। ছুটে গেলো সবাই। যারা মৃত, তাদের লাশগুলো মেডিক্যাল কলেজে। সেই লাশও আত্মীয়দের দেবে না। তাদের লাশ নিতে দেবে না। কিছুতেই দেবে না। আমাদের নেতাকর্মী সেখানে ঘিরে থাকল। এক পর্যায়ে ভোরের দিকে এক এক করে লাশ দিতে থাকলো।‘
‘পরবর্তী সময়ে আমি শুনেছি যে, ওখানে ডিজিএফআইয়ের একজন অফিসার নাকি ডিউটিতে ছিল। সেখানে যখন গ্রেনেড হামলা হয়, তিনি হেড কোয়ার্টারে ফোন করেন, এজন্য তখন তাকে ধমক দেওয়া হয়। দু-একজন পুলিশ কর্মকর্তা, যারা ওখানে ছিল, তারা জানতো না। তারা হয়তো পুলিশ হেড কোয়ার্টারে ফোন দিয়েছে, তাদের ধকম দিয়ে বলেছে যে, তোমাদের এটা দেখা লাগবে না। তোমরা ওখানে কী করো, সরে যাও। শুধু তাই না, আমরা এত মানুষ নিহত-আহত হয়েছি, অনেক সংসদ সদস্য ছিল। সংসদে যখন আমরা গেলাম এবং এ বিষয়টি তুলতে চেষ্টা করলাম, তখন কিছুতেই এই বিষয়ে কথা বলতে দেবে না। একটা শোক প্রস্তাব দিলাম আমরা, সেটা নিলো না। কথা বলতে চেয়েছি, আমাদের মাইক দেয়া হলো না। খালেদা জিয়া নিজেই তো দাঁড়িয়ে বলল, ওনাকে আবার কে মারবে? উনি তো নিজেই ভ্যানিটি ব্যাগে করে গ্রেনেড নিয়ে গেছেন। আমি বললাম, আমার হাতে তো ভ্যানিটি ব্যাগ ছিলো না। আর আমি কীভাবে আর্জেস গ্রেনেড মারায় এক্সপার্ট হয়ে গেলাম, তা তো জানি না। আমরা কি সুইসাইড করতে ওখানে গিয়েছিলাম?’
‘অনেকেই হরতাল ডাকতে বলেছিল, কিন্তু আমি জানি, আমার এত বেশি রোগী ঢাকা শহরে উত্তরা, মিরপুর থেকে শুরু করে একেবারে ঢাকা দক্ষিণ পর্যন্ত অলি-গলিতে আহত নেতাকর্মী। কত যে আহত-নিহত, তার হিসাব নেই। আমি সবার চিকিৎসার খোঁজ নিয়েছি। ঢাকায় যে এত ক্লিনিক কেউ বলতে পারে না। পরবর্তীতে বিদেশে পাঠিয়ে চিকিৎসা করিয়ে এনেছি। দীর্ঘদিন পর্যন্ত, এমনকি এখনো অনেককে চিকিৎসা করতে হচ্ছে। যারা গণতন্ত্রের কথা বলে, এটা কোন ধরনের গণতন্ত্র যে, প্রকাশ্য দিবালোকে একটা জনসভায় আর্জেস গ্রেনেড মারতে পারে। তারপর সেখানে যে রক্ত, পায়ের জুতা, যেসব আলামত পড়ে আছে, সেখানে একটা গ্রেনেড ফাটেনি, সেই গ্রেনেডটাও পড়ে আছে, সেটা উদ্ধার করা হলো। সেই গ্রেনেডটা একজন আর্মি অফিসার নিয়ে বলল যে, এটা রাখতে হবে আলামত হিসেবে। তাকে ধমক দেওয়া হলো। পরে তার ওপর অনেক নির্যাতনও করেছে যে, এ কথা কেন বলল? সেই গ্রেনেডটাও ধ্বংস করে দেওয়া হলো। আলামত মোছার জন্য পানি দিয়ে ধোয়া শুরু করলো। তখন আমি যুবলীগের নানক, আজম ওদেরকে বললাম, ওখানে যে আলামত নষ্ট করে দিচ্ছে, তোমরা যত দূর পারো রক্ষা করো। ততক্ষণে সিটি করপোরেশনের গাড়ি এনে তা ধুয়ে ফেলে দিয়েছে। তারপরও যেসব জায়গায় গ্রেনেড দাগ ছিলো সেখানে লাল টেপ দিয়ে জায়গাগুলোকে চিহ্নিত করল। এই কাজগুলো কাদের? এই কাজগুলো তো সরকারের, পুলিশের। তা তারা করেনি অর্থাৎ আলামতও তারা রাখতে চায়নি।’
‘দ্বিতীয় হচ্ছে যে, চারদিকে যখন সমালোচনা, তখন জজ সাহেবকে দিয়ে একটি তদন্ত কমিটি করা হলো। তদন্ত কমিটি আবিষ্কার করলো, পাশের দেশের গোয়েন্দা সংস্থা এসে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। তো পাশের দেশ থেকে গোয়েন্দা সংস্থা এসে দিনে-দুপুরে এইভাবে শহরের ভেতরে যদি গ্রেনেড মেরে যেতে পারে, তাহলে সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কী করছিল। তারা কি নাকে তেল দিয়ে ঘুমাচ্ছিল? তাহলে তারা দেশের স্বাধীনতা স্বার্বভৌমত্ব রক্ষা করবে কীভাবে? আমাদের স্বাধীনতা স্বার্বভৌমত্ব রক্ষার সশস্ত্র বাহিনী, বিডিআর, পুলিশ তারা কী করছিলো। এইভাবে তারা সবার দৃষ্টি অন্যদিকে ঘোরানোর চেষ্টা করলো। এর পর যখন সমালোচনা উঠল, তখন জজ মিয়া নামে… প্রথমে আরেকটি ছেলেকে গ্রেপ্তার করলো। এমনকি আওয়ামী লীগের নেতা মগবাজারের মোখলেসকে পর্যন্ত গ্রেপ্তার করে মিথ্যা মামলা দিয়ে বলা হলো, এই হামলায় নাকি সে জড়িত। আমি বললাম, কখনো ওরা জড়িত থাকতে পারে না। দিনের পর দিন অত্যাচার করে তাদের কাছ থেকে স্বীকারোক্তি আদায়ের চেষ্টা করা হলো। আমাদের নেতাকর্মীদের ধরার একটাই উদ্দেশ্য ছিলো—তাদের দিয়ে স্বীকার করাবে যে দলীয় কোন্দলে হয়ে গেছে। এরপর নোয়াখালীর জজ মিয়া, একটা গরির ঘরের ছেলে, তাকে টাকা দিয়ে তার পরিবারকে লালন-পালন করবে, সে কথা বলে, তাকে দিয়ে এক কাহিনী রচনা করলো। ওর কি যোগ্যতা আছে যে, এই গ্রেনেড সংগ্রহ করা, এতগুলো লোক নিয়োগ দেওয়া, এত কিছু করা, এটা কি সম্ভব?’
‘আপানার জানেন যে, একটা গ্রেনেড পাওয়া গেলো জেলখানার ভেতরে ওয়ালের সাথে। সেটা আবার আমাদের কোনো কোনো পত্রিকা ডায়াগ্রাম একে দেখোলো যে, জেলখানার পাশে থেকে এক বাড়ি থেকে ছুড়ে মারার কারণে ওখানে পড়েছে। জেলখানার পাশে এমন কোনো বাড়ি নেই যেখান থেকে গ্রেনেড মারলে ওখানে পড়বে। আসলে এরা অনেকগুলো ক্রিমিনাল জোগাড় করেছিলো। তার মধ্যে কিছু জেলখানা থেকে বের করে এনেছিল। প্রত্যেকের হাতে যে গ্রেনেডগুলো ছিল, সবাই সেগুলা মারতেও পারেনি। রমনার গলিতে একটা পাওয়া যায় এবং বিভিন্ন জায়গায় কয়েকটার আলামত পাওয়া যায়। এটা নিশ্চয় ঢুকে গিয়েছিল এবং এর সঙ্গে একজন কারারক্ষী জড়িত ছিল। ওই দিন রাত ১১টার দিকে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সে খালেদা জিয়া দেশ থেকে বাইরে পাঠিয়ে দেয়। শোনা যায়, কর্নেল রশিদ এবং ডালিম সেই সময়ে ঢাকা এসেছিল। তারা ঢাকায় খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের তত্ত্বাবধানে ছিল। কারণ, গোয়েন্দা সংস্থা, ডিজিএফআই, এনএসআই, পুলিশ অফিসার সবাই জড়িত। কাজেই এরা তাদেরকে রক্ষা করে এবং দেশ থেকে রাইরে যেতে তারা সুযোগ তৈরি করে দেয়।’
‘যখন জানলো যে, আমি মরি নাই, বেঁচে আছি; তখন তারা দেশ থেকে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো। সেই একুশে আগস্ট আমাদের হাজার হাজার নেতাকর্মী আহত হলো। ২২ জন আমাদের নেতাকর্মী মারা গেছেন। আর বাকি দুজন ছিলা অজ্ঞাতনামা। তাদের লাশ কিন্তু কেউ কখনো নিতে আসেনি।’
‘আগস্ট মাসে ঘটনা ঘটল, এরপর সেপ্টেম্বরে সাকা চৌধুরীর ১০ জন ক্যাডারকে কিন্তু ক্রসফায়ার দেওয়া হয়েছিলো। তাদেরকে কেন ক্রসফায়ারে মারা হয়েছিল? তার মানে, এই ঘটনার সঙ্গে অনেক কিছু জড়িত।’
২১ আগস্টে গ্রেনেড হামলায় নিহতদের মাগফেরাত কামনা এব আহতদের সুস্থতার জন্য দোয়া কামনা করেন শেখ হাসিনা।
আলোচনায় সভায় ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার স্মৃতিচারণ করে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, কার্যনির্বাহী সদস্য ও বিএমএর সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখার সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী, উত্তরের সভাপতি বজলুর রহমান প্রমুখ।