ওরা ফেসবুক ডাক্তার?

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম,ষ্টাফ রিপোর্টার,১০ মার্চ : বিশ্বের নানা দেশে করোনাভাইরাস দ্রুত বেগে ছড়িয়ে পড়ছে এবং এখন পর্যন্ত এর কোনো প্রতিষেধক বের হয়নি। তবে দুর্ভাগ্যবশত করোনাভাইরাস ঠেকাতে নানা ধরনের স্বাস্থ্য পরামর্শ দেখা যাচ্ছে,  যেগুলোর অধিকাংশই অপ্রয়োজনীয়। কোনোটা আবার বিপজ্জনক। এ নিয়ে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরাও উদ্বেগ প্রকাশ করছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকেও এ নিয়ে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া পরামর্শ সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা কী বলছেন?

১৫ মিনিট অন্তর পানি পান : ফেসবুকের একটি অ্যাকাউন্ট থেকে এক পোস্টে একজন ‘জাপানি ডাক্তার’কে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসের জীবাণু মুখের মধ্যে ঢুকে পড়লেও ১৫ মিনিট পর পর পানি খেলে তা দেহ থেকে বের হয়ে যায়। এই পোস্টের একটি আরবি ভার্সন ২৫০,০০০ বার শেয়ার হয়েছে। লন্ডন স্কুল অব হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক স্যালি ব্লুমফিল্ড বিবিসিকে বলেছেন, এই দাবির পক্ষে সত্যিই কোনো প্রমাণ নেই। তাপমাত্রা ও আইসক্রিম পরিহার: গরমে এই ভাইরাস মরে যায় বলে সোশ্যাল মিডিয়াতে অনেক ধরনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। গরম পানি পান করা, গরম পানিতে গোসল করা, এমনকি হেয়ার ড্রাইয়ারের  ব্যবহারের সুপারিশ করা হচ্ছে। ইউনিসেফের উদ্ধৃতি দিয়ে এমনি একটি পোস্ট নানা দেশে সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করা হচ্ছে। এতে বলা হয়েছে, গরম পানি পান করলে এবং রোদের নিচে দাঁড়ালে করোনাভাইরাসের জীবাণু মরে যাবে। পাশাপাশি আইসক্রিম খেতেও বারণ করা হয়েছে। কিন্তু ইউনিসেফ বলছে, এটা স্রেফ ভুয়া খবর। ফ্লু ভাইরাস মানবদেহের বাইরে বেঁচে থাকতে পারে না। আর দেহের বাইরে এই জীবাণুকে মেরে ফেলতে হলে ন্যূনতম ৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা লাগবে, যেটা গোসলের পানি থেকে অনেক বেশি গরম। রুপার জল : কলোইডিয়াল সিলভার মূলত এমন জল যেখানে রুপার ক্ষুদ্র কণিকা মেশানো থাকে। মার্কিন টেলি-ইভানজেলিস্ট ধর্মপ্রচারক জিম বেকার এই জল ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন। তার অনুষ্ঠানে এক অতিথি দাবি করেন যে এই জল কয়েক ধরনের করোনাভাইরাস মেরে ফেলতে সক্ষম। অবশ্য তিনি স্বীকার করেন যে কভিড-১৯ এর ওপর এটা পরীক্ষা করে দেখা হয়নি। কলোইডিয়াল সিলভারের সমর্থকরা দাবি করেন যে এটা অ্যান্টিসেপটিক এবং নানা ধরনের চিকিৎসায় ব্যবহার করা চলে। কিন্তু মার্কিন স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ পরিষ্কার ভাষায় বলেছে, এই ধরনের রুপা ব্যবহার করে স্বাস্থ্যের কোনো উপকার হয় না। বরং এর ব্যবহারে কিডনির ক্ষতি হতে পারে ও লোকে জ্ঞান হারাতে পারে। তারা বলেন, লোহা এবং জিংক যেমন মানবদেহের জন্য উপকারী, রুপা তেমনটা নয়। রসুন : ফেসবুকে এমন অসংখ্য পোস্ট দেখা গেছে যেখানে লেখা : যদি রসুন খাওয়া যায় তাহলে সংক্রমণ প্রতিরোধ করা সম্ভব।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে ‘যদিও রসুন একটা স্বাস্থ্যকর খাবার এবং এটাতে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল আছে’ কিন্তু এমন কোনো তথ্যপ্রমাণ নেই যে রসুন নতুন করোনাভাইরাস থেকে মানুষকে রক্ষা করতে পারে। অনেক ক্ষেত্রেই এ ধরনের প্রতিকারক ব্যবস্থা মানুষের জন্য ক্ষতিকারক নয়। কিন্তু এর মাধ্যমেও ক্ষতি হতে পারে।

সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট সংবাদপত্রে খবর বের হয়েছে যে করোনাভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে একজন নারী দেড় কেজি কাঁচা রসুন খেয়েছে। এতে করে তার গলায় ভয়াবহ প্রদাহ শুরু হয়। পরে ওই নারীকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়। আমরা জানি ফল, সবজি, এবং পানি খেলে স্বাস্থ্য ভালো থাকে। কিন্তু নির্দিষ্ট কোনো খাদ্য দিয়ে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকানো সম্ভব হবে, এর পক্ষে কোনো প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি।