ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম,ষ্টাফ রিপোর্টার,০১ মার্চ : চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় কাভার্ড ভ্যানে বিক্রি হচ্ছে গ্যাস। এতে সিলিন্ডার বিস্ফোরণে আগুন লেগে মারাত্মক দুর্ঘটনার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন এলাকার সচেতন মহল।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ও প্রশাসনকে হাত করে কয়েকজন অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে নির্বিঘ্নে এই ঝুঁকিপূর্ণ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। এসব ব্যবসার সঙ্গে যারা জড়িত তারা সবাই সরকার দলীয়।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, উপজেলার তিনটি জায়গায় কাভার্ড ভ্যানে সিলিন্ডার বসিয়ে সহজে অবৈধভাবে চলছে গ্যাস বিক্রি। এর মধ্যে লোহাগাড়া উপজেলা সদরের কাজীর পুকুর পাড় এলাকায় একটি, পার্শ্ববর্তী ডিজিটাল গ্রামার স্কুলের পাশে একটি ও পদুয়া তেওয়ারী হাটে একটি জায়গায় এই গ্যাস বিক্রি হচ্ছে। প্রকাশ্য দিবালোকে ঝুঁকিপূর্ণ ভাবে কাভার্ড ভ্যান থেকে গ্যাস সরবরাহ করা হলেও কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কর্তৃপক্ষ কিংবা স্থানীয় প্রশাসন রহস্যজনক কারণে এদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে না। অন্যদিকে আয় ভাল হওয়ায় দক্ষিণ চট্টগ্রামে দিনদিন বাড়ছে ট্রাকে স্থাপিত এসব ভ্রাম্যমাণ সিএনজি স্টেশন। এমনকি স্টেশন বাড়াতে প্রতিযোগিতা চলছে সরকার দলীয় নেতাদের মধ্যে।
জানা যায়, পটিয়া ছাড়া দক্ষিণ চট্টগ্রামের অন্য কোথাও বৈধ সিএনজি স্টেশন নেই। পটিয়া থেকে সিএনজি গ্যাস আনতে গেলে দক্ষিণ চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলার ট্যাক্সি চালকদের দিনের অন্তত ২-৩ ঘণ্টা ব্যয় করতে হয়। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দক্ষিণ চট্টগ্রামের কেরানীহাট বাজারের উত্তর মাথায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের এক পাশে প্রায় চার মাস আগে প্রথম ভ্রাম্যমাণ সিএনজি স্টেশন করা হয়। বর্তমানে এই স্টেশনটি স্থান পরিবর্তন করে কেরানিহাট রাস্তার মাথা এলাকায় করা হয়। স্টেশনটি লাভের মুখ দেখায় অন্যরা উৎসাহিত হয়ে লোহাগাড়াসহ বিভিন্ন স্থানেও এ ব্যবসা শুরু করে।
লোহাগাড়ার তিনটি ভ্রাম্যমাণ সিএনজি স্টেশন পরিদর্শন করে দেখা গেছে, তিনটি কাভার্ড ভ্যানের পেছনে অনেক গুলো সিএনজি চালিত অটো রিকশা লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছে। কাছে গেলেই দেখা যায়, কাভার্ড ভ্যান থেকে পাইপ টেনে একের পর এক সিএনজি চালিত অটো রিকশায় গ্যাস দেওয়া হচ্ছে। খোলা আকাশের নিচে বসানো হয়েছে একটি টেবিল। সেখান থেকে দুই জন লোক চালকদের কাছ থেকে টাকা নিচ্ছেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ট্রাক বা কাভার্ড ভ্যানের উপর গ্যাসের সিলিন্ডার স্থাপনের কাজটি করা হয় চট্টগ্রামের পাহাড়তলী এলাকায়। তিন টন ওজনের প্রতিটি ট্রাক মাসিক ৪২ হাজার টাকায় ভাড়া করার পর প্রতিটি সিলিন্ডার ২০ হাজার টাকা করে কিনতে হয়। চট্টগ্রামের বিভিন্ন সিএনজি ফিলিং স্টেশনের কিছু অসাধু ব্যক্তি এসব সিলিন্ডার সরবরাহ করেন। প্রতিটি ৯০ ঘনমিটারের ৫০টি সিলিন্ডারে গ্যাস ভর্তি করতে প্রায় ৪০ হাজার টাকা লাগে। গভীর রাতে চট্টগ্রামের বিভিন্ন সিএনজি স্টেশন থেকে ট্রাক ভর্তি সিলিন্ডার গুলোতে গ্যাস ভরা হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভ্রাম্যমাণ সিএনজি স্টেশনের মালিক বলেন, সিএনজি চালিত অটো রিকশায় গ্যাসের ব্যাপক চাহিদা থাকার কারণে আয়ও বেশ ভাল হয়। বিক্রি করার পর প্রতি ট্রাকে দিনে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত লাভ থাকে।
রফিকুল নামের আরেকজন চালক জানান, বৈধ স্টেশন গুলোতে ১৫০ পয়েন্ট গ্যাসের মূল্য নেওয়া হয় প্রায় ১৯০ টাকা। অন্যদিকে লোহাগাড়ার ভ্রাম্যমাণ স্টেশনগুলো থেকে প্রতি সিলিন্ডারে ১৫০ পয়েন্ট গ্যাস নেওয়ার জন্য প্রায় ৪০০ টাকা দিতে হয়। এরপরও সময় বাঁচানোর জন্য আমরা অতিরিক্ত টাকা দিয়ে ভ্রাম্যমাণ স্টেশনগুলো থেকে সিএনজি গ্যাস নেই। তাছাড়া মহাসড়কে সিএনজি চলা নিষেধ। এই অবস্থায় আমাদের কি করার আছে।
সাতকানিয়া ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন সূত্র বলছে, সিএনজি স্টেশন করার আগে ফায়ার সার্ভিস ও বিস্ফোরক লাইসেন্স নেওয়া বাধ্যতামূলক। কিন্তু তাদের এসব কিছুই নেই। ট্রাক ভর্তি সিলিন্ডার থেকে যেভাবে গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে তা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। যেকোনো মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
এ ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে লোহাগাড়া থানার ওসি (তদন্ত) মো. জহির উদ্দিন বলেন, অবৈধ গ্যাস বিক্রির বিষয়টি আমার নলেজে নেই। আপনি এই মাত্র জানালেন। এখন থেকে ব্যবস্থা নেবো।