বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যে গ্রেপ্তার মানবপাচারকারী চক্রের হোতা

SHARE

গ্রেপ্তার আমির হোসেন ওরফে সিরাজ উদ্দিন- সংগৃহীত

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),ঢাকা প্রতিনিধি,১৯ আগষ্ট : আন্তর্জাতিক মানবপাচারকারী চক্রের অন্যতম হোতা আমির হোসেন ওরফে সিরাজ উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। বিদেশি একটি গোয়েন্দা সংস্থার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

সোমবার নরসিংদীর মাধবদী থেকে আমিরকে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে মিলেছে চাঞ্চল্যকর নানা তথ্য। সে ও তার সহযোগীরা জালিয়াতির মাধ্যমে কুয়েতের ভিসা নিয়ে গত তিন বছরে অন্তত ৯০০ মানুষকে সেদেশে পাচার করেছে। ভালো বেতনে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে প্রত্যেকের কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে গড়ে ছয় লাখ টাকা। এভাবে তারা হাতিয়েছে ৫৪ কোটি টাকারও বেশি।

সিআইডির জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার জিসানুল হক জানান, ২০১৭ সাল থেকে চক্রটি বাংলাদেশ থেকে মানবপাচার শুরু করে। সিরাজ প্রায় ২০ বছর কুয়েতে ছিল। এরমধ্যে সে আন্তর্জাতিক মানবপাচারী চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। তবে পরে সিরাজসহ চক্রের তিনজন বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। অন্য দু’জনকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

সিআইডি সূত্র জানায়, তিন বাংলাদেশিসহ মোট চারজন দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ থেকে মানবপাচার করছে বলে একটি বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে তথ্য উঠে আসে। ওই গোয়েন্দা সংস্থার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তারা আমির হোসেনকে গ্রেপ্তার করে।

জানা যায়, এই চক্রের সদস্যরা উচ্চ বেতনের প্রলোভন দেখিয়ে বিপুল পরিমাণ মানুষকে কুয়েতে পাচার করে। পাচারের পর ভুক্তভোগীদের জীবনে নেমে আসে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ। চাকরি দেওয়ার কথা বলে নিয়ে গেলেও কোনো কাজ তারা পাননি। খাবার ও বাসস্থান সংকটের ফলে তাদের উদ্বাস্তু হয়ে কুয়েতের পথে-পথে ঘুরে বেড়াতে হয়। এমনকি দেশটির কারাগারে ভুক্তভোগীদের বন্দি থাকারও সুযোগ নেয় চক্রটি। এর আগে জালিয়াতির মাধ্যমে কুয়েতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ভিসাগুলো নেওয়া হয় বলেও জানায় সংস্থাটি।

সিআইডির কর্মকর্তারা জানান, ভুক্তভোগীদের কয়েকজন কুয়েতের সরকারি এজেন্সি ও জনশক্তি কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করলে তারা বিষয়টির তদন্ত শুরু করে। তদন্তে চক্রটির অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় কুয়েতের আদালতে কয়েকটি মামলা হয়। পরে এ চক্রের চার সদস্যের মধ্যে একজন কুয়েতি নাগরিক ও সিরাজসহ তিন বাংলাদেশীর বিরুদ্ধে দেশটির আদালত অভিযোগ আমলে নেয়। শেষে তিন বাংলাদেশির তিন বছর করে কারাণ্ড ও অর্থদণ্ডসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেন দেশটির আদালত। চক্রের অন্যতম সদস্য কুয়েতি নাগরিক ছয় বছরের সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কুয়েতের কারাগারে রয়েছে।

সিআইডি জানায়, গোয়েন্দা প্রতিবেদনের তথ্যের ভিত্তিতে অনুসন্ধানে নেমে মানবপাচারকারী চক্রটির হোতা সিরাজের অবস্থান শনাক্ত করা সম্ভব হয়। এরপর মঙ্গলবার নরসিংদীর মাধবদীতে চালানো হয় অভিযান। তার পলাতক দুই সহযোগীর ব্যাপারেও প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত পাওয়া গেছে। শিগগিরই তাদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে।