ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),ষ্টাফ রিপোর্টার,২৭ সেপ্টেম্বর : সাহেদ, পাপিয়া, সাবরিনা আর আরিফুল। দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচিত নাম। করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা নিয়ে প্রতারণা এবং হোটেলে অনৈতিক কারবার খুলে এঁদের কেউ মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছেন, কেউ বা কেড়েছেন মানুষের সম্ভ্রম। একসময় সমাজে দাপুটে চলাচল ছিল এঁদের। তবে প্রতারণা ও অনৈতিক কাজের জন্য অভিযুক্ত হয়ে এ চারজনই গ্রেপ্তারের পর বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। আর চারজনের বিরুদ্ধেই আদালতে চলছে বিচারকাজ। যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়া, রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান সাহেদ করিম, জেকেজি হেলথকেয়ারের চেয়ারম্যান ও জাতীয় হৃদেরাগ ইনস্টিটিউটের বরখাস্ত চিকিৎসক ডা. সাবরিনা শারমিন ওরফে সাবরিনা আরিফ চৌধুরী এবং তাঁর স্বামী আরিফুল হক চৌধুরীর বিরুদ্ধে দ্রুত এগিয়ে চলছে এই বিচারকাজ।
তথ্যানুযায়ী, সাহেদ করিমের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত ৭০টি মামলা, পাপিয়ার বিরুদ্ধে চারটি, ডা. সাবরিনার বিরুদ্ধে দুটি এবং আরিফুল হক চৌধুরীর বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়েছে। এসব মামলার মধ্যে সাহেদের বিরুদ্ধে একটি মামলার (অস্ত্র) রায় ঘোষণার জন্য আগামীকাল সোমবার দিন ধার্য রয়েছে। পাপিয়ার বিরুদ্ধে একটি মামলায় (অস্ত্র) সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন চলছে। এটির রায়ও তাড়াতাড়ি ঘোষণা করা হবে। আর ডা. সাবরিনা ও তাঁর স্বামীর বিরুদ্ধে করা মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়েছে। এই চারজনের বিরুদ্ধে করা সব মামলাই চলছে ঢাকার বিভিন্ন আদালতে।
এই চারজনের বিরুদ্ধে করা মামলার রায় দ্রুত ঘোষণার বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আব্দুল্লাহ আবু ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি)কে বলেন, ‘সাহেদ করিম, পাপিয়া, ডা. সাবরিনাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গুরুতর। তাঁদের বিরুদ্ধে যেসব মামলা করা হয়েছে সেগুলো অত্যন্ত স্পর্শকাতর। তাই এসব মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি হওয়া প্রয়োজন। সমাজে এমন একটি বার্তা দেওয়া প্রয়োজন—এ ধরনের জঘন্য অপরাধ করে মামলাজটের দোহাই দিয়ে বছরের পর বছর মামলা ফেলে রাখা যাবে না। এ কারণে তাঁদের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’
সাহেদ করিমের অস্ত্র মামলার রায় আগামীকাল
রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান সাহেদ করিমের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ পুরনো। তবে তিনি ছিলেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। করোনাভাইরাস সংক্রমণের প্রেক্ষাপটে করোনা রোগীর চিকিৎসা নিয়েও তিনি করেছেন চরম প্রতারণা। মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছেন। রিজেন্ট হাসপাতালে করোনা পরীক্ষা না করেই দিতেন রিপোর্ট। এর মাধ্যমে রাষ্ট্রের তহবিল থেকে হাতিয়ে নেন কোটি কোটি টাকা। তাঁর এই প্রতারণার খবর প্রকাশ হলে দেশ ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করেন তিনি। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। গত ১৫ জুলাই র্যাব তাঁকে সাতক্ষীরার সীমান্ত থেকে গ্রেপ্তার করে। এ সময় তাঁর কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় অস্ত্র। ঢাকা থেকেও উদ্ধার করা হয় অস্ত্র, জাল টাকা, মাদকদ্রব্য। ঢাকার উত্তরা থেকে অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় উত্তরা পশ্চিম থানায় মামলা হয় গত ১৯ জুলাই। এ মামলায় দ্রুত তদন্ত শেষে ৩০ জুলাই অভিযোগপত্র দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা। এরপর মামলাটি বিচারের জন্য ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে পাঠানো হলে গত ২৭ আগস্ট অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে সাহেদের বিচার শুরু হয়। কয়েক দিনের মাথায় গত ১০ সেপ্টেম্বর শুরু হয় সাক্ষ্যগ্রহণ। মাত্র পাঁচ দিনের মধ্যে ১৫ সেপ্টেম্বর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়। রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয় ২০ সেপ্টেম্বর। এরপর ২৮ সেপ্টেম্বর রায়ের দিন ধার্য করা হয়।
পাপিয়ার বিরুদ্ধে অস্ত্র মামলায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপন চলছে
যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে অল্প বয়সী তরুণীদের নামকরা হোটেলে আটকে রেখে অনৈতিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হতে বাধ্য করা। গত ২২ ফেব্রুয়ারি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তাঁকে গ্রেপ্তারের পর তাঁর বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ উঠতে থাকে। তাঁর বিতর্কিত কর্মকাণ্ড সংবাদমাধ্যমে প্রকাশের পর দেশজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। এরই ধারাবাহিকতায় তাঁর বিরুদ্ধে অস্ত্র, মাদক, অর্থপাচার, জাল টাকা রাখার অভিযোগে বেশ কয়েকটি মামলা হয়। এসব মামলার মধ্যে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর শেরেবাংলানগর থানায় করা অস্ত্র আইনের মামলায় ২৯ জুন অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। এরপর মামলাটি বিচারের জন্য পাঠানো হয় ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে। এই আদালতে গত ২৫ আগস্ট পাপিয়া ও তাঁর স্বামী মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরী ওরফে মতি সুমনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে বিচার শুরু হয়। মামলাটিতে এরই মধ্যে সাক্ষ্যগ্রহণ পর্ব শেষ হয়েছে। এখন চলছে আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন। আজ রবিবার এ মামলায় পাপিয়ার পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য দিন ধার্য রয়েছে। আজই শেষ হতে পারে এ পর্ব। যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হলেই রায়ের দিন ধার্য করবেন আদালত।
ডা. সাবরিনা ও তাঁর স্বামী আরিফের বিরুদ্ধে মামলায় চলছে সাক্ষ্যগ্রহণ
জেকেজির চেয়ারম্যান ডা. সাবরিনা আরিফ চৌধুরী ওরফে সাবরিনা শারমিন নিজে চিকিৎসক হয়েও প্রতারণার আশ্রয় নেন রোগীদের সঙ্গে। এই প্রতারণার সঙ্গী তাঁর স্বামী আরিফুল হক চৌধুরী। স্বামী-স্ত্রী মিলে জেকেজি হেলথকেয়ার থেকে ১৫ হাজার ৪৬০ জনকে দেন কারোনার ভুয়া রিপোর্ট। এই প্রতারণা ধরা পড়ার পর তাঁদের বিরুদ্ধে প্রতারণা ও জালিয়াতির অভিযোগে গত ২৩ জুন তেজগাঁও থানায় মামলা হয়। যদিও সাবরিনাকে গ্রেপ্তার করা হয় ১২ জুলাই। এরপর তদন্ত শেষে তাঁদের বিরুদ্ধে গত ৫ আগস্ট দেওয়া হয় অভিযোগপত্র। ২০ আগস্ট অভিযোগ গঠনের পর ২৭ আগস্ট থেকে শুরু হয় তাঁদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ। এ পর্যন্ত ৪২ জন সাক্ষীর মধ্যে চারজনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। আগামীকাল সোমবার পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য রয়েছে। সাবরিনার বিরুদ্ধে দুটি জাতীয় পরিচয়পত্র নেওয়ার অভিযোগে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) করা মামলাটিও তদন্তাধীন।