নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুনের ৬ বছর

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম,নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি,২৭ এপ্রিল :  নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাতখুনের ৬ বছর পূর্ণ হলো। ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল র‌্যাবের কিছু বিপথগামী কর্মকর্তা ও সদস্যের সহযোগিতায় ঘটেছিল এই সাত খুনের ঘৃণ্য ঘটনা।

ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড থেকে দিনে সাদা পোশাকে দুটি গাড়িতে করে র‌্যাব অপহরণ করেছিল কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, আইনজীবী চন্দন সরকার সহ সাতজনকে। তিন দিন নিখোঁজ থাকার পর ৩০ এপ্রিল শীতলক্ষ্যা নদীতে পাওয়া যায় কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, তার গাড়িতে থাকা তাজুল ইসলাম, মনিরুজ্জামান স্বপন, সিরাজুল ইসলাম লিটন, আইনজীবী চন্দন সরকার ও তার গাড়িচালক ইব্রাহিমের লাশ। একদিন পর মেলে স্বপনের গাড়িচালক জাহাঙ্গীরের লাশ। সবার হাত-পা বাঁধা এবং সবগুলো লাশের পেট চেরা। সাথে ইটের বস্তা বাঁধা।

এমন ঘটনায় সেদিন শোক আর ক্ষোভে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলেন নারায়ণগঞ্জের মানুষ। স্তম্ভিত হয়ে পড়েছিল গোটা বাংলাদেশ।

ঘটনার একদিন পর কাউন্সিলর নজরুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বাদী হয়ে আওয়ামী লীগ নেতা (পরে বহিস্কৃত) নূর হোসেনসহ ছয়জনের নাম উল্লেখ করে ফতুল্লা মডেল থানায় মামলা করেন। আইনজীবী চন্দন সরকার ও তার গাড়িচালক ইব্রাহিম হত্যার ঘটনায় ১১ মে একই থানায় আরেকটি মামলা হয়। এই মামলার বাদী চন্দন সরকারের জামাতা বিজয় কুমার পাল।

নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডের তদন্তে নামে পুলিশ। পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে আসে ভয়াবহ এই হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত র‌্যাব-১১ এর কয়েকজন অসাধু কর্মকর্তা আর আওয়ামী লীগ নেতা নূর হোসেনের নাম। বাহিনী থেকে বহিস্কৃত ও চাকরিচ্যুত হওয়ার পর সাত খুনের মামলায় গ্রেপ্তার হন র‌্যাব-১১ এর তৎকালীন অধিনায়ক লে. কর্নেল তারেক মোহাম্মদ সাঈদ, উপ-অধিনায়ক মেজর (অব.) আরিফ হোসেন, লে. কমান্ডার (অব.) এম এম রানাসহ কয়েকজন র‌্যাব সদস্য। গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা সাতজনকে গুম করে নৃশংসভাবে হত্যা করে নদীতে ফেলে দেয়ার ঘটনার লোমহর্ষক বর্ণনা দেন আদালতে।

সাত খুনের মামলায় মোট ৩৫ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। তারা হলেন চাকরিচ্যুত লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, মেজর আরিফ হোসেন, লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মাসুদ রানা, হাবিলদার এমদাদুল হক, আরওজি-১ আরিফ হোসেন, ল্যান্স নায়েক হীরা মিয়া, ল্যান্স নায়েক বেলাল হোসেন, সিপাহি আবু তৈয়ব, কনস্টেবল মো. শিহাব উদ্দিন, এসআই পূর্ণেন্দু বালা, করপোরাল রুহুল আমিন, এএসআই বজলুর রহমান, হাবিলদার নাসির উদ্দিন, এএসআই আবুল কালাম আজাদ, সৈনিক নুরুজ্জামান, কনস্টেবল বাবুল হাসান ও সৈনিক আসাদুজ্জামান নূর।

কারাগারে থাকা বাকি আসামিরা হলেন- সাবেক কাউন্সিলর নূর হোসেন, তার সহযোগী আলী মোহাম্মদ, মিজানুর রহমান দীপু, রহম আলী, আবুল বাশার ও মোর্তুজা জামান (চার্চিল)।

পলাতক আসামিরা হলেন- করপোরাল মোখলেছুর রহমান, সৈনিক আবদুল আলীম, সৈনিক মহিউদ্দিন মুনশি, সৈনিক আল আমিন, সৈনিক তাজুল ইসলাম, সার্জেন্ট এনামুল কবীর, এএসআই কামাল হোসেন, কনস্টেবল হাবিবুর রহমান এবং নূর হোসেনের সহযোগী সেলিম, সানাউল্লাহ ছানা, ম্যানেজার শাহজাহান ও ম্যানেজার জামাল উদ্দিন।

দীর্ঘ সময় পার হওয়ার পর ২০১৭ সালের ১৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ সৈয়দ এনায়েত হোসেন সাত খুন মামলায় ২৬ আসামিকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন। পরবর্তীতে ১৫ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে বাকি ১১ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেন হাইকোর্ট। এছাড়া নয়জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ডের রায় হাইকোর্টেও বহাল থাকে।

নিহতদের স্বজনদের দাবি, সাত খুনের সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের রায় দ্রুত কার্যকর করা হোক। এর মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হোক ন্যায় বিচার। যেন ভবিষ্যতে আর কোন হত্যাকারী এমন নৃশংস কাণ্ডের দুঃসাহস না করে।