মানবতার সেবায় অনন্য নজির স্থাপন করলেন পুলিশ কর্মকর্তা একে আজাদ। গতকাল বুধবার তিনি একটি ‘লাশ’-এর সেবা করে তার জ্ঞান ফিরিয়ে রীতিমতো মানবতার ফেরিওয়ালা বনে গেছেন।
ডিএমপি নিউজের খবরে বলা হয়, ঘটনাটি বুধবারের। সময় তখন দুপুর আনুমানিক ২টা। নরসিংদীর পলাশ উপজেলার পলাশ বাজার সংলগ্ন ব্রিজের পাশে সাদা কাফনে মোড়ানো একটি লাশ পড়ে আছে। স্থানীয়রা লাশটি দেখে ৯৯৯-এ কল করেন। ৯৯৯ এর মাধ্যমে বিষয়টি পলাশ থানায় জানানো হয়।
সংবাদ পেয়ে পলাশ থানার অফিসার ইনচার্জ শেখ মো. নাছির উদ্দিন তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখতে দায়িত্ব দেন উপ-পুলিশ পরিদর্শক আজাদ হোসেনকে। তিনি দ্রুত ছুটে যান ঘটনাস্থলে। সেখানে গিয়ে তিনি দেখতে পান সাদা কাফনে মোড়ানো লাশটি পড়ে আছে। কাফনের ভাঁজ খুলে দেখেন, লাশের ঠোঁট নড়ছে। তাকে দ্রুত হাসপাতালে নেয়ার জন্য গাড়ি খুঁজতে থাকেন তিনি। সেই সময় সেখানে কোনো গাড়িই তিনি পেলেন না। এমন সময় তিনি পাশে একটি ভ্যানগাড়ি দেখতে পান। কিন্তু ভ্যানগাড়ির চালককে আশেপাশে কোথাও খুঁজে পাওয়া গেল না। কোন কিছু না ভেবে লোকটিকে ভ্যানে উঠিয়ে নিজেই ভ্যান চালাতে শুরু করেন। চিন্তা একটাই যত দ্রুত লোকটাকে হাসপাতালে নেয়া যায়। এদিকে লোকটির শরীর থেকে প্রচণ্ড দুর্গন্ধ বের হতে লাগলো। তিনি পলাশ বাজারে এসে একটি লুঙ্গি কিনে তাকে পরিয়ে দেন এবং কাফনের কাপড় খুলে ফেলেন। লোকটিকে নিয়ে পলাশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যান। তাকে কোলে করে হাসপাতালের দোতলায় ওঠান।
হাসপাতালে নেয়ার পর কোনো ডাক্তার লোকটির গায়ের দুর্গন্ধে তার কাছে আসতে চাচ্ছিলেন না। পরে তিনি গামছা দিয়ে লোকটির সারা শরীর মুছে দিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করান। চিকিৎসা দেওয়ার পর সন্ধ্যার দিকে তার জ্ঞান ফিরে আসে। তবে লোকটি কোনো কিছুই বলতে পারেন না। লোকমুখে শুনা যায় তার বাড়ি গাজীপুরের কাপাসিয়ায়।
এ বিষয়ে পলাশ থানার উপ-পুলিশ পরিদর্শক আজাদ হোসেন জানান, লোকটিকে যে অবস্থায় পাওয়া গেছে, যে কেউ দেখলে মনে করবে তিনি মৃত। এমনকি গায়ের দুর্গন্ধে কেউ তার কাছে পর্যন্ত যেতে চায়নি। পুলিশ হিসেবে নয় নিজের মনের মানবিক বোধ থেকে তাকে আমি সুস্থ করার জন্য কাজ করেছি। আমি তার গায়ের ময়লা দুর্গন্ধযুক্ত কাপড় পাল্টে দিয়েছি এবং তার প্রস্রাব-পায়খানা নিজের হাতে পরিষ্কার করে দিয়েছি।
তিনি আরো বলেন, লোকটি এখন পুরোপুরি সুস্থ আছেন। তার নাম আব্দুল হক পাগলা (৮০)। তার আত্মীয় স্বজনের খোঁজে তিনি গাজীপুরের কাপাসিয়াতে গিয়েছিলেন কিন্তু কাউকে খুঁজে না পেয়ে ফেরত আসেন। লোকটির আপনজনকে খুঁজে পেলে তাকে তাদের কাছে ফিরিয়ে দেয়া হবে।
পলাশ থানার অফিসার ইনচার্জ শেখ মো. নাছির উদ্দিন বলেন, যারা একজন জ্যান্ত মানুষকে লাশ বানিয়ে রাস্তার পাশে ফেলে যায়, তাদের কাছে জিতে গেছে পুলিশ কর্মকর্তা আজাদের মানবতা। তার সেবায় বেঁচে গেল লাশ হওয়া লোকটি।