র‌্যাব পরিচয়ে অপহরণের ফাঁদ, কেরানীগঞ্জের ইউপি মেম্বারসহ গ্রেপ্তার ৫

SHARE

গ্রেপ্তারকৃত ইউপি সদস্য হানিফ মিয়া ও তার সহযোগীরা

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),ঢাকা প্রতিনিধি,শনিবার,২১ আগস্ট ২০২১ : এক ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে মেরে ফেলতে কথিত র‌্যাব পরিচয় দেয়া এমন একটি চক্রের সঙ্গে ১০ লাখ টাকার চুক্তি করেছিলেন কেরানীগঞ্জ মডেল থানার শাক্তা ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার হানিফ মিয়া (৬৩)। কিন্তু উপস্থিত জনতার তৎপরতায় হাতেনাতে ওই ইউপি মেম্বারসহ তার ৫ সহযোগীকে ধরে ফেলে রাজধানীর তেজগাঁও থানা পুলিশ।

ঘটনাটি ঘটে গতকাল শুক্রবার (২১ আগস্ট) দিনগত রাত। পরে আজ শনিবার (২১ আগস্ট) দুপুরে এই ঘটনায় তেজগাঁও থানায় মামলা (নং-৫৬) দায়ের করেন ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী সজিব বেপারী (৩১)।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. শহিদুল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, আমরা গতকাল শুক্রবার রাতে হানিফ মেম্বারসহ তার ৫ সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেছি। কেরানীগঞ্জের শাক্তা ইউনিয়নের উত্তর বালুরচরের বাসিন্দা ব্যবসায়ী সজিব বেপারীর সঙ্গে একই এলাকার মেম্বার হানিফ মিয়ার আগে থেকেই জমিজমা নিয়ে বিরোধ ছিলো। সেই সূত্র ধরে হানিফ মেম্বার একটি ‘আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর’ পরিচয় দেয়া চক্রের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে সজিব বেপারীকে অপহরণ এবং মুক্তিপন আদায় করে। আমরা মুক্তিপনের ওই টাকাও উদ্ধার করেছি।

চক্রটি জমিজমা সংক্রান্ত বিষয়ে ‘আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর’ পরিচয়ে জিজ্ঞাবাদ করার নামে সজিবকে পরিকল্পনা করে কেরানীগঞ্জ থেকে ডেকে এনে অপহরণ করে আটকে রেখেছিলো। পরে হানিফ মেম্বার কারওয়ানবাজারে অপহরণকারীদের চুক্তির টাকা দিতে এসে হাতেনাতে আটক হয়। এসময়ে অপহরণকাজে ব্যবহার করা হানিফ মিয়ার মাইক্রোবাস নোয়া (ঢাকা মেট্রো-গ-৩৯-১২৫৪) জব্দ করা হয়েছে।

পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হানিফ মেম্বার ও তার সহযোগীরা ব্যবসায়ী সজিবকে অপহরণে বিষয়টি স্বীকার করে। এমন পরিস্থিতিতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গ্রেপ্তারকৃত হানিফ মেম্বারসহ অন্য আসামীদের আদালতে পাঠিয়ে ৫ দিন করে রিমান্ড চাওয়া হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গ্রেপ্তারকৃত হানিফ মেম্বারসহ তার সহযোগীদের ১ দিন করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছেন আদালত।

ডিসি আরও বলেন, ইউপি মেম্বার হানিফ মিয়ার বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত আমরা অবৈধভাবে জমি দখল, গ্রাম্য সালিসের নামে বর্বর নির্যাতনসহ আরও ৩ টি মামলা থাকার প্রমাণ পেয়েছি। এছাড়াও বিভিন্নভাবে তার আরও অপরাধের খবর আমরা পাচ্ছি। সবকিছুই আমরা তদন্ত করে দেখবো।

এজহারে যে অভিযোগ করেছেন ওই ব্যবসায়ী

ইউপি মেম্বার হানিফ মিয়া ছাড়াও থানায় দায়ের করা মামলার এজহারে ভুক্তভোগী ব্যাবসায়ী সজিব আরও ৭ জনের নাম উল্লেখ করেছেন। তারা হলেন- সেলিম গাজী (৫৩), নূর ইসলাম (৩৭), নিজাম উদ্দিন সেন্টু (৪১), ইলিয়াস মাতুব্বর (৩৮), আনোয়ার (৪২), মিন্টু (৩৭) ও রাজীব (৩৩)।

এজহারে সজিব বলেন, আমি একজন ব্যবসায়ী। আমার স্থায়ী ঠিকানা কেরানীগঞ্জ। এলাকার ইউপি সদস্য হানিফ মেম্বারের সাথে আমার দীর্ঘদিন যাবৎ জমি-জমা নিয়ে বিরোধ চলছিলো। এরই সূত্র ধরে হানিফ মেম্বার মাঝে মধ্যেই আমাকে অপহরণ করে প্রানে মেরে ফেলার হুমকি দিত। গত ১৯ আগস্ট র‌্যাব পরিচয় দেয়া নুর ইসলাম (৩৭) আমাকে ফোনে কাওরান বাজার র‌্যাব মিডিয়া অফিসের সামনে দেখা করতে বলে এবং সে আমাকে জানায় যে তার বস আনোয়ার হোসেন র‌্যাবের বড় কর্মকর্তা। কেরানীগঞ্জে জমি নিয়ে অভিযোগ হয়েছে তাই আমাকে তার অফিসে না গেলে আমাকে র‌্যাব ধরে নিয়ে যাবে।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৯ আগস্ট নুর ইসলাম নামের একজন ফার্মগেট আনন্দ সিনেমা হলের বিপরীতে আমার শ্বশুরের অফিসে আমার সাথে দেখা করে এবং তার ফোনের মাধ্যমে কথিত র‌্যাব কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেনের সাথে আমাকে কথা বলিয়ে দেয়।

এরপর গত ২০ আগস্ট রাত আনুমানিক সাড়ে ৮ টায় আমি আমার শ্বশুর নজরুল ইসলামসহ কাওরান বাজারে যাওয়ার পথে তেজগাঁও থানাধীন কাওরান বাজারস্থ কিচেন মার্কেটের সামনে পৌঁছালে সেলিম গাজীর নেতৃত্বে অন্যরা নিজেদের র‌্যাব পরিচয় দিয়ে আমাকে জোরপূর্বক একটি সাদা মাইক্রোতে উঠিয়ে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়ার জন্য জবরদস্তি করতে থাকে, এমন পরিস্থিতিতে আমার এবং আমার শ্বশুরের ডাক চিকারে আশে-পাশের লোকজন গাড়ীটি ঘেরাও করে হানিফ মেম্বারসহ অন্যদের আটক করে। তখন আশেপাশের লোকজনের তাদের র‌্যাবের পরিচয়ের বিষয়ে সন্দেহ হলে আমার শ্বশুর দ্রুত থানা পুলিশকে খবর দিলে তেজগাঁও থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে এবং তাদেরকে উপস্থিত লোকজনের সামনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা স্বীকার করে যে- তারা র‌্যাবের সদস্য না।

তারা আরও স্বীকার করে যে- তারা ইউপি মেম্বার হানিফ মিয়া এবং তার একনিষ্ঠ সেলিম গাজীর মধ্যস্থতায় অন্যান্য সহযোগী আসামীদের মাধ্যমে অপহরণ করে আমাকে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করেছিল। এই জন্য তাদের সাথে ইউপি মেম্বার হানিফ মিয়া ১০ লাখ টাকা চুক্তি করে এবং তাদেরকে এই কাজের জন্য অগ্রীম হিসাবে ২ লাখ টাকা দিয়েছিলো। বাকী টাকা কাজ হওয়ার পর দিবে বলে তারা জানায়।

তখন পুলিশ উপস্থিত সাক্ষীদের সম্মুখে আসামী নুর ইসলামের কাছ থেকে অপহরনের জন্য নেওয়া নগদ ৩৮ হাজার টাকা এবং অপহরনের সময় ব্যবহৃত মাইক্রোবাসটি (নোয়া) জব্দ তালিকামূলে জব্দ করেন।

এদিকে আসামী নুর ইসলামের মাধ্যমে হানিফ মেম্বারকে সু-কৌশলে ফোন করে কাজ হয়েছে বলে জানালে, বাকী টাকা নিয়ে কারওয়ান বাজার কিচেন মার্কেটের সামনে চলে আসে হানিফ মেম্বার। ওই সময়ে তার সঙ্গে ছিলো সহযোগী মিন্টু এবং রাজীব। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে আসামী ইউপি মেম্বার হানিফ মিয়াকে কৌশলে গ্রেপ্তার করে ফেলে পুলিশ। ওই সময়ে তার সঙ্গে থাকা অন্য দুই সহযোগী পালিয়ে যায়।

ঘটনাস্থলেই অপহরণকারীদেরকে দেওয়ার জন্য নগদ ১ লাখ টাকা গ্রেপ্তারকৃত আসামী মেম্বার হানিফ মিয়ার কাছ থেকে জব্দ করে পুলিশ। একইসঙ্গে অপহরণকাজে ব্যবহার করা হানিফ মেম্বারের গাড়িটি জব্দ করে তেজগাঁও থানায় রাখা হয়।