প্রথম স্বামীর মামলায় জামিন পেলেন দ্বিতীয় স্বামী, সন্তুষ্ট স্ত্রী

SHARE

বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার শাহ আলম ও তাঁর স্ত্রী ফাতেমা বেগম। ছবি : ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি)

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),বরগুনা প্রতিনিধি,১১ ফেব্রুয়ারি : বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার ফাতেমা বেগম নামের এক গৃহবধূর প্রথম স্বামীর করা অপহরণ মামলায় দ্বিতীয় স্বামী শাহ আলমকে জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট। এতে তাঁর মুক্তিতে আর বাধা রইল না।

বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল গ্রহণ করে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেন। আদালতে জামিনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির, সঙ্গে ছিলেন মো. আরিফুর রহমান।

ফাতেমা বেগম অভিযোগ করেছিলেন, তিনি অপহৃত হননি, নিজের ইচ্ছেয় দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন। অথচ বর্তমান স্বামীর বিরুদ্ধে অপহরণ মামলা করেছেন তাঁর প্রথম স্বামী। আর সেই মামলায় বর্তমান স্বামীকে ২০ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন বরগুনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক। সেই কারণে ভুক্তভোগী স্বামীর মুক্তির জন্য হাইকোর্টের দ্বারে দ্বারে ঘুরছিলেন তিনি।

হাইকোর্টের আদেশে সন্তোষ প্রকাশ করে শাহ আলমের স্ত্রী ফাতেমা বেগম আজ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আদালতের ন্যায়বিচার পাওয়ায় আমি অনেক খুশি। আমার দুই বাচ্চাকে নিয়ে অনেক কষ্টে আছি। স্বামী দ্রুত ফিরে আসবেন, এটাই আমার প্রত্যাশা।’

আদেশের পর আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির এনটিভি অনলাইনকে জানান, শাহ আলমকে বিচারিক আদালত যে রায় দিয়েছিলেন, তাঁর বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করা হয়েছে। আদালত আপিল গ্রহণ করে জামিন দিয়েছেন। এখন মুক্তিতে বাধা নেই।

মামলার বিবরণে জানা গেছে, বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার বাসিন্দা ফাতেমা বেগম। ২০০৭ সালে বিয়ে করেন একই উপজেলার মো. জাকির হোসেনকে। তাঁদের সংসারে একটি ছেলে সন্তানও আছে। কিন্তু স্বামীর নির্যাতন সইতে না পেরে ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তালাক দিয়ে শাহ আলম নামের আরেকজনকে বিয়ে করেন ফাতেমা বেগম।

বিপত্তি এখানেই শুরু। এ ঘটনায় দ্বিতীয় স্বামী শাহ আলম ফাতেমা বেগমকে অপহরণ করেছেন মর্মে মামলা করেন প্রথম স্বামী জাকির হোসেন। এই ঘটনায় ফাতেমা বেগম বরগুনার পাথরঘাটা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সামনে ২২ ধারার জবানবন্দি দেন। তিনি জবানবন্দিতে উল্লেখ করেন, ‘আমাকে শাহ আলম অপহরণ করে নাই। শাহ আলমকে আমি মাসখানেক আগে স্বেচ্ছায় বিয়ে করেছি। ২০০৭ সালে জাকিরের সঙ্গে বিয়ে হয়। জাকিরের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে শাহ আলমকে বিয়ে করি। জাকিরকে চার থেকে পাঁচ মাস আগে তালাক দিই। সে এখন আর আমার স্বামী নয়। আমাকে কেউ অপহরণ করে নাই।’

এদিকে, ওই মামলায় শাহ আলমকে গ্রেপ্তারও করা হয়। পরে জামিনে বের হন তিনি। এরপর তিনি পাঁচবার কারাগারে যান। এর মধ্যেই ফাতেমা-শাহ আলম দম্পতির ঘরে দুটি ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। ২০১৪ সালের ২৯ এপ্রিল বরগুনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. হাফিজুর রহমান শাহ আলমসহ আটজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন।

দীর্ঘদিন মামলার শুনানি শেষে ২০২০ সালের ১৪ ডিসেম্বর শাহ আলমকে ২০ বছরের কারাদণ্ডাদেশ ও এক লাখ টাকা অর্থদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়। অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরো এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়। এ ছাড়া বাকি সাত আসামি প্রত্যেককে ১৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডাদেশ ও ২০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ডাদেশ দেন আদালত। অর্থদণ্ড অনাদায়ে তাঁদের আরো তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়।

রায়ে উল্লেখ করা হয়, ফাতেমা বেগম ২২ ধারায় জবাবন্দিতে অপহরণ হননি এবং প্রথম স্বামীকে ডিভোর্স দেওয়া মর্মে যে জবানবন্দি দিয়েছেন, তা বিশ্বাসযোগ্য নয়। ঘটনার পারিপার্শ্বিকতায় মনে হচ্ছে, ডিভোর্স না দিয়েই তিনি শাহ আলমের কাছে চলে গেছেন। আইনের চোখে এটা অপরাধ মনে হওয়ায় আসামিকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে।