বাবার সঙ্গে দ্বন্দ্ব, আমিশার ক্যারিয়ারে জোয়ার-ভাটা (ভিডিও)

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),বিনোদন প্রতিনিধি,১৯ আগষ্ট : অভিষেক চলচ্চিত্র বক্স অফিসে সফল। দ্বিতীয় চলচ্চিত্র ব্যবসায়ীক দিক থেকে প্রথমটিকেও ছাড়িয়ে যায়। দুই দশকের অভিনয় ক্যারিয়ারে চল্লিশটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি।

ক্যারিয়ারের নিত্তিতে প্রাপ্তির পাল্লা ভারী হলেও তিনি অধিক পরিচিত ব্যক্তিগত জীবনের নানা বিতর্কের কারণে। তিনি অন্য কেউ নন, পঁয়তাল্লিশ বছর বয়েসি বলিউড অভিনেত্রী আমিশা প্যাটেল।

১৯৭৫ সালের ৯ জুন মুম্বাইয়ের এক গুজরাটি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন আমিশা। বাবা অমিত ও মা আশার নাম মিলিয়ে মেয়ের নাম রাখেন আমিশা। তার দাদা রজনী প্যাটেল ছিলেন কংগ্রেসের প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ। মুম্বাইয়ের ক্যাথিড্রাল অ্যান্ড জন ক্যানন স্কুলে পড়াশোনা করেন আমিশা। ছাত্রজীবনে মেধাবী ছিলেন তিনি।

পরে বায়োজেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান আমিশা। কিন্তু দুই বছর পড়ার পর অর্থনীতি নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন তিনি। পরবর্তীতে আমেরিকায় ইকোনমিক অ্যানালিস্ট হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেন। কিন্তু চাকরিতে বেশি দিন মন টিকেনি তার। বিদেশে সব ছেড়ে ভারতে ফিরে বিখ্যাত সত্যদেব দুবের নাটকের দলে যোগ দেন তিনি।

আমিশার পরিবার ছিল রক্ষণশীল। কিন্তু কোনো কিছু তোয়াক্কা না করে শুরু করেন অভিনয় ও মডেলিং। বেশ কিছু পণ্যের বিজ্ঞাপনে কাজ করে পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন তিনি। ১৯৯৯ সালে উর্দু ভাষার ‘নীলম’ নাটকে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন। তারপরই পরিচালক রাকেশ রোশানের নজরে পড়েন তিনি। রাকেশ রোশান আমিশার বাবার ছোটবেলার বন্ধু। এরপর ‘কহো না প্যায়ার হ্যায়’ সিনেমায় অভিনয়ের প্রস্তাব পান। অন্যদিকে রাকেশ তখন পুত্র হৃতিককে লঞ্চ করানোর জন্য নতুন নায়িকা খুঁজছিলেন। সিনেমাটি ২০০০ সালে মুক্তির পর আকাশছোঁয়া সাফল্য পান আমিশা-হৃতিক। এরপর ‘বদ্রি’ নামে দক্ষিণী সিনেমায় অভিনয় করেও সাফল্য পান তিনি। তার অভিনীত তৃতীয় সিনেমাটিও সফলতা লাভ করে। ধারাবাহিক এই সাফল্য আমিশার পরবর্তী পথ মসৃণ করে দেয়।

মুদ্রার যে দুই পিঠ, তা আমিশার ক্যারিয়ারে খুব দ্রুত দেখা দেয়। কারণ তার প্রথম তিনটি সিনেমা সফল হওয়ার পর দ্বিতীয়বারের মতো হৃতিকের সঙ্গে জুটি বাঁধেন আমিশা। কিন্তু ‘আপ মুঝে আচ্ছে লাগনে লাগে’ সিনেমাটি বক্স অফিসে ব্যর্থ হয়। এরপর ‘ক্রান্তি’, ‘ক্যায়া এহি প্যায়ার হ্যায়’ সহ আমিশার বেশ কিছু সিনেমা বক্স অফিসে ব্যর্থ হয়। অনেকটা ব্যর্থতার পর আশার আলো হয়ে ধরা দেয়—‘হমরাজ’ সিনেমা।

এই সিনেমার সাফল্যের পর ক্যারিয়ার গুছিয়ে নিতে চান আমিশা। কিন্তু তখনই বিতর্ক এসে ধরা দেয় আমিশার ব্যক্তিগত জীবনে। কারণ এ সময় বাবা-মাকে আইনি নোটিশ পাঠান আমিশা। তার অভিযোগ ছিল—১২ কোটি রুপি নিয়ে তা ফেরত দেননি তার বাবা-মা। মেয়ের এমন কাণ্ডের জন্য আমিশার বাবা-মা দাবি করেছিলেন—এসব করিয়েছে পরিচালক বিক্রম ভাট। ‘আপ মুঝে আচ্ছে লাগনে লাগে’ সিনেমায় অভিনয়ের সুবাদে আমিশার সঙ্গে তার পরিচয়। তারপর মনের লেনা-দেনা। পরবর্তীতে লিভ-ইন করেন তারা। যদিও আমিশার অর্থনৈতিক হিসাব-নিকাশ তার বাবা-ই দেখাশোনা করতেন।

অন্যদিকে আমিশা অভিযোগ করেছিলেন—তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে এই অর্থ নিয়েছিলেন তার বাবা। শুধু তাই নয়, বিক্রম ভাটের মাকেও আমিশার বাবা-মা হুমকি দেন বলে অভিযোগ রয়েছে। পরে পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছিলেন বিক্রমের মা। এসব বিতর্ক নিয়ে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে আমিশার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়। সর্বশেষ আমিশা-বিক্রমের সম্পর্ক ৫ বছর স্থায়ী হয়েছিল। যদিও তাদের বিচ্ছেদের মূল কারণ ছিল উভয়ের ক্যারিয়ার।

এ সময় বলিউডে কঠোর পরিশ্রম করা ছাড়া আমিশার উপায় ছিল না। তারপরও সুযোগ না পেয়ে তিনি তেলুগু সিনেমায় অভিনয় শুরু করেন। আমির খানের বিপরীতে ‘মঙ্গল পাণ্ডে’ এবং অক্ষয় কুমারের বিপরীতে ‘মেরে জীবনসাথী’ সিনেমাও আমিশার ক্যারিয়ারের ছিঁড়ে যাওয়া পালে নতুন হাওয়া লাগাতে পারেনি।

ভাটার জলের মতো ক্যারিয়ার যখন গভীর সমুদ্রে হাবুডুবু খাচ্ছিল, তখন ‘হানিমুন ট্রাভেলস প্রাইভেট লিমিটেড’ এবং ‘ভুলভুলাইয়া’ সিনেমা দুটি আশার আলো হয়ে ধরা দেয় আমিশার ক্যারিয়ারে। কিন্তু সেটাও বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। যশরাজ ফিল্মের ‘থোড়া প্যায়ার থোড়া ম্যাজিক’ সিনেমায় ‘লেজি লামহে’ গানে বিকিনিতে হাজির হন আমিশা। কিন্তু তারপরও ক্যারিয়ারে ভাটার টান লেগেই থাকে এই অভিনেত্রীর। এ সময় লন্ডনের ব্যবসায়ী কনভ পুরীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে আমিশার। গুঞ্জন চাউর হয়েছিল, বিয়ে করতে যাচ্ছেন তারা। কিন্তু ২০১০ সালে শোনা যায় তাদের বিচ্ছেদ হয়েছে।

২০১১ সালে বন্ধু কুণাল ভুমরের সঙ্গে আমিশা প্রোডাকশন হাউস শুরু করেন। এর ব্যানারে প্রথম নির্মিত হয় ‘দেশি ম্যাজিক’ সিনেমাটি। কিন্তু এ সিনেমাও আলোর মুখ দেখেনি। বরং প্রযোজক অজয় কুমার সিংহের সঙ্গে তিন কোটি রুপি নিয়ে আইনি ঝামেলায় জড়ান আমিশা। তখন গুঞ্জন চাউর হয়েছিল, বিয়ে না করলেও কুণালের সঙ্গে আমিশার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। তাদের এ প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানও বেশিদিন টিকেনি।

ব্যর্থতার তালিকা যখন দীর্ঘ তখন আবার ইন্ডাস্ট্রিতে ফেরার চেষ্টা করেন আমিশা। ‘রেস টু’, ‘ভাইয়া জি সুপারহিট’-এর মতো সিনেমায় অভিনয় করেন তিনি। কিন্তু আগের জনপ্রিয়তা আর ফিরে পাননি  এই নায়িকা। বরং উদ্ধ্যত আচরণের জন্য একাধিকবার সমালোচিত হন তিনি।