ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),ঢাকা প্রতিনিধি,২৩ জানুয়ারি : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আজকে আমার অত্যন্ত আনন্দের দিন। গৃহহীন পরিবারকে ঘর দিতে পারছি, এটি আমার সবচেয়ে আনন্দের। তিনি বলেন, আমার বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মানুষের কথাই ভাবতেন। আমাদের পরিবারের লোকদের চেয়ে তিনি গরিব অসহায় মানুষদের নিয়ে বেশি ভাবতেন এবং কাজ করেছেন। এ গৃহ প্রদান কার্যক্রম তারই শুরু করা।
মুজিববর্ষ উপলক্ষে আজ শনিবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে ঘর হস্তান্তর কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোনো লোক গৃহহারা থাকবে না। মুজিববর্ষে আমাদের লক্ষ্য—একটি মানুষও ঠিকানাবিহীন থাকবে না, গৃহহারা থাকবে না। যতটুকু পারি, হয়তো আমাদের সম্পদের সীমাবদ্ধতা আছে, তাই হয়তো সীমিত আকারে আমরা করে দিচ্ছি। তাও যাই হোক একটা ঠিকানা আমি সব মানুষের জন্য করে দেব।শেখ হাসিনা বলেন, আমার খুব আকাঙ্ক্ষা ছিল, নিজ হাতে আপনাদের জমির দলিল তুলে দেই। কিন্তু সেটা পারলাম না এই করোনাভাইরাসের কারণে।তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, যখন এই মানুষগুলো ঘরে থাকবে, আমার মা-বাবা যারা সারা জীবন এই দেশের জন্য ত্যাগ স্বীকার করেছেন, তাদের আত্মা শান্তি পাবে। লাখো শহীদ রক্ত দিয়ে দেশের স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন, তাদের আত্মা শান্তি পাবে।’আশ্রয়ণ প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত সব স্তরের সরকারি কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ৬৬ হাজার ১৮৯টি ঘর আমরা দিচ্ছি। এই ৬৬ হাজার ঘর এত অল্প সময়ের মধ্যে করা অত সহজ কথা নয়। যারা প্রশাসনে আছেন, সরাসরি আপনারা এই ঘরগুলো তৈরি করেছেন বলেই এটা করা সম্ভব হয়েছে এবং মানসম্মত হয়েছে। এ জন্য আমি সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমাদের সরকারি কর্মচারীরা যেভাবে সবসময় আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করেছেন, এটা অতুলনীয়।প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, এ দেশের কোনো শ্রেণির মানুষ কিন্তু বাদ যাচ্ছে না। বেদে শ্রেণিকে আমরা ঘর করে দিচ্ছি, তাদের বাসস্থানের ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। হিজরাদের আমরা স্বীকৃতি দিয়েছি, তাদেরও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। দলিত শ্রেণি বা হরিজন শ্রেণি, তাদের ভালো মানের ফ্ল্যাট করে দিচ্ছি, চা শ্রমিকদের জন্য করেছি। প্রত্যেক শ্রেণির মানুষের জন্য কাজ করে দিচ্ছি, যেন সবাই মানসম্মতভাবে বাঁচতে পারে।আরও এক লাখ ঘরের কাজ শিগগিরই শুরু হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুজিববর্ষে অনেক কর্মসূচি আমাদের ছিল, সেগুলো করোনার কারণে আমরা করতে পারিনি। করোনা আমাদের জন্য যেমন অভিশাপ নিয়ে এসেছে, তেমনই একদিকে আশীর্বাদও। কারণ আমরা একটি কাজের দিকেই নজর দিতে পেরেছি। আজ এটাই আমাদের বড় উৎসব যে গৃহহীন, ভূমিহীন মানুষকে আমরা ঘর দিতে পারলাম। এর চেয়ে বড় আর কোনো উৎসব বাংলাদেশে হতে পারে না।এ সময় লাইভে যুক্ত ছিল খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলা, চাপাইনবাবগঞ্জ সদর, নীলফামারীর সৈয়দপুর ও হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলা। এ ছাড়া দেশের সব উপজেলা অনলাইনে যুক্ত হয়।উদ্বোধন শেষে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের উপকারভোগীদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে মতবিনিময় করেন সরকারপ্রধান।মুজিববর্ষ উপলক্ষে আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর আওতায় প্রায় নয় লাখ মানুষকে পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে পাকাঘর উপহার দেয়া হচ্ছে। প্রথম পর্যায়ে ঘর পেল প্রায় ৭০ হাজার পরিবার। আগামী মাসে আরও ১ লাখ পরিবার বাড়ি পাবে। অনুষ্ঠানে আশ্রয়ণ প্রকল্পের তৈরি ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়।জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মের ১০০ বছর পূর্তি উপলক্ষে মুজিব শতবর্ষ পালন করছে সরকার। বছরটিকে স্মরণীয় করে রাখতে জাতির পিতার উত্তরসূরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের ভূমি ও গৃহহীন আট লাখ ৮২ হাজার ৩৩টি পরিবারকে ঘর ও জমি দেওয়ার কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। আজ উদ্বোধনের পর পর্যায়ক্রমে এ তালিকার সবাই এই সুবিধা পাবে।উপকারভোগীদের মধ্যে যাদের জমি আছে, তারা শুধু ঘর পাবে। যাদের জমি নেই, তারা ২ শতাংশ জমি পাবে (বন্দোবস্ত)। দুই কক্ষবিশিষ্ট প্রতিটি ঘর তৈরিতে খরচ হচ্ছে এক লাখ ৭১ হাজার টাকা। সরকারের নির্ধারিত একই নকশায় হচ্ছে এসব ঘর। রান্নাঘর, সংযুক্ত টয়লেট থাকছে। টিউবওয়েল ও বিদ্যুৎ সংযোগও দেওয়া হচ্ছে।প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে থাকা আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এই কাজ করছে। খাসজমিতে গুচ্ছ ভিত্তিতে এসব ঘর তৈরি হচ্ছে। কোথাও কোথাও এসব ঘরের নাম দেওয়া হচ্ছে ‘স্বপ্ননীড়’, কোথাও নামকরণ হচ্ছে ‘শতনীড়’, আবার কোথাও ‘মুজিব ভিলেজ’।