ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),বাসাইল প্রতিনিধি,২২ অক্টোবর : টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলায় অবৈধ সম্পর্কের অভিযোগ এনে গ্রাম্য শালিস বসিয়ে এক গৃহবধূর কাছ থেকে জোর করে তালাক নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে অভিযুক্ত যুবককে পৌনে তিন লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
বুধবার (২১ অক্টোবর) বিষয়টি জানাজানি হয়। এর আগে সোমবার (১৯ অক্টোবর) বিকেলে উপজেলার বাদিয়াজান গ্রামে স্থানীয় মাতব্বরদের আয়োজনে শালিস বসানো হয়।
বৈঠকে মাতব্বররা গৃহবধূর সঙ্গে মো. রতন মিয়া (৩৫) নামে এক যুবকের অবৈধ সম্পর্কের অভিযোগ এনে স্বামীকে তালাক দিতে বাধ্য করেন।
তবে ওই গৃহবধূ জানান, তার সঙ্গে রতনের কোনো সম্পর্ক নেই। স্থানীয় মাতব্বর ও তার শ্বশুর বাড়ির লোকজনের যোগসাজশ করে তাকে তালাক দিতে বাধ্য করেছেন।
গৃহবধূর শ্বশুর বাড়ির লোকজন জানান, রোববার (১৮ অক্টোবর) রাত ১২টার দিকে রতন ওই গৃহবধূর ঘরে প্রবেশ করে। পরে তারা টের পেয়ে রতনকে আটক করে। স্থানীয় মাতব্বরদের জানানো হলে তারা পরদিন সকালে শালিসের আয়োজন করেন। শালিসে গৃহবধূকে তার কাতার প্রবাসী স্বামীকে তালাক দেওয়া ও দেনমোহরের তিন লাখ টাকা দাবি করা যাবে না বলে সিদ্ধান্ত হয়। একই সঙ্গে রতনকে দুই লাখ ৮০ হাজার টাকা জারিমানা করা হয়।
ওই গৃহবধূ বলেন, রতন মিয়ার সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি থ্রি-পিস কেনার পাওনা এক হাজার টাকা নেওয়ার জন্য বাসায় আসেন। ঘরের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা রতন মিয়াকে টাকা দেওয়ার পর শ্বশুর বাড়ির লোকজন তাকে ধাক্কা দিয়ে ঘরে ঢুকিয়ে বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে দেন। পরে ডাকচিৎকার করতে থাকেন।
তিনি বলেন, ‘শালিসে বাধ্য হয়ে কাতার প্রবাসী স্বামীকে তিন তালাক দেই। একই সঙ্গে দেনমোহনের টাকার দাবি নেই বলে স্বাক্ষর করি।’তিনি অভিযোগ করেন, ‘আমার স্বামীকে তালাক দেওয়ানোর জন্যই শ্বশুর বাড়ির লোকজন অবৈধ সম্পর্কের অভিযোগ এনে শালিস বৈঠকের আয়োজন করেন।’
রতন মিয়ার বাড়ি বাসাইল উপজেলার ফুলকি ইউনিয়নের বালিয়া গ্রামে। তার শ্বশুর বাড়ি একই উপজেলার কাউলজানি ইউনিয়নের বাদিয়াজান গ্রামে। সেই সূত্র ধরে সম্প্রতি ওই গৃহবধূর কাছে বাকিতে থ্রি-পিস বিক্রি করেন তিনি।
রতন মিয়া জানান, তিনি অনলাইনে থ্রি-পিসের ব্যবসা করেন। ওই গৃহবধূ তার কাছ থেকে সম্প্রতি একটি থ্রি-পিস কেনেন। রোববার সকালে স্থানীয় বাজারে গৃহবধূর কাছে তিনি পাওনা টাকা চান। এ সময় কাছে টাকা না থাকায় সন্ধ্যায় বাসায় যেতে বলেন। এ কারণে তিনি রাত ৮টার দিকে ওই গৃহবধূর বাসায় যান। টাকা নেওয়ার পরপরই গৃহবধূর শ্বশুর বাড়ির লোকজন অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগ এনে তাকে মারধর করেন। পরদিন শালিসে তাকে দুই লাখ ৮০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
শালিসে নেতৃত্ব দেন ফুলকি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য জামাল মিয়া। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ইউপি সদস্য ইসমাইল হোসেন ও মনিরুজ্জামান মনিরসহ স্থানীয় মাতব্বররা।
শালিসে উপস্থিত থাকা বর্তমান ইউপি সদস্য ইসমাইল হোসেন রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘গ্রাম্যভাবে বিষয়টির মীমাংসার চেষ্টা করা হয়েছে। শালিসের সিদ্ধান্তে গৃহবধূ তার স্বামীকে তালাক দিয়েছেন এবং রতন মিয়াকে জরিমানা করা হয়েছে।’
বাসাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হারুনুর রশীদ বলেন, ‘এ ঘটনায় মঙ্গলবার (২০ অক্টোবর) রাতে রতনের বাবা মোশারফ হোসেন সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। জড়িতদের গ্রেপ্তার ও জোর করে স্বাক্ষর নেওয়া স্ট্যাম্পটি উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।’