লেখক : সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন
আঁখি মুঞ্জিয়া দেখ রূপরে
আর দিলের চক্ষে চাহিয়া দেখ বন্ধুয়ার স্বরূপরে’
-হাছন রাজা
জীবনের অনেক হিসাবই একটা বয়সে এসে আর মেলে না। ভালোবাসার সাতকাহন বদলে যায়, বদলে দেয় মুহূর্ত। অন্যরকম ভালোবাসা ঝড়ের বেগে আসে। আবেগ ভেসে ওঠে কাঠফাটা রোদ্দুরে এক পশলা বৃষ্টি হয়ে। কষ্টের স্রোতে ভিজে ভিজে শেষ বিকালে হিসাব মেলায় থমকে থাকা মানুষ। চারদিকে তাকিয়ে অবাক বিস্ময় নিয়ে দেখেন হারিয়ে যাওয়া পথ। বঙ্কিমের কপালকুন্ডলার মতো প্রশ্ন করেন না, পথিক তুমি কি পথ হারিয়েছো? হুমায়ূন আহমেদ লিখেছেন, ‘পৃথিবীতে অনেক ধরনের অত্যাচার আছে। ভালোবাসার অত্যাচার হচ্ছে সবচেয়ে ভয়ানক অত্যাচার। এ অত্যাচারের বিরুদ্ধে কখনো কিছু বলা যায় না, সহ্য করে নিতে হয়।’
আবেগ থাকলে চলার পথে অনেক কিছু সহ্য করতে হয়। হোঁচট খেতে হয়। মেনে নিতে হয় যাপিত জীবন। অনেক সময় সারাটা জীবন উৎসর্গ করেও ঠাঁই পাওয়া যায় না আপন ঠিকানা। শীত-গ্রীষ্মে সামান্য উলট-পালটে বদলে যায় চিরচেনা জগৎটা। ভেঙে যায় কাচের চুড়ির মতো রিনঝিন শব্দ করে। কি রাজনীতি কি সমাজ কি সংসার সবখানে এক চিত্র। নষ্টামি ভন্ডিামি আর মুখোশধারীদের উল্লাসনৃত্য নীরবে হজম করে যেতে হয়। অনেক সময় ওদের দাপটের কাছে প্রকাশ করতে হয় অসহায়ত্ব। করার থাকে না কিছুই। দু-এক জন ধরা খায়, বাকিরা চলতে থাকে।
উত্তম কুমার-সুচিত্রা সেনের একটি ছবি দেখেছিলাম অনেক দিন আগে। ছবির নাম ‘পথে হলো দেরি’। কাহিনি প্রতিভা বসুর। পরিচালনা করেছেন অগ্রদূত। বিষাদে ভরা রোমান্টিক এক কাহিনি। বিত্তশালী পরিবারের দেমাগি মেয়ে সুচিত্রা। রূপে-গুণে কোনো তুলনা হয় না। অর্থের সঙ্গে রূপের দেমাগ যোগ হলে তো কথাই নেই। সুচিত্রারও হয়েছে তাই। ছবির নায়ক জয়ন্ত পেশায় ডাক্তার। জীবনের শুরুতেই কলকাতা থেকে দার্জিলিং আসেন চাকরি নিয়ে। বড়লোকের নাতনি মল্লিকাদের বাড়ির পাশেই সেই ক্লিনিক। একদিন মল্লিকার ছোট ভাইয়ের হাত ভেঙে যায়। দাদু গেছেন কলকাতায়। পারিবারিক চিকিৎসককে পেলেন না। ডাকা হলো তরুণ চিকিৎসক জয়ন্তকে। তিনি এলেন। দেখলেন মল্লিকার ভাইকে। চিকিৎসার ব্যবস্থা করলেন। ভদ্রতাবশত চা খেয়ে যেতে বললেন মল্লিকা। কিন্তু পেশাদার এই ডাক্তার তাকালেনও না ঠিকমতো আগুনসুন্দরীর দিকে। কাজ শেষ করে চলে গেলেন। জীবনে প্রথম এমন কান্ড ঘটল নায়িকার জীবনে। বিস্ময় নিয়ে দেখলেন সব মল্লিকা। ঘোর লাগল চোখে-মুখে।
এদিকে ভালো হয়ে উঠলেন মল্লিকার ভাই। কিন্তু এই তরুণ ডাক্তারের ওপর আস্থা রাখা কি ঠিক? তাই কলকাতায় পাঠানো হয় বড় সার্জনের কাছে। কিন্তু কলকাতার বড় ডাক্তার প্রশংসা করলেন জয়ন্তের চিকিৎসার। জয়ন্তকে বাড়িতে ডাকলেন মল্লিকা। ধন্যবাদ দিলেন। জয়ন্ত ভাব দেখালেন আগের মতো। নায়িকার ধন্যবাদের জবাবে ৫০ টাকার বিল ধরিয়ে দিলেন জয়ন্তরূপে অভিনয় করা উত্তম। ধাক্কা খেলেন সূচিত্রা। কী করে সম্ভব? তাই অসুখের কথা বলে ডাকলেন আরেক দিন। উত্তম এসেই জানতে চান কার অসুখ। সুচিত্রা বললেন, আমার অসুখ। শুরু হয় কথোপকথন। উত্তম বললেন, আমাকে ক্ষমা করুন, আমি যাচ্ছি। সুচিত্রা বললেন, আমার অহংকারে আঘাত এসেছে। আপনাকে ক্ষমা করতে পারব না। জবাবে উত্তম বললেন, ডাক্তার হিসেবে আমারও অহংকার থাকতে পারে। আপনার মতো পারিবারিকভাবে এই অহংকার নয়। নিজের কষ্টে অর্জন করা। সুচিত্রা পাল্টা বললেন, আপনার এই অভদ্রতা মুখোশ। থামলেন না উত্তমও। বললেন, মুখোশ নয় মিস ব্যানার্জি। আত্মরক্ষার কবচ। হন হন করে হেঁটে উত্তম চলে যাচ্ছেন। সুচিত্রা গাইলেন, ‘তুমি না হয় রহিতে কাছে, কিছুক্ষণ আরও না হয় রহিতে কাছে… আরও কিছু কথা না হয় বলিতে মোরে… এই মধুক্ষণ মধুময় হয়ে না হয় উঠিত ভরে,.. সুরে সুরভীতে না হয় ভরিত বেলা…।’ এ ছবিতে আরেকটি অসাধারণ গান ছিল, ‘এ শুধু গানের দিন… এ লগন গান শোনাবার।’ সেই গানগুলো আজ নেই। নেই সংলাপও।
নাটকীয়তায় ঠাসা ছিল ছবিটি। এখনো কানে বাজে সেই সংলাপ, ‘এত রাতে ঘুমাননি? উত্তর ছিল, একজন যে চোখ ধরে আছে।’ এভাবেই যেতে থাকে সময়। একদিন সুচিত্রা তার বড়লোক দাদুর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন উত্তমের। দাদু শুরুতে জানতে চান কোন জমিদারের সন্তান উত্তম। জবাবে উত্তম বললেন, মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। কষ্ট করে পড়েছেন। দাদু শুনিয়ে দেন উত্তমের মাসের বেতনের সমান সুচিত্রার একটি শাড়ির দাম। মন খারাপ হয়ে যায় উত্তমের। কলকাতা ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। সুচিত্রা ছাড়বেন কেন? এদিকে সুচিত্রার বিয়ের আলাপ শুরু বিত্তশালী পরিবারের ব্যারিস্টারি পড়তে যাওয়া সন্তানের সঙ্গে। উত্তম বিদায় নিতে আসেন। কিন্তু কীভাবে উত্তমকে ছাড়বেন সুচিত্রা? বললেন, এই হিমালয়ের সামনে দাঁড়িয়ে বলছি তুমি আমার স্বামী, আর আমি তোমার স্ত্রী। আবেগে ভেসে যান দুজনই। উত্তমকে এফআরসিএস পড়তে মায়ের গয়না বিক্রির টাকায় বিলেত পাঠান সুচিত্রা। কাহিনির নাটকীয়তা বাড়তে থাকে। চিঠিতেই চলতে থাকে তাদের যোগাযোগ। আবারও দাদু বাধা হয়ে দাঁড়ান। একদিন উত্তমের চিঠি এসে পড়ে দাদুর হাতে। ক্ষুব্ধ দাদু চিঠি পাঠান উত্তমকে। জানান সুচিত্রার বিয়ে চূড়ান্ত হয়েছে। এ সময় যোগাযোগ না রাখতে। পড়াশোনা শেষ করে ফিরলেন উত্তম। গেলেন দার্জিলিং। পেলেন না সুচিত্রাকে। ফিরলেন কলকাতায়। হাসপাতালে যোগ দেন। খুঁজতে থাকেন সুচিত্রাকে।
এদিকে অর্থবিত্তের অহংকারে থাকা দাদুর বাড়ি ছেড়ে সুচিত্রা আলাদা থাকতে শুরু করেছেন। নিজে গান শিখিয়ে চলতেন। একদিন ছাত্রীকে গান শেখাতে গিয়ে শুনলেন, এই বাড়ির বিদেশফেরত মেয়েটির বিয়ে হবে উত্তমের সঙ্গে। মেয়েটির সঙ্গে উত্তমের পরবাসে দেখা-সাক্ষাৎ হয়েছে। একটি ছবিও আছে দুজনের। আর যায় কোথায়? ভেঙে পড়লেন সুচিত্রা। ধীরে ধীরে এ অসুস্থতা বাড়তে থাকে। একবার মন ভাঙলে শরীর আর ঠিক থাকে না। সুচিত্রারও হয়েছে তাই। ভেঙে পড়লেন। এদিকে সেই বাড়ির বাচ্চার কণ্ঠে সুচিত্রার গান শুনে উত্তম জানতে চান কোথায় শিখেছে এ গান। জানলেন, এক গানের শিক্ষিকা শিখিয়েছেন। তিনি এখন অসুস্থ। উত্তম গেলেন সেই শিক্ষিকার বাসায়। দেখলেন শরীর-মন সব ভেঙে পড়েছে সুচিত্রার। উত্তমকে দেখেই চিৎকার শুরু করলেন। বললেন, ‘না, আমি আর ভালো হতে চাই না। ভেবেছো আমাকে ভালো করে নাম কিনবে? আমি তা হতে দেব না। আমি তোমার হাতেই মরব, তোমার হাতেই মরব।’
রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন- ‘রূপ নারাণের কূলে/জেগে উঠিলাম/জানিলাম এ জগৎ/স্বপ্ন নয়।
রক্তের অক্ষরে দেখিলাম
আপনার রূপ
চিনিলাম আপনারে
আঘাতে আঘাতে
বেদনায় বেদনায়’
আমাদের একজন নেতা ছিলেন জয়নাল আবেদীন ভূইয়া। ১৯৭৯ সালে এমপি ছিলেন কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকে। জিতেছিলেন কাজী জাফর আহমদকে হারিয়ে। তিনি আমাকে স্নেহ করতেন। তাঁর সঙ্গে আমার দীর্ঘ রাজনৈতিক পথচলা। লাকসাম ও চৌদ্দগ্রাম বিভক্ত হলে তাঁর বাড়ি চলে আসে নাঙ্গলকোট উপজেলায়। ’৮৬ সালে ভোটে দাঁড়ালেন তিনি নাঙ্গলকোট থেকে। হেঁটে হেঁটে প্রচারণায় অংশ নিতেন। কখনো চড়তেন রিকশায়। তাঁর সঙ্গে এভাবেই ভোট করত নাঙ্গলকোটের মানুষ। ’৮৬ সালের ভোটের সময় একদিন বাড়ির পাশের একটি বাজারে গেলাম। এ বাজারের নাম মানিকমুড়া। রব নামের আওয়ামী লীগের একজন কর্মী ছিলেন আমাদের গ্রামে। তিনি দোকান করতেন। আমি তখন ঢাকায় পড়ি। বাজারে আমাকে দেখেই বললেন, কাকা চলেন। জয়নাল ভাইয়ের পক্ষে মিছিল। আপনি সামনে থাকলে সাহস বাড়ে। মিছিল শেষ হলো। একটু পর রবকে দেখলাম গামছা ধরে বাজারে হেঁটে হেঁটে টাকা তুলছেন। এ টাকা ভোটের চা-পানির খরচ। এমপি সাহেবের টাকা-পয়সা নেই। জয়নাল ভাইয়ের ভোটের খরচ এভাবেই উঠত। মানুষই ছিল তাঁর ভরসা। ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ছিল না। ’৯১ সালের পর এক কাজে আমিসহ গিয়ে অ্যাকাউন্ট খুলে দিয়েছিলাম। ঢাকায় থাকতেন শ্বশুরের বাসায়। জয়নাল ভাইয়ের সঙ্গে দীর্ঘ সময় নাঙ্গলকোটের গ্রামে গ্রামে ঘুরেছি। অনেক সময় রাত কাটিয়েছি হাটবাজারে। ’৯৬ সালে এমপি হওয়ার পরও পরিবর্তন দেখিনি। একদিন তিনি টানা বিভিন্ন এলাকা কর্মসূচি শেষ করলেন। রাতে আমরা গেলাম বটতলি বাজার এলাকায়। বললেন, রাতে এখানেই থাকবেন। আমি বাইরে হাঁটাহাঁটি করছি। তিনি বুঝলেন, বাড়িতে চলে যাওয়ার চিন্তা করছি। আমাকে বললেন, মানুষ আমাকে ভালোবাসে এ কারণে। ভোটও দেয় আমার কিছু নেই বলে। বাড়ি যাওয়ার দরকার নেই। দেখ। শেখ। উপজেলা আওয়ামী লীগের তখনকার সাধারণ সম্পাদক এখন সভাপতি রফিকুল হোসেনের বিশাল দোকানের পেছনে ছিল থাকার ব্যবস্থা। তাঁর বাড়ি থেকে খাবার এলো। আমরা সেখানেই রাত কাটালাম। এ যুগের এমপি, মন্ত্রী সাহেবরা কি চিন্তা করতে পারবেন এভাবে আওয়ামী লীগের আগের এমপি এবং নেতাদের জীবন ও রাজনীতি ছিল। তাঁদের ওপর ভর করে আওয়ামী লীগের আজকের অবস্থান। তাঁরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বুকে লালন করতেন। মুখে নয়। এখন বঙ্গবন্ধুকে বুকে নয়, মুখে লালন করে সবাই। গণমানুষের পাশে থাকার সেই রাজনীতি, সেই সংস্কৃতি হারিয়ে গেছে। গত ১২ বছরে আওয়ামী লীগ বদলে গেছে। নতুন এক দল দেখছি, এক নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতি দেখছি। সবাই ভাবেন, ভোটারদের কাছে যেতে হবে না। যা খুশি তা করা যাবে। কিন্তু একবারও ভাবেন না যেতেও তো হতে পারে। এই দিন না-ও থাকতে পারে।
এ যুগের আওয়ামী লীগ ভরে গেছে আগাছা-পরগাছায়। উপকমিটির নাম ভাঙিয়ে যা খুশি তা হচ্ছে। সেদিন একজন বললেন, এমন কেন হচ্ছে? বললাম, বিরোধী দলের আওয়ামী লীগ আমার চেনা। সরকারি দলের আওয়ামী লীগকে বড় বেশি অচেনা। এ দলটি বিরোধী দলে থাকে কর্মীবান্ধব। আর সরকারি দলে আগাছাবান্ধব। চিরচেনা নেতারাই বদলে যান। আমাদের কুমিল্লার অধ্যাপক খোরশেদ আলম স্যারের কথা মনে পড়ছে। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর সময় কুমিল্লার গভর্নর। জেলা আওয়ামী লীগের দায়িত্বে থাকার সময় একদিন তাঁর গ্রিন রোড ভূতের গলির বাসায় গিয়েছিলাম। আওয়ামী লীগের তখন খারাপ সময়। নাঙ্গলকোটের রাজনীতি নিয়ে তাঁকে প্রশ্ন করে জানতে চাইলাম, স্যার এমন কেন হলো? বললেন, বাবারে! আওয়ামী লীগের রাজনীতিটা অনেক জটিল। অনেক কিছু করতে হয় না। হয়ে যায়। তোমারে পছন্দ করি। আপন ভেবেই কথাটা বললাম। আসলে তাই। আওয়ামী লীগে অনেক কিছু হয়ে যায়, যার কোনো উত্তর থাকে না।
আগে রাজনীতিবিদরা একটা আদর্শ নিয়ে আসতেন। মণি সিং ছিলেন জমিদারপুত্র। নিজের সব সম্পদ পার্টিকে দান করেন। আজীবন আদর্শিক চেতনা নিয়ে লড়েছেন অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ। তাঁর কাকরাইলের বাড়িতে মাঝেমধ্যে যেতাম। বুকে হাত দিয়ে বলুন বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনী কতজন আওয়ামী লীগার পড়েছেন? অনেকে অবশ্য লোক দেখানোর জন্য বগলদাবা করে এ বই নিয়ে ঘোরেন। জানেনও না নেতার জীবনী। বঙ্গবন্ধুর পুরো জীবনের বড় অংশই কেটেছে কারাগারে। স্বপ্ন নিয়ে রাজনীতিটাই করেছেন। অন্য কিছু করেননি। লড়েছেন মানুষের অধিকার নিয়ে। দেশটা স্বাধীন করেছেন সেই অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে। পারেননি। আন্তর্জাতিক চক্রান্তে জীবন দিয়েছেন। আজ সেই দলটিতে ভর করেছে সুবিধাবাদীরা। বাপ-দাদা চৌদ্দগুষ্টির কেউই আওয়ামী লীগ করেনি। এ দলের ইতিহাস-ঐতিহ্য কিছুই জানেন না। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ-নীতি সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই। দলের নেতা হয়েছেন, এমপি, মন্ত্রী হয়েছেন। অনেকে ব্যবসার নামে লুটের রাজত্ব কায়েম করেছেন। দাপটের শেষ নেই। ক্ষমতার শেষ নেই। ব্যবসা-বাণিজ্য বিশাল চক্র তৈরি করেছেন। সরকারের লোকজনও তাদের সমীহ করে। সেই সমীহকে কাজে লাগিয়েছে দাপুটে আদর্শহীন দুষ্টচক্র। এ চক্র কোথায় গিয়ে ঠেকাবে কেউই জানে না। কতজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন? নকলদের ভিড়ে এখন আসলদের কোথাও দেখি না। ওরা কী করে দল-সরকারে আসন পায়? কী করে রাষ্ট্রীয় আচার অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পায়? বঙ্গভবন থেকে গণভবন, সেনাকুঞ্জের অনুষ্ঠানে- কোথায় তারা নেই? কারা আমন্ত্রণ পাঠায়? কারা উপকমিটিতে নেয় তাদের? আওয়ামী লীগে এই ভন্ডের সংখ্যা একজন নয়। যেদিকে তাকাই শুধু ওদের দেখি। ত্যাগী সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের দেখি না। কোনো কিছুতে প্রবেশ করতে সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের জান বেরিয়ে যায়। তবু ঠাঁই পায় না। আর ঠিকানাহীনদের আদর করে নেওয়া হয়। তাদের বাপ-দাদার ঠিকুজির প্রয়োজন নেই। অতীতে কোন পার্টি করেছে খোঁজ নেই। কেউ বলতে পারবেন, নেতাদের কেন স্যার ডাকতে হবে? আর জাসাস থেকে হিজরত করা নায়িকা-গায়িকাদের টানতে হবে? কারা তাদের সংরক্ষিত আসনে এমপি করার আশ্বাস দেন? কারা নিয়ে ঘোরেন? জি কে শামীম, মিঠুদের লুটের সঙ্গী কারা?
আচ্ছা বলুন তো মিঠুটা কে? তিনি কি আওয়ামী লীগের ত্যাগী কেউ? হাজার হাজার কোটি টাকার লুট উৎসব করে স্বাস্থ্য খাতটা শেষ করে দিয়েছেন। এখনো তিনি ধরাছোঁয়ার বাইরে। মিঠু সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে লেখালেখির কারণে মামলা খেয়েছি। মামলার বাদী সাবেক মন্ত্রী সাহেব। যার হাত ধরে মিঠুর অভিষেক। পরের সবাই ধারাবাহিকতা রেখেছেন। চলছে একটা নতুন যুগ। হাজার কোটি এখন কোনো টাকাই নয়। অনিয়মই এখানে নিয়ম। লুটেরার উল্লাস স্বাস্থ্য আর ব্যাংকিং খাতে। এভাবে কত দিন? দুনিয়া-আখিরাত বলে কিছু কি নেই? মিঠুর মতো সিন্ডিকেটগুলো আশ্রয়-প্রশ্রয় দিলেন আপনারা। আজ না পারছেন হজম করতে, না পারছেন ফেলতে। গুটিকয় মানুষের জন্য বিশাল অর্জনগুলো ম্লান হতে পারে না। স্বাস্থ্য খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনুন। মাঠপর্যায়ের একজন কর্মকর্তা বললেন, সারা দেশে খাবারের সংকট নেই। কিন্তু গত পাঁচ মাসে স্বাস্থ্য খাতে মাঠ পর্যায়ে বরাদ্দ নেই। ৪২টি জেলায় করোনাভাইরাস পরীক্ষাই হয় না। এখন কার হয়েছে, কার হয়নি বোঝার সুযোগ নেই। কেন এমন হচ্ছে? কারা থামিয়ে রাখছে সবকিছু? মন্ত্রিসভা দুর্বল হলে আমলারা সুযোগ নেন। তারা দাপুটে হন। ব্যর্থতার দায় নিতে হয় রাজনৈতিক সরকারকে।
লেখক : সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন।