বাড়ছে অর্থপাচার, ধরা পড়ার ভয়ে কালো টাকা বিদেশে বিনিয়োগ (ভিডিও)

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),ঢাকা প্রতিনিধি,০৫ ডিসেম্বর : দেশে বাড়ছে অর্থপাচারের অভিযোগ। গত বছর দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) এ সংক্রান্ত অভিযোগের সংখ্যা ছিলো ১১টি, বর্তমান বছরের নভেম্বরেই এ সংখ্যা ১৯টি। টাকার অঙ্কে ২৫ হাজার কোটি টাকা থেকে ছাড়িয়েছে ৩০ হাজার কোটি টাকায়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কালো টাকা ধরা পড়ার ভয়ে ব্যাংকে না রেখে বিদেশে বিভিন্নখাতে বিনিয়োগ করছেন পাচারকারীরা। এ জন্য ২৭টি প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়হীনতা ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ না থাকাকেই দুষছেন সংশ্লিষ্টরা।

অর্থপাচারে গত বছরের ক্যাসিনো কাণ্ডে জড়িতরাও যেমন রয়েছেন, তেমনি নাম আসছে জনপ্রতিনিধি, ব্যবসায়ীদের। বাদ যাচ্ছেন না সরকারের তৃতীয়, চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরাও।

অর্থপাচার রোধে দুর্নীতি দমন কমিশন, এনবিআর, সিআইডি ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরসহ সরকারের দায়ভুক্ত সংস্থা ২৭ টি। তবে পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে সংস্থাগুলোর নেই তেমন সফলতা। এদের মধ্যে ২০১৯ সালে দুদকের এখতিয়ারভুক্ত অর্থপাচারের অভিযোগে দায়ের করা ১১ টি মামলারই সাজা হয়েছে আদালতে। তবে তাতেও বন্ধ হয়নি অর্থপাচার। বরং ২০২০ সালে অর্থপাচারের অভিযোগ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৯টিতে। পাচার হওয়া অর্থ ২৫ হাজার কোটি টাকা, এখন ৩০ হাজার কোটির ঘরে।

দুদকের এখতিয়ারে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নামে বাংলাদেশ থেকে অর্থপাচার:

বিসমিল্লাহ গ্রুপের কর্ণধার খাজা সোলায়মান ও তার স্ত্রী জনতা ব্যাংক থেকে ১০০ কোটি টাকা, বেসিক ব্যাংকের সাবেক এমডি কাজী ফখরুল ইসলাম ও অন্যরা সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা, জাজ মাল্টিমিডিয়ার কর্ণধার আবদুল আজিজ জনতা ব্যাংক থেকে ৯৯৫ কোটি টাকা, ব্যবসায়ী লুৎফর রহমান বাদল হাজার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ, ঢাকা ট্রেডিংয়ের কর্ণধার টিপু সুলতান বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক থেকে ৩৫০ কোটি টাকা, স্বাস্থ্য অধিদফতরের বহিষ্কৃত কর্মচারী আবজাল ৩শ কোটি টাকা পাচার করেছেন।

এছাড়া, প্রশান্ত কুমার হালদার এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের এমডি ১০ হাজার ২শ কোটি টাকা, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোরশেদ খান ও তার ছেলে ৩২১ কোটি ১৭ লাখ টাকা, এনটেক্সে কর্ণধার ইউনস বাদল সাড়ে ৫ হাজার কোটি, এমএম ভেজিটেবলের চেয়ারম্যান জহির উদ্দীন ১ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা, এবি ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ওয়াহিদুল হক সাবেক ১৬১ কোটি টাকা, ফারমার্স ব্যাংকের চেয়ারম্যান বাবুল চিশতি কয়েকশ কোটি টাকা বিদেশে পাচারও আত্মসাৎ করেছেন।

ভোলার এমপি হাফিজ ইব্রাহিম সিঙ্গাপুরে ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা, লক্ষীপুর-২ আসনের এমপি পাপুল ও সেলিনা দম্পতি ১৪৮ কোটি টাকা, যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা ইসমাঈল চৌধুরী সম্রাট সিঙ্গাপুর মালয়েশিয়ায় ১৯৫ কোটি টাকা, সেলিম প্রধান থাইল্যান্ডের সাত কোম্পানিতে বিনিয়োগ যুক্তরাষ্ট্র ও থাইল্যান্ডে চার ব্যাংকে ২০ কোটি টাকার বেশি লেনদেন পাচার করার অর্থ ৬১ কোটি টাকা, যুবলীগের সাবেক দফতর সম্পাদক কাজী আনিসুর রহমান ৫০ কোটি টাকা, ঠিকাদার জিকে শামিম ১৮০ ব্যাংকে ৩৩৭ কোটি টাকা অর্থপাচারের অভিযোগ রয়েছে।

এছাড়া যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া মালয়েশিয়ায় মাই ব্যাংক ও আরএইচবি ব্যাংকে ২২ লাখ ৭৫ হাজার রিঙ্গিত দুটি এফডিআর এ ৩ লাখ রিঙ্গিত। সিঙ্গাপুরে তার রয়েছে ইলেক্ট্রনিক পণ্য বিপণ প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানের নামে ইউনাইটেড ওভারসিজ ব্যাংকে ৫ লাখ ৫ হাজার সিঙ্গাপুরি ডলার পাচার করেছেন।

দুদকের মামলাগুলোর তথ্য বলছে, বেশিরভাগ কালোটাকাই পাচার হচ্ছে, তবে কয়েকবছর আগে বিদেশি ব্যাংকগুলোতে অর্থ রাখার প্রবণতা থাকলেও বর্তমানে বেড়েছে বাসস্থান ও ব্যবসা বাণিজ্যে বিনিয়োগ। এছাড়া বিদেশে বাণিজ্যিক লেনদেনে ইনভয়েসিংয়ের সময় টাকার অংক হেরফের দেখিয়ে হুন্ডির মাধ্যমে যে অর্থপাচার করে বিপুল অংকের রাজস্ব ফাঁকি দেয়া হয়। এই দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ছে ব্যাংকগুলো। আর এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ না থাকাকেই দুষছেন অর্থনীতিবীদ ও আইনজীবীরা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেন, ব্যাংকিং সিস্টেম. রেভিনিউ সিস্টেম, এক্সপোর্ট, প্রোডাক্ট ক্রয় এই চার পার্টির সম্মতি ছাড়া অর্থপাচার হতে পারে না। আসলেই ব্যাংকিং সেক্টর কারা নিয়ন্ত্রণ করছে?। আমরা তো মনে হচ্ছে বাইরের কোন শক্তি এই সিস্টেমটি নিয়ন্ত্রণ করছে।

এদিকে পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে যুক্তরাজ্য, কানাডা, হংকং, অস্ট্রেলিয়া, সুইজারল্যান্ড, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার সহযোগিতা নিতে কাজ করছে দুদক।

তবে অর্থপাচার রোধ দুদকের একক প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সম্ভব নয় বলে মনে করেন দুদক কমিশনার ড. মোজাম্মেল হক খান। তিনি বলেন, যদি কোন অফিস দুর্নীতিগ্রস্ত হয়, অথবা অর্থপাচারের ঘটনা ঘটে, তাহলে মামলা কিন্তু দুদককেই করতে হয়। অর্থপাচারের ক্ষেত্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত অন্য সংস্থাগুলি যদি নিজ নিজ জায়গা থেকে দায়িত্ব পালন করে, তাহলে অর্থপাচারের রোধে আমাদের সম্মিলিত সাফল্য জাতীয় অর্থনীতির ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে।

সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, অর্থপাচার বন্ধে দায়বদ্ধ সব প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ের পাশাপাশি দ্রুত বিচারের ওপরও জোর দিতে হবে।