মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলায় রিমান্ডে থাকা সাবেক ওসি প্রদীপসহ ৩ আসামিকে নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে র্যাবের তদন্তকারী দল। ছবি: ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি)
ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),বিশেষ প্রতিনিধি,২১ আগষ্ট : সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলায় রিমান্ডে থাকা টেকনাফের আলোচিত ও সমালোচিত সাবেক ওসি প্রদীপসহ ৩ আসামিকে নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও পর্যবেক্ষণ করেছেন র্যাবের তদন্তকারী দল।
তদন্তকারী দল প্রথমে নন্দ দুলাল রক্ষিত, পরে লিয়াকত আলী এবং শেষে প্রদীপ কুমার দাশের কাছ থেকে ৩১ জুলাই রাতে সংগঠিত ঘটনার বর্ণনা শুনেন। তদন্তকারী দল ওইদিন ঘটে যাওয়া নৃশংস এই ঘটনার প্রকৃত ক্লু বের করার চেষ্টা করেন।
শুক্রবার দুপুরে র্যাবের টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছার পূর্বেই টেকনাফের বাহারছড়া এপিবিএন চেকপোস্টের সেই ঘটনাস্থলে ৩১ জুলাই রাতে ঘটনার দিন যেরকম ছিল, সেভাবেই সাজানো হয়েছিল চেকপোস্ট অঙ্গন। ঘটনার সময় মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদের ব্যবহৃত গাড়িটির মতো একটি প্রাইভেট কার রাখা হয়েছিল ঘটনাস্থলে। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মাত্র দুই মিনিটের মধ্যেই সেদিন ঘটনাটি কিভাবে সংঘটিত হয়েছিল- তা হুবহু দেখিয়েছেন হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত আসামিরা। তাদের ঘটনার বিবরণ খুব সূক্ষভাবে প্রত্যক্ষ করেছেন র্যাবের মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তাসহ উপস্থিত উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
এদিকে টেকনাফের বরখাস্তকৃত ওসি বাহারছড়ার সেই চেকপোস্টে আসছেন-এমন খবরে বিভিন্ন বয়সী মানুষ ঘটনাস্থলের আশপাশে ভিড় জমান। এসময় সাংবাদিকরা এগিয়ে গেলে তারা প্রদীপের ফাঁসি চাই, লিয়াকতের ফাঁসি চাই বলে শ্লোগান দেন। উপস্থিত এলাকাবাসী তখন ওসি প্রদীপ ও ইন্সপেক্টর লিয়াকতসহ মেজর সিনহা হত্যায় দোষীদের বিচার দাবি করেন।
মাত্র এক মিনিটে কিভাবে সিনহা হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছিল, মূলত তারই একটি মহড়া এবং নানাভাবে বিশ্লেষণ চলে ঘটনাস্থলে। এর মাধ্যমে র্যাবের মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তারা ঘটনার প্রতিটি সেকেণ্ডকে নিয়ে বিশ্লেষণ করে দেখেন।
সূত্র জানায়, মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) র্যাব-১৫ এর সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম আসামিদের কাছ থেকে ঘটনার প্রকৃত চিত্র সম্পর্কে তথ্য নেন। রিমান্ডে থাকা বরখাস্তকৃত টেকনাফ মডেল থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, ইন্সপেক্টর লিয়াকত আলী ও এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিত ওইদিনের ঘটনার বর্ণনা দেন র্যাবকে। কখন কে কী করেছিলেন? ৩০ মিনিট ধরে ঘটনার বর্ণনা দেন নন্দদুলাল।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি বিশ্বস্ত সূত্র নিশ্চিত করে যে, বরখাস্ত ইন্সপেক্টর লিয়াকতের বক্তব্য মতে, ঘটনার দিন রাতে ৪০ সেকেন্ড অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহার শরীরে ৪টি গুলি করেন লিয়াকত। তার মধ্যে তিনটি গুলি তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে লাগলেও একটি গুলি তার মিসফায়ার হয়। ৩টি গুলি শরীরে ঢুকে আবার বের হয়ে যায়। যে কারণে সিনহার শরীরে ৬টি ছিদ্র হয়। আর গুলির কোষা লেগে আঘাত হয় সিনহার গলায় ও বিভিন্ন স্থানে।
র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) কর্নেল তোফায়েল মোস্তফা সরওয়ার উপস্থিত সাংবাদিকদের জানান, গত ৩১ জুলাই রাতে কী ঘটেছিল তা সরেজমিনে দেখার জন্য এই তিন আসামিকে নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। ঘটনা বিশ্লেষণ করে র্যাব দেখেছে সেইদিন এক থেকে দুই মিনিটের মধ্যে এই নৃশংস ঘটনাটি সংঘটিত হয়েছে। আসলে কী কারণে এমন ঘটনা ঘটল তা খুঁজে বের করতে র্যাবের এ প্রচেষ্টা বলে জানান তিনি।
এসময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার মুখপাত্র লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ, গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান সারওয়ার বিন কাশেম, র্যাব-১৫ অধিনায়ক উইং কমান্ডার আজিম আহমেদ,উপাধিনায়ক মেজর মেহেদী হাসান, সিনহা হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সিনিয়র এসপি খায়রুল ইসলামের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল। বিকাল ৩টার দিকে র্যাবের তদন্তকারী দল আসামিদের নিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।