ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),ভৈরব প্রতিনিধি,২৮ ফেব্রুয়ারি : ভৈরবে ও দেশের বেশ কয়েকটি গ্রামে এবং শহরে ইদানিং সাংবাদিক হওয়ার প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে, আন্ডারগ্রাউন কিছু পত্রিকা (যেসব পত্রিকা পাঠক দেখেনা, পড়েনা) থেকে আইডি কার্ড এনে কোমরে ঝুলিয়ে কতিপয় কিছু নামধারি সাংবাদিক শহরে ঘূরঘূর করে। উপজেলা এলাকা, থানা, রেলস্টেশন, হাসপাতালে প্রায়ই এদেরকে দেখা যায়। কার্ডধারী কথিত এসব সাংবাদিকদের অনেকেই শিক্ষাগত যোগ্যতা প্রাইমারী পাশ বা সেভেন/এইট পাশ। অখ্যাত পত্রিকা কর্তৃপক্ষ আইডি কার্ড দিতে গিয়ে তাদের একাডেমিক যোগ্যতা যাচাই করেনা। এদের মধ্যে অনেক পত্রিকার সার্কুলেশন নগন্য হলেও তারা (মিডিয়া কর্তৃপক্ষ) কার্ড দিয়ে সাংবাদিক তৈরি করে ভাল আয়ও করে বলে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। কথিত নামধারী এসব সাংবাদিক কেউ ছিল কাঠমিস্ত্রি, কেউ অটোচালক, কেউ মাঝি, কেউ পিঠা বিক্রেতা, আবার কেউ মাদক সেবনকারী বা বিক্রেতা। আবার অনেকে রাজনীতি দলের ছোট বড় পদধারী হয়েও কথিত সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে থাকেন। একসঙ্গে দুটি ক্ষমতা ব্যবহার করতে চান তারা। রাজনীতি যদি করেন তবে সাংবাদিকতায় আসবেন কেন? আমরাতো সাংবাদিক হয়ে রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হয়নি। একটি দলকে বা নেতাকে সমর্থন করতে পারি কিন্তু দলের পদধারী কখনও হওয়া উচিত নয়। কোন যোগ্যতা ছাড়া বা শিক্ষিত না হয়েও সাংবাদিক হওয়া যায়। গণমাধ্যম থেকে আইডি কার্ড সংগ্রহ করতে পারলেই একজন সাংবাদিক হয়ে গেলাম! কত সহজ!!
বিভিন্ন গ্রামে মাদক, মারামারি, সংঘর্ষ, দলাদলিতে আহত/নিহতের ঘটনায় বিশেষ সুবিধা নিতে সাংবাদিকতায় আগ্রহী হয়ে উঠেছে এক শ্রেণির ব্যাক্তিরা। সাংবাদিক হলেই প্রশাসনে ও পুলিশ বিভাগে বিশেষ সুবিধা নেওয়া যায়। যার ফলে এ পেশায় আগ্রহী হয়ে উঠেছে তারা। সাংবাদিক হলে মামলা থেকে রেহাই পাওয়া খুব’ই সহজ বা প্রশাসন সমিহ পাওয়া সহজ। এ মনোভাব নিয়েই সাংবাদিক হওয়ার হিড়িক লক্ষ্য করা যায়। মাদক সেবনকারী ও বিভিন্ন বদ লোকেরা আজকাল কথিত সাংবাদিকের পরিচয় দিচ্ছে। এদের অনেকে কাঁদে ব্যাগ, হাতে বড় ক্যামেরা, কোমড়ে আইডি কার্ড, মটরসাইকেলে প্রেস বা সাংবাদিক লিখে শহরে দাবরিয়ে বেড়াচ্ছে। কিন্তু অনেকেই নিউজের বেলায় ঠন ঠন। ফেসবুক থেকে কপি-পেস্ট করে এদের অনেকেই নিউজ করে বলে অভিযোগ রয়েছে। আবার অনেকে নিজের মিডিয়াই খবর প্রকাশ না করে প্রতিদিনের একাধিক ঘটনা ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিচ্ছে। এসব স্ট্যাটাস কিছু কিছু ফেসবুক বন্ধু লাইক কমেন্ট করে বিরুপ মন্তব্য করে কথিত সাংবাদিকদেরকে উৎসাহ দিচ্ছে। এরা কারো কারো সাথে বা সন্মানী ব্যক্তিদের সাথে সেলফি বা ছবি তুলে ফেসবুকে দিয়ে নিজেদেরকে বড় সাংবাদিক প্রচার করে।
অন্য দিবে অনলাইন গণমাধ্যমের সাংবাদিক একটি বড় সমস্যা হয়ে উঠেছে। দেশে ব্যাঙ্গের ছাতার মত অনলাইন সৃষ্টি হয়েছে। অনলাইন সাংবাদিকের পরিচয়ও কেউ কেউ দিয়ে থাকে। কথিত এসব সাংবাদিকের নিউজগুলিতে থাকে গল্প আর কাহিনী। পড়লে হাসি পায়। এসব কথিত সাংবাদিকদের রুখতে হবে। দেশের সাংবাদিক নেতাদের ও মফস্বলের সিনিয়র সাংবাদিকদেরকে অনুরোধ করব, আসুন আমরা ঐক্যমতের মাধ্যমে ঐক্য গড়ে তুলি। পুলিশ বিভাগ ও প্রশাসন কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করব ভূয়া সাংবাদিকদের থেকে আপনারা দূরে থাকুন। প্রমান পেলে ভূয়া সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্হা নিন। এদের সাথে ছবি তুলে আপনাদের সন্মানটুকু নষ্ট করবেন না। আমরাও চাই মেধাবীরা এই পেশায় আসুক, নতুন সাংবাদিক সৃষ্টি হোক। অপসাংবাদিকতা সমাজ থেকে দূর হোক। শিক্ষিতরা সাংবাদিক পেশায় আসলে সমাজের উপকার হবে। কিন্তু কিছু হুলুদ সাংবাদিকরা সমাজকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। আমাদের পেশাটাকে অসন্মান করে বদনামের পাল্লা ভারী করে ফেলছে। এই অবস্হা থেকে উত্তরণ হতে হবে। কাউকে না কাউকে হাল ধরে এসব রুখতে হবে। এখন সময় এসেছে। আসুন আমরা ঐক্য গড়ে তুলি। সাংবদিকদের বদনাম হলে আমরা কখনও এর দায় এড়াতে পারবনা।