বধ্যভূমির বেদনাগাথা (ভিডিও)

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),ঢাকা প্রতিনিধি,১৩ ডিসেম্বর : ভোরের ঘন কুয়াশার পর্দা ভেদ করে, সবুজ ঘাসের মধ্যে পড়ে থাকা লাল গোলাপের মতো তাদের রক্তাক্ত দেহ খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল; পিছমোড়া, মৃত আর আধখোলা চোখে প্রত্যেকে চেয়ে ছিল দিগন্তের দিকে। প্রত্যাশা ছিল এতটুকু- স্বাধীনতা।

দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের সমাপ্তিলগ্নে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী যখন পরাজয় নিশ্চিত টের পায়, তখনই ঘৃণ্য এক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের প্রস্তুতি নেয় তারা। রাজাকার-আলবদর ও তাদের সহযোগীদের সহায়তায় জাতিকে মেধাশূন্য করার উদ্দেশ্যে বুদ্ধিজীবী, শিক্ষাবিদ, চিকিৎসক, সাংবাদিক, লেখক, চলচ্চিত্র পরিচালক ও অন্যান্য পেশাজীবী মানুষদের নির্মমভাবে হত্যার মধ্য দিয়ে পৃথিবীর ইতিহাসে এক কালো অধ্যায় রচনা করে পাকসেনারা।

নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়— ড. গোবিন্দচন্দ্র দেব, শহীদুল্লাহ কায়সার, মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, মুনীর চৌধুরী, ডা. ফজলে রাব্বীসহ অনেককে। মুক্তিযুদ্ধে জয়লাভের কয়েকদিন পর রায়ের বাজারের বর্তমান স্মৃতিসৌধের স্থানটিতে পাওয়া যায় অনেকের ক্ষত-বিক্ষত মরদেহ। শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা জানাতে এই স্থানে নির্মাণ করা হয় বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধ।

১৯৯৩ সালে বাংলাদেশ সরকার এ নৃশংস হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হওয়ার জায়গায় স্মৃতিসৌধটি নির্মাণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। বাংলাদেশ সরকারের গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং ইনস্টিটিউট অব আর্কিটেকটস যৌথভাবে স্মৃতিসৌধের নকশা প্রণয়নের জন্য জাতীয় পর্যায়ে প্রতিযোগিতা আহ্বান করে। ২২টি নকশার মধ্যে স্থপতি ফরিদউদ্দীন আহমেদ ও স্থপতি জামি-আল-শফি প্রণীত নকশাটি নির্বাচিত হয়। গণপূর্ত বিভাগ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব লাভ করে। ১৯৯৬ সালে এর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। এটি নির্মাণ করতে সময় লাগে ৩ বছর।

শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মৃতিতে নির্মিত এই স্মৃতিসৌধ তাৎপর্যবহুল হলেও অবহেলায় অযত্নে দিন দিন জৌলুশ হারাচ্ছে। সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বসিলা-বাবুবাজার রোডের পাশে স্মৃতিসৌধের মূল সীমানা প্রাচীরের বাইরের অংশ প্রায় পুরোটাই একটি উন্মুক্ত ডাস্টবিন। একটু পরপরই দেখা যায় ময়লার স্তূপ। খালি জায়গা পেয়ে মূল ফটকের সামনে বাস পার্কিং করার সুযোগটি হাতছাড়া করেননি বেশ কয়েকজন বাস চালক। এছাড়াও স্মৃতিসৌধের মূল সীমানার ভেতরের বেশ কিছু জায়গায় গড়ে উঠেছে অবৈধ রিক্সা গ্যারেজ। শুধু তাই নয়, প্রথম গেটের ডানপাশ থেকে শেষ মাথা পর্যন্ত বসেছে অস্থায়ী বাজার।