ছ‌বি‌তে দেখুন দ‌ক্ষিণ কো‌রিয়া ক‌রোনা প্র‌তি‌রো‌ধে কেন এগি‌য়ে

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম,আন্তর্জাতিক প্রতিনিধি,০৭ এপ্রিল : ২০ জানুয়ারি দক্ষিণ কোরিয়া প্রথম নোভেল করোনাভাইরাসের সন্দেহভাজন রোগী দেখা যায়। দেশটিতে মোট ৯ হাজার ৫৮৩ জন করোনায় আক্রান্ত হন, যাদের মধ্যে ১৫৮ জনের মৃত্যু হয়েছে; কিন্তু গত তিন সপ্তাহ ধরে সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা ১০০ বা তার নিচে রয়েছে। চীনের পর এক সময় করোনাভাইরাস দক্ষিণ কোরিয়ায় সবচেয়ে দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছিল; কিন্তু ব্যাপক পরীক্ষাসহ গৃহীত অন্যান্য কর্মকাণ্ডে দেশটিতে ভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের মধ্যে চলে আসে। বেশি বিপর্যয় সৃষ্টির আগেই করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় দক্ষিণ কোরিয়ার নেওয়া কার্যকর পদক্ষেপ খুবই প্রশংসিত হয়।

আসলে তারা কী কী পদক্ষেপ নিয়েছিলো সেগুলো দেখুন ছবিতে-

চীন ভাইরাসটিকে শনাক্ত করার কীট তৈরির তিন দিন আগে ৪ জানুয়ারি দক্ষিণ কোরীয় বিশেষজ্ঞরা করোনা পরীক্ষার পদ্ধতি আবিষ্কার করে ফেলে। ৯ জানুয়ারি তারা সন্দেহজনক আক্রান্তদের পরীক্ষা করা শুরু করে। আগ্রাসী ও টেকসই পরীক্ষা পদ্ধতি ব্যবহার করে দক্ষিণ কোরিয়া করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের গতি কমিয়ে আনে। গত জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত অন্তত ২ লাখ ৫০ হাজার মানুষের শারীরিক পরীক্ষা করেছেন বলে জানিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা।

দক্ষিণ কোরিয়ায় কোভিড-১৯–এ আক্রান্ত হওয়ার ঘটনার বেশির ভাগই থেগু শহরের। দেশটির দক্ষিণ-পূর্বের এই শহরকে এখন প্রাদুর্ভাবের কেন্দ্র বলা হচ্ছিল। খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ভুক্ত শিনচেওনজি চার্চের অনুসারীদের মাধ্যমে ভাইরাসটি ছড়ায়। মনে করা হচ্ছে, চার্চের আক্রান্ত সদস্যরা থেগুতে বিভিন্ন কর্মসূচিতে যুক্ত হওয়ার পর ভাইরাসটি একজন থেকে অন্যজনে ছড়াতে শুরু করে এবং এখন দেশজুড়ে ছড়িয়েছে।

দক্ষিণ কোরিয়ার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ বলছে, ওই খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের ৬১ বছর বয়সী এক নারী প্রথম আক্রান্ত হন। তাঁর গত সপ্তাহে করোনাভাইরাস পরীক্ষার ফল পজিটিভ আসে।

শুরুতে ওই নারী পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে যেতে অস্বীকৃতি জানান। জ্বর নিয়ে নিয়ে তিনি চার্চের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন বলে জানা যায়। শিনচেওনজি চার্চ করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার ঘটনায় তাদের দায়ী করে নানা সমালোচনাকে অন্যায় বলে মন্তব্য করেছে।

দক্ষিণ কোরিয়ায় বাস কিংবা মেট্রো সব যানবাহনে কিছুক্ষণ পরপর কোরিয়ান ও ইংরেজিতে বেজে উঠত করোনা প্রতিরোধে সাবধানতা। এমনকি রাস্তাঘাটে বড় বড় বিলবোর্ড কিংবা প্ল্যাকার্ডে প্রচারের কমতি ছিল না।

 

সর্বাধুনিক টেলিপ্রযুক্তির সাহায্যে সম্ভাব্য রোগীদের ট্রেকিং করে ভাইরাস টেস্টের আওতায় নিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে, যারা ভাইরাসে পজিটিভ হয়েছেন, তাদের মুভমেন্ট জনসাধারণকে জানিয়ে দেওয়া হচ্ছিল কোরিয়া সরকারের পক্ষ থেকে, যেন মানুষ সচেতন হতে পারে।

 

প্রায় ৯৯ শতাংশ মানুষ বাড়ির বাইরে মাস্ক ব্যবহার করছে, এমনকি মাস্ক ব্যবহার না করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়িতে ওঠার কোনো অনুমতি নেই। অন্যের সঙ্গে কথা বলতে গেলে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করতে হবে, কারণ ভাইরাসটি বায়ুবাহিত না হলেও মুখের ড্রপলেটের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, তাই মাস্ক ব্যবহারে এই ড্রপলেট ছড়িয়ে পড়াকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়, সঙ্গে রোগের ট্রান্সমিশনও!

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিল্ডিংগুলোতে সাইড দরজা বন্ধ রেখে শুধু মেইন দরজা খোলা রাখা হয়েছে। দরজার সামনেই হ্যান্ড স্যানিটাইজারের বোতল রাখা আছে আর নোটিশে অনুরোধ করা হয়েছে, স্যানিটাইজার দিয়ে হাত ভালোভাবে পরিষ্কার করে বিল্ডিংয়ে প্রবেশের। প্রতিদিন অন্তত একবার পুরো বিল্ডিংকে ফোগার মেশিনে স্যানিটাইজ করা হচ্ছে।

যেকোনো জনসমাবেশ নিষিদ্ধ করা হলো। ধর্মালয়গুলো বন্ধ রাখার অনুরোধ করা হলো। খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া মানুষকে বাড়ির বাইরে আসতে নিরুৎসাহিত করা হলো।

দ্রুত এবং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে স্বাস্থ্য পরীক্ষা আর সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য বিপুল সংখ্যায় পরীক্ষাকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। কোয়ারেন্টিনে (সঙ্গনিরোধ) থাকা ব্যক্তিদের নজরদারিতে রাখতে এবং নিজেই নিজের স্বাস্থ্য পরীক্ষা যাতে করতে পারেন, সে জন্য অ্যাপস ব্যবহার করা হয়েছে। করোনাভাইরাস সংক্রমিত দেশ থেকে যারাই এসেছেন, ব্যাপকভাবে তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়েছে। তারা যে দেশের নাগরিকই হন, তাঁরা যাতে সংক্রমণ না ছড়ান, সেটা নিশ্চিত করতে এটা করা হয়েছে। প্রতিদিন কতজনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হলো এবং নতুন করে কতজন আক্রান্ত হয়েছেন—সে সম্পর্কে প্রতিদিন তথ্য প্রচার করা হয়েছে।