রবিউল ইসলাম
ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),আদালত প্রতিনিধি,২১ সেপ্টেম্বর : বরখাস্ত হওয়ার আক্রোশ থেকেই ঘোড়াঘাট উপজেলা ইউএনও ওয়াহিদা খানমের ওপর হামলা করেছেন বলে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন মালী রবিউল ইসলাম। রিমান্ড শেষে গতকাল আদালতে হাজির করা হলে জবানবন্দিতে দায় স্বীকার করেন রবিউল। জবানবন্দি শেষে রবিউলকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয় আদালত। এর আগে তাকে দুই দফায় ৯ দিনের রিমান্ড নেওয়া হয়।
রবিউলকে দ্বিতীয় দফায় তিন দিনের রিমান্ড শেষে গতকাল সকাল ১০টায় কড়া পুলিশি পাহারায় আদালতে আনা হয়। পরে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ইসমাইল হোসেনের আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদানের জন্য ডিবি পুলিশের ওসি ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ইমাম জাফর আবেদন করেন। জবানবন্দি শেষে ইমাম জাফর জানান, আসামি রবিউল ইসলামকে সরাসরি ম্যাজিস্ট্রেটের খাস কামরায় নিয়ে যাওয়া হয়। জবানবন্দি প্রদানের সময় দায় স্বীকার করেন রবিউল। তিনি বলেন, পরিকল্পনা অনুযায়ী তিনি একাই এ হামলা চালিয়েছেন। জবানবন্দি শেষে রবিউলকে ডিবির সহায়তায় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। জিজ্ঞাসাবাদে রবিউল জানিয়েছেন এমন দাবি করে পুলিশ বলে, এ ঘটনার একমাত্র পরিকল্পনাকারী ও হামলাকারী রবিউল নিজেই। রবিউলের বক্তব্য, অন্যায়ভাবে চুরির অভিযোগ তার ওপর চাপিয়ে দিয়ে ইউএনও ওয়াহিদা খানম জানুয়ারিতে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেন। পরে ১ আগস্ট দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক মালীর চাকরি থেকে রবিউলকে বরখাস্ত করেন। এই ক্ষোভ ও অভিমানে রবিউল পরিকল্পনা করেন, ইউএনও ওয়াহিদা খানমকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে তার মনের যন্ত্রণা নিবারণ করেন। এর আগে ৯ সেপ্টেম্বর প্রযুক্তির মাধ্যমে রবিউলকে নিজ বাড়ি থেকে আটক করে পুলিশ। দিনাজপুরের কোর্ট পরিদর্শক ইসরাইল হোসেন জানান, গতকাল সকাল ১০টায় এই চাঞ্চল্যকর মামলার আসামি ঘোড়াঘাট উপজেলা পরিষদের বরখাস্ত মালী রবিউলকে কড়া পুলিশ পাহারায় আদালতে হাজির করা হয়। রবিউল জবানবন্দি দিতে সম্মত হলে বিচারক ইসমাইল হোসেন তার খাস কামরায় জবানবন্দি গ্রহণ করেন। উল্লেখ্য, ২ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাতে সরকারি বাসভবনে প্রবেশ করে ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াহিদা খানম ও তার বাবা মুক্তিযোদ্ধা ওমর আলী শেখকে নির্মমভাবে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে জখম করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় ইউএনও ওয়াহিদা খানমের বড় ভাই শেখ ফরিদ উদ্দীন বাদী হয়ে ৩ সেপ্টেম্বর রাতে ঘোড়াঘাট থানায় মামলা করেন। পরে মামলাটি দিনাজপুর ডিবি পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। সাময়িক বরখাস্ত চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী (মালী) রবিউল ইসলাম ছাড়াও ইতিমধ্যে আরও চারজনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এরা হলেন ঘোড়াঘাটের বহিষ্কৃত যুবলীগ সদস্য আসাদুল হক, রংমিস্ত্রি নবীরুল ইসলাম, সান্টু কুমার দাস, ইউএনওর বাসভবনের নৈশপ্রহরী নাদিম হোসেন পলাশ। তদন্তকালে রবিউলের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী হামলায় ব্যবহৃত হাতুড়ি, লাঠি, মই, চাবিসহ বিভিন্ন আলামত উদ্ধার করেছে পুলিশ। একই সঙ্গে তার পরনের প্যান্ট, হাতের ছাপসহ মোবাইলের লোকেশন বিষয়গুলো আলামত হিসেবে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। এসব আলামত বিচারকাজে সহায়ক হবে বলে জানায় পুলিশ।