ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম,রাজশাহী প্রতিনিধি,৩০ মার্চ : রাজশাহীর রিকশাচালক সুমি ক্রুসের (৪৮) খোঁজ নিয়েছেন খোদ তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
সুমির দেশের বাড়ি নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার পার্বন্নী গ্রামে। প্রায় ১৫ বছর আগে তার স্বামী মারা যান। তারপর কোলের দুই সন্তানকে নিয়ে কিছুদিন বাবার বাড়িতে থাকেন সুমি।
বাবা মারা যাওয়ার পর তিনি হয়ে পড়েন আশ্রয়হীন। দুই সন্তানকে নিয়ে চলে আসেন রাজশাহী। এখন নগরীর পাঠারমোড় এলাকায় একটি দোকানের পাশে পলিথিন দিয়ে ঘর বানিয়ে থাকেন। জীবিকার তাগিদে তিনি রিকশা চালান।
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সরকার খুব প্রয়োজন ছাড়া সাধারণ মানুষকে ঘর থেকে বের হতে বারণ করছে। ফলে রাস্তায় কমেছে যাত্রীর সংখ্যা। গত তিনদিন ধরে সুমির রিকশার মালিককে দেয়ার ২০০ টাকাই তুলতে পারছিলেন না।
সুমিকে নিয়ে কয়েকটি গণমাধ্যমে একটি মানবিক সংবাদ প্রকাশ হয়। এরপর দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সুমির সঙ্গে যোগাযোগ করেন অনেকেই।
এদের মধ্যে রোববার রাতে খোদ তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারকে ফোন করেন। তিনি সুমির ব্যাপারে কিছু করার নির্দেশনা দেন। পরে সোমবার দুপুরে ডাবলু সরকার সুমিকে ডেকে নিয়ে একটি নতুন রিকশা কিনে দেন।
এ ছাড়া এক মাস রিকশা না চালিয়ে ঘরে থাকতে সুমিকে নগদ পাঁচ হাজার টাকা এবং বেশকিছু খাদ্যসামগ্রী দেন।
তখন ডাবলু সরকার সুমিকে জানান, তথ্যমন্ত্রীর নির্দেশনা মোতাবেক তিনি সুমিকে এ সব দিলেন। সব সময় তার পাশে থাকবেন।
এর আগে সকালে জেলা প্রশাসক হামিদুল হক সুমিকে তার কার্যালয়ে ডাকেন। এ সময় তিনি সুমিকে তিন হাজার টাকা, একটি মশারি এবং বেশকিছু খাদ্যসামগ্রী দেন। তারও আগে ভোরেই নগরীর ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মতিউর রহমান মতি সুমিকে নিজের কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে কিছু টাকা এবং খাদ্যসামগ্রী দেন।
নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার যখন সুমিকে রিকশার চাবি দিচ্ছিলেন ঠিক তখনই সুমির জন্য সেখানে খাদ্যসামগ্রী আনেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক উপ-দফতর সম্পাদক প্রভাষক শরিফুল ইসলাম। আসেন একজন ছাত্রলীগ নেতাও। তিনি সুমিকে দোকানে নিয়ে গিয়ে খাদ্যসামগ্রী কিনে দেন।
নগরীর ভদ্রা ও বাটার মোড় এলাকার দুই ব্যক্তি সুমিকে ডেকে নগদ টাকা দেন। কাজীহাটা এলাকার এক গৃহিণী দেন খাদ্যসামগ্রী।
এ ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অনেকেই সুমিকে বিকাশের মাধ্যমে আর্থিক সহযোগিতা করেন। তারা পরিচয় প্রকাশ করতে চাননি। নিউইয়র্ক এবং ইতালি থেকেও ফোন পেয়েছেন সুমি।
সুমির ফোন নম্বর সংগ্রহ করেছেন একজন সহকারী পুলিশ সুপার এবং বেশ কয়েকটি বেসরকারি সংস্থার কর্মকর্তা। একটি শিল্প প্রতিষ্ঠানসহ আরও অনেকেই সুমির পাশে দাঁড়াতে চেয়েছেন।
মানুষের এমন সহানুভূতিতে সুমি আবেগাপ্লুত। তিনি বলেন, রাজশাহী শহরে আসার পর এই প্রথম এত মানুষের ভালোবাসা পেলাম। দুনিয়ায় এখনও মানুষ আছেন, যারা মানুষের পাশে থাকেন। মানুষকে ভালোবাসেন। আজকে তার প্রমাণ পেলাম।