নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় রাতের আঁধারে ঘরে ঘরে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দিচ্ছেন র্যাব সদস্যরা -সংগৃহীত
ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম,নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি,১৬ মে : করোনার থাবায় দেশের অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ জেলা নারায়ণগঞ্জের এলাকাগুলোতে প্রতি রাতেই ঘরে ঘরে খাবার পৌঁছে দিচ্ছে র্যাব। কে অফিসার, কে সৈনিক বোঝার কোনো উপায় নেই। সবাই খাবারের বস্তা কাঁধে নিয়ে হাঁটছেন বাসাবাড়ির দরজার দিকে। কখনও বৃষ্টিতে ভিজে, রোদে পুড়ে তাদের এই চলা। বাসাবাড়ির দরজার সমানে ব্যাগ বা বস্তা রেখেই বন্ধ দরজায় টোকা দিয়ে ডাকছেন, ‘দরজা খুলুন। আমরা র্যাব থেকে এসেছি, আপনাদের জন্য খাবর নিয়ে।’ শুনেই লকডাউনে আটকেপড়া ঘরের লোকজন দরজা খুলছেন। তাদের হাতে খাদ্যসামগ্রীর বস্তা তুলে দিচ্ছেন র্যাব-১১ কর্মকর্তা ও সদস্যরা। যাদের বাড়িতে ছোট শিশু আছে তাদের দুধ কেনার জন্যও দিচ্ছেন নগদ অর্থ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে র্যাবের এমন কার্যক্রম বেশ আলোচিত হয়ে উঠেছে।
মধ্যবয়সী এক নারী গভীর রাতে দুই সন্তান নিয়ে রাস্তায়। রাতে না খেয়ে কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে গেছে। বাচ্চাদের কষ্ট দেখে খাবারের জন্য রাতেই যান এক জনপ্রতিনিদির কাছে। কিন্তু কার্ড না থাকায় তাকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। এত রাতে এই নারীকে রাস্তায় দেখে র্যাবের গাড়ি থামে। র্যাব ১১-এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক আলেপ উদ্দিন ওই নারীর হাতে খাদ্যসামগ্রীর প্যাকেট তুলে দেন। খাবার পেয়ে ডুকরে কেঁদে ওঠেন এই নারী। নারায়ণগঞ্জের সানারপাড়ার এক বাসিন্দা বলেন, রাত তখন প্রায় ১২টা। রাস্তায় দুটি র্যাবের গাড়ি এসে থামল। কয়েক মিনিটের মধ্যেই দেখতে পেলাম বস্তা বস্তা সামগ্রী কাঁধে নিয়ে হেঁটে মহল্লায় প্রবেশ করছেন র্যাব সদস্যরা। দিনের বেলায় যারা ‘লকডাউন’ মানাতে চরম কঠোরতা দেখান, তারাই রাতের আঁধারে হয়ে যান মানবতার জন্য নিবেদিত প্রাণ। ছোটবেলা থেকে ফুটপাতে বড় হওয়া জসিম রাতে র্যাব দেখে ভেবেছিল ধমকি-ধামকি দিয়ে ফুটপাতের বিছানা থেকে তাকে তুলে দেবে। কিন্তু এই র্যাবকে কিছুতেই মেলাতে পারছেন না তিনি। ভিক্ষুক, ভবঘুরে ও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্যও খাওয়ার বন্দোবস্ত করেছে র্যাব। বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও ব্যবসায়ীদের সহযোগিতায় সেই খাদ্যসামগ্রী বিলি করছেন তারা।
আলেপ উদ্দিন বলেন, আমাদের প্রত্যেক সদস্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অসহায় মানুষের কাছে খাবার পৌঁছে দিতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন। শুধু রাতে নয়, দিনেও কিছু কিছু জায়গায় জরুরি ত্রাণ নিয়ে যাচ্ছেন বলে জানান তিনি।