ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),আন্তর্জাতিক প্রতিনিধি,মঙ্গলবার, ১৭ আগস্ট ২০২১ : আফগানিস্তানের ক্ষমতায় তালেবান ফিরে আসার পর দেশটির ভবিষ্যৎ কী দাঁড়াবে তা নিয়ে বিশ্ব যখন শংকিত, তখন বেইজিং, মস্কো এবং ইসলামাবাদে দেখা যাচ্ছে কিছুটা ভিন্ন প্রতিক্রিয়া।
বেশিরভাগ দেশ যখন কাবুলে তাদের দূতাবাস থেকে জরুরী ভিত্তিতে তাদের কূটনীতিকদের দেশে ফিরিয়ে আনছে , তখন এই তিন দেশ আফগানিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক অব্যাহত রাখার ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছে।
চীন বলেছে, তারা আফগানিস্তানের সঙ্গে তাদের “বন্ধুত্বপূর্ণ এবং সহযোগিতামূলক” সম্পর্ক আরও গভীর করতে প্রস্তুত। রাশিয়া বলেছে, কাবুল থেকে তাদের কূটনীতিকদের সরিয়ে আনার কোন পরিকল্পনা তাদের নেই। আর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেছেন, আফগানিস্তানের জনগণ অবশেষে “দাসত্বের শৃঙ্খল ভেঙ্গেছে।” বিবিসি বাংলা সূত্রে এমনসব তথ্য জানা গেছে।
চীন: “সম্পর্ক গভীর করতে প্রস্তুত”
বিবিসি মনিটরিং এর চীনা মিডিয়া বিষয়ক বিশ্লেষক কেরি অ্যালেন লিখেছেন, আফগানিস্তানে যা ঘটছে তাই এখন চীনা গণমাধ্যমের শিরোনাম দখল করে আছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকায় আফগানরা কিরকম ‘বিশ্বাসঘাতকতার শিকার’ হয়েছে বলে বোধ করছে, সেটাই প্রাধান্য পাচ্ছে চীনা গণমাধ্যমের খবরে।
আফগানিস্তানের চীনা দূতাবাস সেখানে কোন চীনা নাগরিক হতাহত হওয়ার খবর পায়নি বলে জানিয়েছে। তবে চীনা দূতাবাস এই মূহুর্তে আফগানিস্তানে তাদের নাগরিকদের বাইরে না যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছে।
তালেবান বাহিনী আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর চীনের একজন সরকারি মুখপাত্র বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, চীন আফগানিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করতে প্রস্তুত।
পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র হুয়া চুনিইং গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, “আফগানিস্তানের জনগণের ইচ্ছা এবং পছন্দকে চীন শ্রদ্ধা করে, তবে চীন অব্যাহতভাবে সেখানকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে।”
এদিকে বিবিসির মস্কো সংবাদদাতা জানান, আফগানিস্তানে তালেবানের জয়যাত্রা রুশ গণমাধ্যমের প্রধান শিরোনাম দখল করে আছে। তবে সেখানে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে রাশিয়া এবং মধ্য এশিয়ার দেশগুলোতে এর কী প্রভাব পড়তে পারে, সেই বিষয়টি।
রাশিয়ার পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষের ডেপুটি স্পীকার কনস্টান্টিন কোশাচেভ বলেছেন, ইসলামিক স্টেট গোষ্ঠী যে সিরিয়া এবং ইরাকে পরাজিত হওয়ার পর এখন আফগানিস্তান এবং সেন্ট্রাল এশিয়ার ব্যাপারে বেশ আগ্রহী হয়ে উঠবে, সেটা তিনি বুঝতে পারছেন। ইসলামিক স্টেট তালেবানের সঙ্গে কোন সমঝোতায় পৌঁছাক বা না পৌঁছাক, রাশিয়া এবং তার মিত্রদের জন্য যে ঝুঁকি বাড়বে, সেটা মোটেই উড়িয়ে দেয়া যায় না।
রুশ সংবাদপত্র কোমারসান্ট বলছে, কাবুলের পরিস্থিতি উত্তেজনাপূর্ণ হলেও সেখানে রুশ দূতাবাস দেখে বেশ শান্ত বলেই মনে হচ্ছে। দূতাবাস বলছে, অন্যান্য পশ্চিমা দেশের মতো তারা তাদের কূটনীতিক এবং কর্মীদের উদ্ধার করে নিরাপদ জায়গায় নিয়ে যাওয়ার কোন প্রয়োজন দেখছে না। তালেবানের সঙ্গে রুশ দূতাবাস যোগাযোগ রক্ষা করে চলছে বলেও রুশ গণমাধ্যমে উল্লেখ করা হয়।
একজন রুশ কূটনীতিক কমসোমস্কোয়া প্রাভদা পত্রিকাকে বলেছেন, তালেবানের যেহেতু দেশ চালাতে হবে, তাই তাদের বাইরে কিছু দেশের সহযোগিতা লাগবে, বিনিয়োগ লাগবে। বিশেষ করে খাদ্য সংকটের সুরাহা করতে হবে। আর মস্কোকেও কিছু সমস্যার মোকাবেলা করতে হবে, বিশেষ করে আফগানিস্তানের সঙ্গে তাজিকস্তান এবং উজবেকিস্তানের সীমান্তের পরিস্থিতি শান্ত রাখতে সাহায্য করতে হবে।
এদিকে, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেছেন, “আফগানরা দাসত্বের শৃঙ্খল ভেঙ্গেছে” আফগানিস্তানের তালেবানের বিজয় সম্পর্কে ইমরান খানের এমন মন্তব্য বেশ আলোচিত হচ্ছে।
বিবিসি সূত্রে জানা যায়, ইমরান খান পাকিস্তানে ইংরেজি শিক্ষার সমালোচনা করতে গিয়ে এই মন্তব্যটি করেন। তিনি সাংস্কৃতিক সাম্রাজ্যবাদ বিষয়ে বক্তৃতায় বলেন, আফগানরা “দাসত্বের শৃঙ্খল ভেঙ্গেছে।”
১৯৯৬ সালে মাত্র যে তিনটি দেশ তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দিয়েছিল, পাকিস্তান ছিল তার একটি। তালেবান আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণের পর পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটির একটি বৈঠক ডাকা হয়েছে, যেখানে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান সভাপতিত্ব করবেন। সেখান থেকে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
পাকিস্তানের দুটি প্রধান ধর্মভিত্তিক দল, জামায়াতে ইসলামী এবং জেইউআই-এফ এরই মধ্যে আফগান তালেবানকে তাদের বিজয়ের জন্য অভিনন্দন জানিয়েছে। তারা পূর্ণ সহযোগিতারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এসব দলের সদস্যরা তালেবানের বিজয়ে মিষ্টিও বিতরণ করেছে।