ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম,যশোর প্রতিনিধি,২৮ মার্চ : তিন বৃদ্ধকে কান ধরিয়ে শাস্তি দেওয়ার ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর যশোরের মনিরামপুর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাইয়েমা হাসানকে তার দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
এদিকে এ ঘটনায় সাইয়েমা হাসানকে আইন পড়ার পরামর্শ দিয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন এক আইনজীবী। শনিবার (২৮ মার্চ) সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আরিফুল হক রোকন সাইয়েমা হাসানের ইমেইলে চিঠি দেন।
চিঠি দেওয়ার বিষয়টি ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কমকে নিজেই নিশ্চিত করে অ্যাডভোকেট আরিফুল হক রোকন বলেন, তিন বৃদ্ধকে কান ধরিয়ে শাস্তি দেওয়া ঠিক হয়নি। এটি সম্পূর্ণ বেআইনি। তাকে আইন মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য ইমেইল করেছি।’
চিঠিটি পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো:
‘মাননীয়া, আপনার অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, বাংলাদেশে দণ্ডবিধি ধারা ৫৩ অনুযায়ী পাঁচ ধরনের শাস্তির বিধান রয়েছে । অর্থাৎ একজন ব্যক্তি যে ধরনের কিংবা যত বড় অপরাধই করুক না কেন এই ৫ ধরনের শাস্তির বাইরে অন্যকোনও শাস্তি তাকে দেওয়া যাবে না । সেসব সাজা হচ্ছে:
প্রথমত-মৃত্যুদণ্ড।
দ্বিতীয়ত: যাবজীবন কারাদণ্ড।
তৃতীয়ত: বাতিল করা হয়েছে।
চতুর্থত: কারাদণ্ড, যা দুই প্রকারের হতে পারে, যথা:-
(১) সশ্রম, অর্থাৎ কঠোর শ্রমসহ এবং
(২) বিনাশ্রম,
পঞ্চমত:সম্পত্তির বাজেয়াপ্তি;
ষষ্ঠত অর্থদণ্ড ।
ব্যাখ্যা (ঊীঢ়ষধহধঃরড়হ):-
যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হলে, কারাদণ্ড অবশ্যই সশ্রম হবে।
বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩৫(৫) এ বলা হয়েছে কোন ব্যক্তিকে যন্ত্রণা দেওয়া যাইবে না কিংবা নিষ্ঠুর, অমানুষিক বা লাঞ্ছনাকর দণ্ড দেওয়া যাইবে না কিংবা কাহারও সহিত অনুরূপ ব্যবহার করা যাইবে না।
অতএব বাংলাদেশে প্রচলিত আইনে কাউকে বেত্রাঘাত বা চাবুকাঘাত, শিরচ্ছেদ বা অঙ্গচ্ছেদ, দীপান্তর কিংবা একঘরেকরণ, নগ্নকরণ, পাথর নিক্ষেপ কিংবা কান ধরে উঠবস করানো , এ ধরনের অমানুষিক বা লঞ্চনাকর শাস্তির কোন বিধান নেই । বরং এ ধরনের শাস্তি প্রদানও আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ । কারণ অপরাধী যতবড় অপরাধই করুক না কেন স্রষ্টার সৃষ্ট মানুষ হিসাবে তার মানবিক মর্যাদা রয়েছে। আর সরকার কতৃক প্রতিষ্ঠিত এখতিয়ার সম্পন্ন ও যোগ্যতা সম্পন্ন আদালত ব্যতিত অন্য কেউ কোন অপরাধীকেই অপরাধী হিসাবে ঘোষণা ও কোনও প্রকার শাস্তি প্রদানের অধিকার রাখেন না।’
প্রসঙ্গত, নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণরোধে মনিরামপুরে মাক্স না পরার দায়ে শুক্রবার বিকেলে সাইয়েমা হাসানের ভ্রাম্যমাণ আদালত তিন বৃদ্ধকে কান ধরিয়ে দাঁড় করিয়ে রাখেন। শুধু তাই নয়, কান ধরিয়ে দাঁড় করিয়ে রাখার পর সাইয়েমা হাসান নিজে ওইচিত্র তার মোবাইলে ধারণ করেন। এই ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে নানা সমালোচনা হয়।