লাবণ্যময় চেহারাকে অস্ত্র বানিয়ে প্রবাসীদের নিঃস্ব করছে জান্নাত

SHARE

ছবি- সংগৃহীত

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),ঢাকা প্রতিনিধি,১৭ নভেম্বর : জান্নাতুল ফেরদৌস নামটা শুনতেই মনের ভিতর কেমন একটা পবিত্রতা ছোঁয়ে যায়। তবে এই নাম বহনকারী এক নারী নামের সঙ্গে যায় না এমন কাজকেই নিজের ভোগ বিলাসের মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছেন। নিজেকে নিয়ে গেছেন প্রতারণার অন্য এক দুনিয়ায়।

নিজের লাবণ্যময় চেহারা আর উঠতি বয়সী যৌবনকে হাতিয়ার (অস্ত্র)  বানিয়ে প্রবাসীদের নানা ফাঁদে ফেলা তার বা হাতের কাজ। আবার প্রবাসীদের নাম ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে বিদেশ পাঠানোর নামে বোকা বানিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। এমন নানা অভিযোগ উঠেছে জান্নাতুল ফেরদৌস (২০) নামক এক মেয়ের বিরুদ্ধে।

অভিযোগে পাওয়া তথ্যমতে, বাবা- মো. জাবেদ আলী ও মা – সেলিনা বেগমের বড় মেয়ে জান্নাত। এছাড়াও তাদের রয়েছে ছোট এক মেয়ে ও ছেলে। বর্তমানে ৪নং গেইট, বিবির বাগিচা, যাত্রাবাড়ীতে বসবাস করেন। গ্রামের বাড়ি সুরপুর, নূরমানিরচর, দেবিদ্বার, কুমিল্লা। অনেক আগে থেকেই তারা স্ব-পরিবারে ঢাকাতেই থাকে।  সংসারের অভাব মিটাতে বাবার ইনকামের সঙ্গে নিজে কিছু করার তাগিদ নিয়ে প্রতারণার পথ বেছে নেন বলে জানান কয়েকজন ভুক্তভোগী।

নাম প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক এক ভুক্তভোগী প্রবাসী জানান, ২০১৯ সালের শুরুর দিকে এক জনের মাধ্যমে জান্নাতের সঙ্গে পরিচয় হয় তার। নিজের কৌশল আর অস্ত্র ( উপরে বর্ণিত অস্ত্র) ব্যবহার করে সাধারণ পরিচয় থেকে সম্পর্ক গড়ে তুলে আমার সঙ্গে। সারাক্ষণ আমার সাথে লেগে থাকতো। নানা কৌশলে আমার থেকে টাকা হাতিয়ে নিতে থাকে। এক পর্যায় আমি তাকে বিয়ে করতে বাধ্য হই। বিয়ের পরেই শুরু হয় নানা ব্ল্যাক মেইলিং। মান-সম্মানের ভয়ে সব মুখ বুজে সহ্য করতে থাকি। এর মধ্যে জানতে পারি, টাকার জন্য অনেকের সাথে  সম্পর্ক গড়ে তুলতো। আমার আগে ইমরান নামে এক ছেলের থেকে টাকা পয়সা হাতিয়ে নেয় সে। সব বিষয় নিয়ে কথা উঠালে আমাদের বিয়ের পূর্ব এবং পরবর্তী সম্পর্ক অস্বীকার করে আমার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়।

বগুড়ার এক দরিদ্র পরিবারের ছেলে মোতালেব। তাকে কাতার নিয়ে যাওয়ার নাম করে ১ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে আর যোগাযোগ না করার অভিযোগও পাওয়া গেছে।

মোতালেবের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঢাকায় এক বড় ভাইয়ের বাসায় কাজ করতে আসে। পরে, জান্নাতের সাথে পরিচয় ও আলাপ হয়। কাতার নিয়ে যাওয়ার নাম করে এক লাখ টাকা নেয়। নিজেদের একমাত্র সম্বল গরু বিক্রি করে টাকাটা দেয় মোতালেব। টাকা নেয়ার পরে শুরু করে টালবাহানা।  কি কারনে বিশ্বাস করে জান্নাতকে টাকা দিলে জানতে চাইলে মোতালেব জানায়, তার ( জান্নাত)  বয়ফ্রেন্ড ইমরান কাতার থাকে ঐ কোম্পানিতেই আমারে নিবো কইছিলো। আর তাই বিশ্বাস করছিলাম।

শুধু ছেলেদেরকেই তার ফাঁদে ফেলে নি। প্রতারণার ছড়ি ঘুরিয়েছে অবলা মেয়েদের উপরও। এমন একজন পটুয়াখালীর সুহানা। ঢাকায় এক কাজের মাধ্যমে পরিচয় হয় এই প্রতারক রানীর সাথে। ইতালি পাঠানোর নাম করে প্রথম স্টেপে সাড়ে তিন লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় সে। পরবর্তীতে আর যোগাযোগ রক্ষা না করলে উকিল নোটিশ পাঠায় সুহানা।

এ ব্যাপারে প্রতারণার শিকার সুহানার সাথে কথা বলে জানা যায়, জান্নাত তার ইউরোপ প্রবাসী স্বামীর মাধ্যমে সুহানাকে ইতালি নিয়ে যাবে বলে কথা দেয়। পাসপোর্টসহ যাবতীয় কাগজের দায়িত্ব তার বলে জানায় জান্নাত। শুধু অপেক্ষা করতে বলে আর কোন কাজ নেই। কিন্তু বিদেশ না নিয়ে কালক্ষেপণ করতে থাকায় সন্দেহ হয় সুহানার। পরে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে জান্নাত তার সকল নাম্বার ও বাসার ঠিকানা পরিবর্তন করে ফেলে। এখন আইনি পদক্ষেপ নেয়ার প্রক্রিয়া চলমান আছে বলে জানায় সুহানা।

এ দিকে, জান্নাতের বয়ফ্রেন্ড কাতার প্রবাসী ইমরানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে সে জানায়, ‘আমার সাথে জান্নাতের কোন সম্পর্ক নেই। ও যার কাছে টাকা আছে তার সাথেই সম্পর্ক তৈরি করে। আর আমার নাম করে অনেকের থেকে কাতার নিয়ে আসবে বলে টাকা নিছে কিন্তু এই টাকার ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না। সব আমাদের মতো প্রবাসীদের নাম ভাঙ্গিয়ে এই প্রতারণা চালিয়ে যাচ্ছে।’

এদিকে, জান্নাতের ফোন নাম্বার বন্ধ থাকায় তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।