সংসদ থেকে এমপি পাপুল ও তার স্ত্রীর বহিষ্কার চায় জাপা

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম,ষ্টাফ রিপোর্টার,২৯ জুন : মানবপাচারের মামলায় কুয়েতের কারাগারে আটক রয়েছেন লক্ষ্মীপুর-২ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য কাজী শহীদ ইসলাম পাপুল ওরফে কাজী পাপুল। তার বিভিন্ন অপকর্মে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে পাপুলের স্ত্রী সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য সেলিনা ইসলাম, মেয়ে ওয়াফা ইসলাম ও সেলিনার বোন জেসমিনের (পাপুলের শ্যালিকা) বিরুদ্ধেও।

সম্মানহানি, মানবপাচারের মতো অনৈতিক ও গুরুতর অপকর্মে লিপ্ত থেকে এমপি পাপুল এবং তার স্ত্রী জাতীয় সংসদের পবিত্রতা ক্ষুণ্ণ ও শপথ ভঙ্গ করেছেন বলে মনে করে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। একারণে দ্রুত স্বামী-স্ত্রী দুজনকেই সংসদ থেকে বহিষ্কার করা উচিত বলেও মত দেন দলটির একাধিক নেতা।

তারা বলেছে, ‘এমপি পাপুলের এরকম কর্মকাণ্ডে বহির্বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে। সংসদ সদস্য হিসেবে একজন আইন প্রণেতার কাছ থেকে দেশের মানুষ এমনটা আশা করে না। এমপি পাপুল শুধু নয় তার পুরো পরিবার এ অপকর্মে জড়িত। তাদের দৃশ্যমান দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া জরুরি। এতবড় অপকর্মের হোতা স্ত্রীসহ কিভাবে এমপি হলেন তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। বরং এর সঙ্গে যারাই জড়িত তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে বলেও মনে করে জাতীয় পার্টি’।

এবিষয়ে রোববার (২৮ জুন) রাতে জাতীয় পার্টির মহাসচিব সংসদ সদস্য মসিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, এমপি পাপুল যা করেছে অবশ্য অন্যায়। তার দৃষ্টান্তমূলক বিচার হওয়া দরকার। সংসদীয় রীতি নীতি ও আইন অনুযায়ী স্পিকার যদি মনে করে তাকে সংসদ থেকে বহিষ্কার করা দরকার, তাহলে তাই করা উচিত বলে আমি মনে করি।

‘এমপি পাপুল এবং তার স্ত্রী নিজেদের ও পরিবারকে শুধু অপমানিত করেনি, দেশকে বিদেশের কাছে হেয় প্রতিপন্ন করেছে। এজন্য তাদের দৃষ্টান্তমূলক বিচারের মুখোমুখি করা দরকার। যাতে ভবিষ্যতে এধরনের অপকর্মে কেউ জড়িত না হয়’- বলেন রাঙ্গা।

এমপি পাপুল ও তার স্ত্রী কিভাবে এমপি হলো বিম্ময় প্রকাশ করে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে যিনি মানবপাচারে জড়িত, এমন একজন ব্যক্তি ও তার স্ত্রী কিভাবে সংসদ সদস্য হলো তাতে আমি বিস্মিত। প্রথমে এ বিষয়টি সরকারের খতিয়ে দেখা দরকার আছে বলে আমি মনে করি’।

তিনি বলেন, ‘তার বিরুদ্ধে শুধু কুয়েতে মানবপাচারের অভিযোগ আছে তা নয়, মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের তালিকায়ও অপরাধী হিসেবে তার নাম রয়েছে। এমন একজন অপরাধী আজকে বাংলাদেশের আইন প্রণেতা, সংসদ সদস্য। একজন পাপুলই বিদেশের কাছে বাংলাদেশকে কলংকিত করেছে’।

কাজী ফিরোজ বলেন, এমপি পাপুল ও তার স্ত্রীকে শপথ ভঙ্গের অভিযোগে এখনই সংসদ থেকে বহিষ্কার করে সংসদের ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনা উচিত। তার অপকর্মের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হলে মানবপাচারের মতো অনৈতিক ঘৃণ্য অপকর্ম  বন্ধ হবে না।

জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ঢাকা বিভাগের অতিরিক্ত মহাসচিব লিয়াকত হোসেন খোকা বলেন, পাপুলের ঘটনায় একজন এমপি হিসেবে আমরা লজ্জিত, বিদেশের কাছেও অপমানিত। তার এরকম অপকর্মে বিব্রত। এমন ঘৃণ্য অপরাধীকে এমন শাস্তি দিতে হবে যাতে ভবিষ্যতে কেউ এ ধরনের কাজ করার দুঃসাহস না দেখায়। তিনি এমপি পাপুল ও তার সঙ্গে জড়িতদের বিচার দাবি করেন।

অভিযোগ আছে, লক্ষীপুর-২ আসনে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পায় দশম সংসদে জাতীয় পার্টির ওই আসনের এমপি মো. নোমান। কিন্তু বিদেশ থেকে অর্থবিত্ত নিয়ে এসে পাপুল এমপি নোমানকে ম্যানেজ করে এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন। টাকার বিনিময়ে নোমানের বিরুদ্ধে মনোনয়ন প্রত্যাহারের অভিযোগও রয়েছে। পরে ভোটে জিতে এমপি হন পাপুল। এমপি হওয়ার পর থেকে তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। মানবপাচারের রমরমা বাণিজ্যে মেতে উঠেন তিনি। পরবর্তীতে স্ত্রী সেলিনা ইসলামের জন্যও বাগিয়ে নেন কুমিল্লার সংরক্ষিত আসনের এমপির পদ।

মানবপাচারের অপকর্ম অব্যাহত রাখার মধ্যেই এ অভিযোগে ৭ জুন তাকে আটক করে কুয়েত ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট সিআইডি। এখন তিনি কুয়েতের কারাগারে আটক রয়েছেন।