পিতা বৃদ্ধা ছেলে মেয়েকে মানুষ করে আজ রিকশাওয়ালা (ভিডিও)

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম,নিজস্ব প্রতিনিধি,২৬ এপ্রিল : স্বার্থপর এই পৃথিবী, যে যতক্ষন আমাদের দিয়ে যেতে পারবে ততক্ষনই সে আমাদের কাছে মূল্যবান। যখনই আর দিতে পারবে না, কিংবা উল্টো আমাদের উপর নির্ভরশীল হয়ে উঠবে, তখনই তার চাহিদা আমাদের কাছে ফুরিয়ে যায় ।

আর বর্তমান জীবনে ভোগ বিলাসিতা কিংবা ভোগ বিলাসের আকাংখা আমাদের সবাইকে এক অলিখিত প্রতিযোগিতায় ফেলে দিয়েছে, সবাই শুধু ছুটছে , আরো কিছু পাবার জন্য, পেছনে কি হারিয়ে যাচ্ছে তা যেন কারোই দেখার সময়, পেছনে তাকালেই ছুটতে দেরী হয়ে যাবে, এমনই সবার মানসিকতা।

তাই নিজের সুখ শান্তিকে বির্সজন দিয়ে যে সন্তানকে মানুষ লালন পালন করে, সেই সন্তানই ভুলে যাচ্ছে পিতামাতাকে। শুধু চাতক পাখির মত উপরের দিকেই চোখ যেন সন্তানদের, আরো বেশি পাবার আকাংখা, আরো এগিয়ে যাবার বাসনা।

’নিজের সব সুখ বিসর্জন দিয়ে সন্তানকে লালন-পালন করেছি। মাথার ঘাম মাটিতে ফেলে সন্তানকে লেখাপড়া শিখিয়ে সুশিক্ষিত করে সেনাবাহিনীর চাকরি নিয়ে দিয়েছি। কিন্তু আজ সেই সন্তান আমার কোনো খবর নেয় না!’

ডুকরে কেঁদে কেঁদে এমন করেই কথাগুলো বলছিলেন আশি বছরের এক বৃদ্ধ বাবা। যিনি পেটের দায়ে সাভারের আশুলিয়া বাইপাইল এলাকায় রিকশা চালান।

স্ত্রী’র মৃত্যুর পর জীবনের পড়ন্তবেলায় আপন সন্তানের চরম অবহেলা অনাদরে নিদারুণ মানসিক যন্ত্রণা নিয়ে একরকম স্বেচ্ছা নির্বাসন জীবন অতিবাহিত করছে এই বৃদ্ধ বাবা । আজ তার কাছে পরিবার আর ছেলে-মেয়েদের জন্য জীবনের সব পরিশ্রম যেন বৃথা। কিন্তু এতকিছুর পরও সন্তানদের প্রতি কোনো অভিযোগ নেই এই বাবার। চান সন্তানরা ভালো থাকুক, আল্লাহ্‌ তাদের ভালো রাখুক।

রোববার (২২ সেপ্টেম্বর), তখন দুপুর গড়িয়ে বিকেল। আশুলিয়ার বাইপাইল এলাকায় এসএ পরিবহন বাইপাইল শাখার সামনে রিকশা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন বয়সের ভারে নুয়ে পড়া এক বৃদ্ধ। এমন সময় গন্তব্যে যাওয়ার জন্য রিকশা খুঁজছিলেন দুই যুবক। হঠা বৃদ্ধকে দেখে জানতে চান যাবেন কিনা? অবশেষে ২০ টাকা ভাড়া মিটিয়ে দুজনকে রিকশায় বসিয়ে তিনি চালাতে শুরু করলেন।

কিন্তু যে বয়সে তার একা চলতেই কষ্ট হয়, সে কিভাবে দুজন মানুষকে পা ঘুরিয়ে রিকশা টেনে নিয়ে যাবেন? বিষয়টি বুঝতে সময় লাগলো না দুই আরোহীর। বৃদ্ধের কষ্ট সইতে না পেরে মাত্র দুই মিনিট পরই রিকশা থেকে নেমে গেলেন তারা।

পরে রিকশা রাস্তার পাশে রেখে দুই যুবক জানতে চাইলেন এই বয়সেও কেন রিকশা চালান তিনি। আর তখনই সন্তানদের চরম অবহেলার কথা অকপটে স্বীকার করে কেঁদে ফেললেন এই বৃদ্ধ।

এদিকে পুরো ঘটনা মোবাইলে ক্যামেরা বন্দি করেন তাদের মধ্যেই একজন। পরে সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছাড়েন রিকশার আরোহী মামুন দেওয়ান। যা এখন ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে গেছে।

বৃদ্ধ জানায়, বার্ধক্যজনিত কারণে কয়েক বছর আগে বৃদ্ধের স্ত্রী মারা যান। তার তিন ছেলে, এক মেয়ে। মেয়েটাকে বিয়ে দিয়েছেন। বড় ছেলে আলতাফ হোসেন একজন সেনাবাহিনীর অফিসার। বর্তমানে তিনি টাঙ্গাইলে কর্মরত। তবে টাঙ্গাইলের কোন ক্যান্টনমেন্টে আছেন সেটি নিশ্চিত করে বলতে পারেননি তিনি। আর মেঝো ছেলে টেলিভিশন এবং অন্যান্য ইলেকট্রনিক্স মেকানিক এবং ছোট ছেলে রাজমিস্ত্রীর কাজ করেন।

ভিডিওতে বৃদ্ধকে বলতে শোনা যায়, বড় ছেলেকে লেখাপড়া শিখিয়ে উচ্চ শিক্ষিত বানিয়েছিলাম। ২৬ বছর আগে সেনাবাহিনীর চাকরি নিয়ে দিয়েছি। তারপর কয়েক দফায় টাকাও দিয়েছি। এখন ছেলে ঢাকায় বাড়ি করেছে। কিন্তু আমার কোনো খোঁজ খবর নেয়না।

জানা যায়, চারজন ছেলে-মেয়ে থাকতেও বৃদ্ধ বাবার জায়গা হয়নি কোথাও। ভাড়া বাসায় থাকেন আশুলিয়ার বাইপাইলে। পেটের দায়ে রাত পোহালেই ছুটতে হয় রিকশা নিয়ে। বৃদ্ধ হওয়ায় সব মানুষই তার রিকশায় উঠতে চান না, যার কারণে কোনদিন ১০০, আবার কোনদিন ১৫০ টাকা রোজগার করেন। এই দিয়েই বাসা ভাড়া এবং খেয়ে না খেয়ে কষ্ট করে দিন পার করছেন।

মামুন দেওয়ান আশুলিয়া থানাধীন পাথালিয়া ইউনিয়নের কুরগাও পুরাতন পাড়া এলাকার সাঈদ দেওয়ানের ছেলে ।

ঘটনার সম্পর্কে তিনি বলেন, রোববার বিকালের দিকে এসএ পরিবহন বাইপাইল শাখার সামনে থেকে ভলিবদ্দ বাজারে যাওয়ার জন্য আমরা দুইজন বৃদ্ধের রিকশায় উঠি।

উঠার আগে বললাম, নিতে পারবেন কি চাচা? তিনি বললেন, বাবা উঠেন। না নিতে পারলে টাকা দিয়েন না। পরে উঠার পর দেখলাম রিকশা টেনে নিতে কষ্ট হচ্ছিল তার। চেষ্টা করছিলাম মুরব্বিকে রিকশায় বসিয়ে আমরা চালিয়ে নিয়ে যাব, কিন্তু অভিজ্ঞতা না থাকায় দুর্ঘটনার ভয়ে সেটাও পারিনি। পরে আশুলিয়া থানার সামনে গিয়ে নেমে গিয়ে তার সঙ্গে কথা বলি।

মামুন দেওয়ান বলেন, সেনাবাহিনীতে যারা চাকরি করেন আমরা মনে করি তারা দেশের বিবেকবান এবং তাদের বলা হয় সার্বভৌমত্বের প্রতীক। তাদের দারা কোনো অনাচার হবে এটি আমরা বিশ্বাস করি না। কিন্তু এই বৃদ্ধ বাবার জীবনের বাস্তবতা মর্মান্তিক। যে সন্তানকে মানুষের মতো মানুষ করেছেন অথচ এক ছেলে সরকারি চাকরি করলেও বৃদ্ধ বাবাকে দেখার কেউ নেই। আজ তিনি রাস্তায় কান্না করছে। যা খুবই লজ্জাজনক।