ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),আদালত প্রতিনিধি,১৭ জুলাই : ওভাল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও জেকেজি হেলথকেয়ারের সিইও আরিফুল হক চৌধুরীর বিভিন্ন অপকর্মের জন্য তাকে তালাক দেন তার স্ত্রী জেকেজির চেয়ারম্যান ও জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের কার্ডিয়াক সার্জন ডা. সাবরিনা শারমিন হুসাইন।
শুক্রবার (১৭ জুলাই) ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাসুদ-উর-রহমানের আদালতে রিমান্ড শুনানিতে এ দাবি করেন ডা. সাবরিনার আইনজীবীরা। এদিন আদালত সাবরিনার ফের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
তিন দিনের রিমান্ড শেষে শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সাবরিনাকে ডিবি পুলিশের মিন্টো রোডের কার্যালয় থেকে আদালতে নেওয়া হয়। তাকে ঢাকা সিএমএম আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়। ১টা ৪৩ মিনিটে তাকে এজলাসে তোলা হয়। এর পরেই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তেজগাঁও জোনাল টিমের পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) লিয়াকত আলী আসামি সাবরিনার পুনরায় যে ৫ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন সে বিষয়ে শুনানি হয়।
রিমান্ড শুনানির আগে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা বলেন, ‘এর আগের দিনও আমরা রিমান্ড ফরওয়ার্ডি দেখতে পারিনি, আজও না। আসামির বিরুদ্ধে কী অভিযোগ আনা হয়েছে, তা আমরা জানতে পারি না। রাষ্ট্রপক্ষ পেলেও আমরা কাগজ পাই না। তিনিও বাংলাদেশের নাগরিক, আমরাও বাংলাদেশের নাগরিক। আসামিও তো বাংলাদেশের নাগরিক এবং তিনি একজন বিসিএস ক্যাডার। আমরা কাগজ দেখার অধিকার পাব না কেন?’ এরপর বিচারক তাদের রিমান্ড ফরওয়ার্ডির কাগজ দেন।
রাষ্ট্রপক্ষে প্রথমে সংশ্লিষ্ট থানার সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা মো. ফরিদ মিয়া বলেন, ‘ওভাল গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান জেকেজি হেলথকেয়ার। তিনি (ডা. সাবরিনা) তার চেয়ারম্যান। জেকেজি গ্রুপের বিরুদ্ধে যে মামলা হয়, তিনি সে মামলার আসামি। করোনার ভুয়া সার্টিফিকেট দিয়ে আসামিরা লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে তা আত্মসাত করেছে। তার স্বামী আরিফুল হক জেকেজির মালিক। প্রতিষ্ঠান থেকে জাল সনদ দিয়ে তারা বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের সুনাম ক্ষুণ্ন করেছেন। তদন্তের স্বার্থে তদন্ত কর্মকর্তা ফের ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন করেছেন। আসামির সর্বোচ্চ রিমান্ড মঞ্জুরের প্রার্থনা করছি।’
সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর হেমায়েত উদ্দিন খান (হিরণ) বলেন, ‘আসামি একজন ডাক্তার। তার কাজ ছিল মানুষের সেবা করা। তিনি সেটি না করে মানুষের জীবন বিপন্ন করেছেন। তার কারণে মানুষ ডাক্তারদের ঘৃণার চোখে দেখে। তার আচরণ খুনির মতো। সাবরিনা এবং সাহেদ একই সূত্রে গাঁথা। তাদের কর্মকাণ্ডে দেশের মানুষ বিব্রত।’
আসামিপক্ষে সাইফুজ্জামান (তুহিন), ওবায়দুল হাসান বাচ্চু, আবদুস সালাম প্রমুখ আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিনের আবেদন করেন।
তারা বলেন, ‘আসামি একজন ডাক্তার, বিসিএস ক্যাডার। আসামিকে এর আগে তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। কোনো তথ্য উদঘাটন হয়নি। তিনি প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পৃক্ত না। স্বামী বা অন্যরা জড়িত থাকলে সেটা তো তার অপরাধ না। আর অপকর্মের জন্য আরিফকে ডিভোর্স দেন সাবরিনা।’
আইনজীবীরা বলেন, ‘আসামি জেকেজি গ্রুপের চেয়ারম্যান নন। কেউ যদি বলে, আমি ওই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান, তাহলে তিনি কি সেই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান হয়ে যাবেন। আসামি মিডিয়া ট্রায়ালের শিকার। মিডিয়া ট্রায়াইল ইজ ডেঞ্জারাস। তদন্ত সংস্থা আসামিকে এর আগে রিমান্ডে নিয়ে প্রমাণ করতে পারেনি যে, তিনি জেকেজি গ্রুপের চেয়ারম্যান। এখন আবার কেন রিমান্ড? তার জামিন প্রার্থনা করছি।’
উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে পুনরায় দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
দুপুর ২টা ৬ মিনিটে সাবরিনাকে আদালত থেকে নিয়ে যায় ডিবি পুলিশ।