ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),আন্তর্জাতিক প্রতিনিধি,১১ নভেম্বর : গত সপ্তাহে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জো বাইডেন বিজয়ী হয়েছেন। ফল ঘোষণার কিছুক্ষণের মধ্যেই ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘বন্ধু’ দাবিদার ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নির্বাচিত নতুন প্রেসিডেন্টকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। শুধু তাই নয়, বাইডেনের সঙ্গে ‘ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার’ প্রত্যয়ও ব্যক্ত করেছেন তিনি। তবে রাতের ব্যবধানে ‘বন্ধুর’ প্রতিদ্বন্দ্বীর দিকে এভাবে ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে দিয়ে বাইডেনের কাছ থেকে মোদি ভারতের জন্য কতোটা সুবিধা আদায় করতে পারবেন সেই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে দেশটির সংবাদমাধ্যমগুলোতে।
২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে হিউস্টনের ‘হাউডি মোদি’ অনুষ্ঠানে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে পাশে নিয়ে মোদি স্লোগান দিয়েছিলেন ‘আব কি বার ট্রাম্প সরকার’। ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কোনো ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্টের পক্ষে নির্বাচনী স্লোগান দিয়েছিলেন সেবার। ট্রাম্পও তার নির্বাচনী প্রচারণায় মোদিকে বন্ধু আখ্যা দিয়ে ভারতীয় বংশোদ্ভূতের সহযোগিতা চেয়েছিলেন।
৭ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ঘোষিত ফলাফলে পরাজয় ঘটেছে মোদির বন্ধু ট্রাম্পের। জয়ী হয়েছেন মোদি প্রশাসনের সমালোচক ডেমোক্রেট প্রার্থী জো বাইডেন। স্বাভাবিকভাবেই এখন প্রশ্ন উঠেছে নতুন মার্কিন প্রশাসনের সম্পর্কে কোনো টানপোড়েন দেখা দেবে নাতো?
জো বাইডেনের নির্বাচনী প্রচারণা সম্পর্কিত ওয়েবসাইটে ভারতে বিতর্কিত নাগরিক পঞ্জি এবং নাগরিকত্ব আইনের (সিএএ) সমালোচনা রয়েছে। এছাড়া, কাশ্মীরিদের অধিকার প্রতিষ্ঠার কথাও বলা হয়েছে। বাইডেনের ভাইস প্রেসিডেন্ট আধা-ভারতীয় কমালা হ্যারিসও ভারতের হিন্দু জাতীয়তাবাদী ক্ষমতাসীন দলের অনেক নীতির খোলাখুলি সমালোচনা করেছেন।কাশ্মীর নীতি ও নাগরিকত্ব সংশোধন আইন নিয়ে বাইডেন ও কামালা দুজনের মনোভাবই যথেষ্ট কঠোর। দুজনেই এই দুই বিষয়ে দ্বিধাহীনভাবে সরব।
২০১৯ সালের ৫ আগস্ট জম্মু-কাশ্মীরের দ্বিখণ্ডিকরণ ও সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদ হওয়ার পর হ্যারিস বলেছিলেন, ‘কাশ্মিরিদের মনে করিয়ে দিতে চাই যে এই পৃথিবীতে তারা একাকী নন। আমরা পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছি। প্রয়োজন হলে হস্তক্ষেপ নেওয়া হবে।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতার পালাবদল ঘটলেও ওয়াশিংটন-নয়াদিল্লি সম্পর্কে এর খুব একটা প্রভাব পড়বে না। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের বহুদিনের কৌশলগত সহযোগী ভারত। চীনকে মোকাবিলায় দক্ষিণ এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের একমাত্র অবলম্বন ভারত। এছাড়া ভারতীয় অর্থনীতির অগ্রসরতাও বিবেচনায় রাখতে হয় মার্কিন প্রশাসনকে। নির্বাচনের আগে বাইডেন কিংবা হ্যারিস যা-ই বলে থাকুন না, আঞ্চলিক রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার ও অর্থনৈতিক স্বার্থে তারা ভারতকে ঘাটাতে চাইবেন না। অবশ্য বাইডেন ও নরেন্দ্র মোদির ব্যক্তিগত সম্পর্কের রসায়নে কিছুটা অস্বস্তি থাকতে পারে।
মোদি হয়তো সে বিষয়টি টের পেয়েছেন। তাই পেনসিলভানিয়াতে বাইডেনের বিজয়ের জন্য প্রয়োজনীয় ইলেকটোরলা ভোট নিশ্চিত হওয়ার পরপরই মোদি এক টুইটে বাইডেনকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। ওবামা আমলে ভারতের প্রতি বাইডেনের ইতিবাচক ভূমিকার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি লিখেছেন, ‘ভারত-আমেরিকা সম্পর্ক শক্তিশালী করে তুলতে আপনার অবদান গুরুত্বপূর্ণ ও অমূল্য ছিল। ভারত-মার্কিন সম্পর্ককে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার জন্য আমি আরও একবার আপনার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার অপেক্ষায় রয়েছি।’
ভারতীয় সংবামাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জানিয়েছে, বারাক ওবামার প্রশাসনকালে ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন জো বাইডেন। ওই সময় থেকেই তার সঙ্গে ভারতের দৃঢ় সম্পর্কের সূচনা। সেই ইতিহাস বিবেচনায় নিলে বাইডেনের মেয়াদকাল ভারতের জন্য ভালোই হবে।