পুরো বাস ভাড়া নিয়ে ডাকাতি করতেন তারা

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),ঢাকা প্রতিনিধি,১৬ অক্টোবর : ডাকাতি করার উদ্দেশ্যেই বাস ভাড়া করে ডাকাত দল। যাত্রীবেশে ডাকাত দল রাস্তায় সাধারণ যাত্রীও তোলে। হোটেল ব্যবসায়ী লস্কর রবিউল ইসলামও যাত্রীবাহী বাস ভেবেই সাভারের নবীনগর থেকে উঠেছিলেন তাতে। বুঝতেই পারেননি যে, ডাকাত দলের ২০-২২ সদস্যই যাত্রী সেজে আগে থেকেই সিটে বসে আছে।

বাসটি খানিকটা পথ অতিক্রম করতেই ডাকাতরা রবিউলের কাছে থাকা টাকা-পয়সা লুট করার চেষ্টা করে। তিনি তাদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন। তখন তাকে খুন করে বলিয়ারপুর যমুনা ন্যাচারাল পার্কের পাশে লাশ ফেলে দেয় ডাকাতরা। গত ৫ অক্টোবর রাতে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে।

বৃহস্পতিবার পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ধানমন্ডির সদর দপ্তরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।

পিবিআই জানায়, রবিডল হত্যায় ডাকাত দলের প্রধান বসির মোল্লাসহ নয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার অন্য আটজন হলো- আনোয়ার হোসেন, মো. নাজমুল, শেখ হাফিজ, আমির হোসেন, আল আমিন, মো. জুয়েল, মো. নঈম ও তপন

সংবাদ সম্মেলনে পিবিআইপ্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার বলেন, বসির ২০ বছর ধরে ডাকাতি করছে। আশুলিয়ায় একটি ডাকাতি মামলায় ২৬ মাস কারাগারে ছিল সে। তিন মাস আগে ছাড়া পেয়ে বাস ভাড়া নিয়ে ডাকাতি করে আসছিল সে ও তার সহযোগীরা। কয়েক দিনের জন্য পুরো বাস ভাড়া নিয়ে যাত্রীবেশে এভাবে ডাকাতি করত তারা। বাসে ২০-২২ জন ডাকাত যাত্রীবেশে থাকায় নিঃসংশয়ে সাধারণ যাত্রীরাও উঠতেন। এভাবে একসময় সুযোগ বুঝে তাদের কাছ থেকে টাকা-পয়সা ও মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করে যাত্রীদের রাস্তায় ফেলে দিত ডাকাতরা।

রবিউলকে হত্যা করা হয়েছে ঢাকা-টাঙ্গাইল রুটের নিরালা পরিবহনের একটি বাসে। গত ৪ অক্টোবর সেটি তিনদিনের জন্য ভাড়া নিয়েছিল বসির। এরপর সেটির নামলিপির ওপর ঢাকা-দৌলতদিয়া-খুলনা স্টিকার লাগিয়ে ৪ অক্টোবর রাতে ঢাকা থেকে রওনা হয় ডাকাতরা। গরু ব্যবসায়ীসহ কয়েকজনকে যাত্রী হিসেবে তোলার পর তাদের টাকা-পয়সা লুট করে দৌলতদিয়ায় অবস্থান করে বাসটি।

পরদিন ৫ অক্টোবর দৌলতদিয়া থেকে ফেরার পথে রাত ১০টার দিকে লস্কর রবিউলকে নবীনগর থেকে বাসে তুলে ডাকাতির চেষ্টা করে ডাকাতরা। বাধা পেয়ে কয়েকজন কাপড় দিয়ে রবিউলের মুখ বেঁধে ফেলে। এরপরও রবিউল নিজেকে রক্ষার চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে হুইল রেঞ্জ দিয়ে রবিউলের মাথায় আঘাত করে ডাকাত দলের প্রধান বসির। এতে রবিউলের সেখানেই মৃত্যু হয়। পরে বলিয়ারপুর যমুনা ন্যাচারাল পার্কের পাশে বাস থেকে রবিউলের লাশ ফেলে চলে যায় তারা।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, রবিউলের বাসা রাজধানীর মিরপুরে। বাসায় ফিরতে দেরি হওয়ায় রাত ১২টার দিকে রবিউলের মা তার মোবাইল ফোনে কল করেন। ডাকাতদের একজন ফোন রিসিভ করে জানান, ফোনের মালিক খুন হয়েছে। লাশ হেমায়েতপুরে রাখা হবে জানিয়ে ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে মোবাইল ফোনটি ভেঙে ড্রেনে ফেলে দেয় ডাকাতরা।

৬ অক্টোবর রবিউলের লাশ অজ্ঞাতপরিচয় হিসেবে উদ্ধার করে ঢাকায় শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায় পুলিশ। মর্গে রবিউলের স্বজনরা লাশ শনাক্ত করেন। এ ঘটনায় মামলা হয়। পিবিআই ছায়া তদন্ত শুরু করে। মঙ্গলবার বসিরকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী বুধবার সাভার, ধামরাই ও ডেমরা থেকে আরও আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। অন্য আসামিদেরও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।