আমি এখনও প্রাণের ভয়ে শঙ্কিত: জজ মিয়া (ভিডিও)

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),রাজনৈতিক প্রতিনিধি,২১ আগষ্ট : ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ইতিহাসের ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা পরবর্তী সময়ের অন্যতম আলোচিত চরিত্র জজ মিয়া। তাকে ব্যবহার করে পুরো ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে চেয়েছিল তৎকালীন জামায়াত-জোট সরকার। ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে জজ মিয়ার কাছ থেকে তারা স্বীকারোক্তি আদায় করেছিল। কিন্তু পরে মামলার অধিকতর তদন্তে বেরিয়ে আসে প্রকৃত ঘটনা। ইতিহাসের নৃশংসতম সেই হামলার ১৬ বছর পর কেমন আছেন জজ মিয়া? সত্য উন্মোচনে ভীতি কাটিয়ে পরবর্তী সময়ে তার বক্তব্যই-বা কী ছিল? ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি)এ প্রতিবেদকের সঙ্গে তার কথোপকথনে উঠে এসেছে সেই ঘটনার বিস্তারিত।

গত বৃহস্পতিবার (২০ আগস্ট) কদমতলি থানা এলাকায় কথা হয় জজ মিয়ার সঙ্গে। বর্তমানে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন। জজ মিয়া বলেন, ‘মামলার ঘানি টানতে গিয়ে বাড়ির জমিসহ সব কিছু বিক্রি করতে হয়েছে। অনেকে আশ্বাস দিয়েও দেখা করেননি। আর যারা জোর করে আমার কাছ থেকে জবানবন্দি নিয়েছিল, এখন তাদের অনেকেই জামিনে আছেন। তারাও প্রভাবশালী। তাই বিভিন্ন কারণে আমি এখনও প্রাণের ভয়ে শঙ্কিত।’

২১ আগস্ট বিভীষিকাময় সেই ঘটনার ৯ মাস পর গ্রেপ্তার হন জজ মিয়া। তৎকালীন প্রশাসন তাকে ব্যবহার করে এই ঘটনা ভিন্নখাতে নেওয়ার জন্য তৎপর হয়ে ওঠে। গ্রেপ্তার হওয়া প্রসঙ্গে জজ মিয়া বলেন, ‘ঘটনার প্রায় ৯ মাস পর একদিন বিকেলে আমি নোয়াখালীর সেনবাগের ব্রিকর গ্রামের রাজা মিয়ার দোকানে বসে চা খাচ্ছিলাম। এমন সময় সেনবাগ থানা পুলিশ আমাকে গ্রেপ্তার করে। পরে তারা আমাকে সিআইডি’র হাতে তুলে দেয়। আমাকে তারা নিয়ে ক্রসফায়ারের ভয় দেখানো থেকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শুরু করে। আমি মানসিকভাবে ভেঙে পড়ি। তারা আমাকে ঠিকমতো খেতেও দিতো না। এসবের মূলে ছিল ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেওয়ার জন্য- ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা আমি করেছি।’

কিন্তু পুলিশ আপনাকেই গ্রেপ্তার করলো কেন? আপনার নামে আগে থেকেই কোনো মামলা ছিল কিনা? প্রশ্নের উত্তরে জজ মিয়া ভাগ্যের দোষ দিয়ে বলেন, ‘১৯৯৮ সাল থেকে আমি গুলিস্তানে সিডির ব্যবসা করতাম। থাকতাম টিকাটুলির একটি মেসে। একদিন ডিবি পুলিশ এসে অভিযান পরিচালনা করে। মেসের ভেতর থেকে অস্ত্র-বোমা পায়। আমি মেসে থাকায় সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করে নিয়ে যায় এবং আসামি করে। কিন্তু এক বছরের মধ্যেই এ ঘটনায় সংশ্লিষ্টতা না পাওয়ায় আমাকে অস্ত্র মামলায় বেকসুর খালাস দেন আদালত। একইভাবে বিস্ফোরক মামলাও শেষ হয়ে যাবে, আদালতে আসার দরকার নেই জানান আমার আইনজীবী। ফলে আমি আর আদালতে যাইনি। তখন আদালতে না যাওয়ায় মামলার সাজা হয়ে যায়। মূলত এই মামলায় আমাকে সেদিন পুলিশ গ্রেপ্তার করে।’

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার সংশ্লিষ্টতা নিয়ে প্রথমে মিথ্যা জবানবন্দির বিষয়ে জজ মিয়া বলেন, ‘জীবন বাঁচাতে আমি তখন মিথ্যা জবানবন্দি দিয়েছিলাম। আমাকে ওরা বলেছিল, রাজি না হলে মেরে ফেলবে। ভেবেছিলাম ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে গিয়ে জোর করে আমার জবানবন্দি নেওয়া হচ্ছে- সেকথা বলবো। কিন্তু তা হয়নি। কারণ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মুন্সী আতিক ও আব্দুর রশিদ সেখানে উপস্থিত ছিলেন।’

আক্ষেপ করে জজ মিয়া বলেন, ‘জবানবন্দির কারণে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরসহ আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হন। এই জবানবন্দিই এখন আমার জন্য কাল হয়েছে। বলা হচ্ছে আমি বিএনপির লোক। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের এ কারণে ফাঁসিয়েছি। কারো কাছে গেলে এই অপবাদে দেখাও করতে পারি না। যদি বিএনপির লোকই হতাম তাহলে জবানবন্দি আমি কেন প্রত্যাহার করলাম? আমার পরবর্তী জবানবন্দি প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসতে সহায়ক হয়েছে।’