ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম,আন্তর্জাতিক প্রতিনিধি,২৭ নভেম্বর : দুবাইসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে ড্যান্স ক্লাবে উচ্চ বেতনে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে নারায়ণগঞ্জ থেকে গত এক বছরে ৭২৯ জন তরুণীকে পাচার করেছে আন্তর্জাতিক পাচারকারী একটি চক্র। শুধু তাই নয়, কম বয়সী এ তরুণীদের বিদেশে নিয়ে যৌন পেশায় বাধ্য করা হতো। রাজি না হলে চলে নির্যাতন।
তাদের একজনের রিয়া (ছদ্মনাম) জানান, আমি এখানে ডান্স শিখেছিলাম। ওই চক্রের এক সদস্য ভালো বেতনে ডান্স বারে চাকরির কথা বলে আমাকে দুবাইতে নিয়ে যায়। সেখানে পৌঁছানোর পর প্রথম ১০ থেকে ১২ দিন আমার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করছিল চক্রটি এবং বারে ডান্স করার সুযোগও দিয়েছে। এরপরে ওই বারের গেস্টদের ফোন নম্বর দেয়া হয় এবং আমাকে কথা বলতে বলে, আমি রাজি না হওয়ায় চলে আমার ওপর নির্যাতন।
তিনি বলেন, দুবাইয়ের ওই ডান্স বারে টোকেন সিস্টেমে যৌন কাজ হয়। আর প্রতিদিন ২০টি টোকেন না দিতে পারলে ওই চক্রের সদস্যরা মারধর করে। এরপর আমাদের জোর করে মদ পান করায়, তারপর আমাদের রুমে ওই গেস্টদের পাঠিয়ে দেয়। এভাবেই দুবাইতে যন্ত্রণাময় কয়েকমাস কাটিয়েছি আমরা। সাথে ওই বারে বাংলাদেশি কয়েকটি মেয়ে ছিল। কথা না শুনলে তাদের ওপর চলতো নির্যাতন।
দুবাইতে পাচারের শিকার আরেক তরুণী জাহানারা (ছদ্মনাম) বলেন, দুবাইতে আমাকে যে স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়, সেখানে প্রায় ৫ হাজারের মতো বাংলাদেশি তরুণীকে দেখেছি। যারা সবাই প্রতারণার শিকার। তাদের দিয়ে দুবাইয়ের বিভিন্ন বারে দেহব্যবসা করানো হতো। নির্ধারিত টোকেন না দিতে পারলে তাদের ঘরে বন্দী করে দু’তিনদিন খাবার বন্ধ করে দেয় চক্রটি। তাতেও যদি কাজ না হয় তাহলে চলে টানা মারধর।
এ বিষয়ে র্যাব-১১ এর ভারপ্রাপ্ত ব্যাটালিয়ান অধিনায়ক (সিও) স্কোয়ার্ডন লিডার রেজাউল হক জানালেন, পাচারে হওয়া মেয়ের বেশিভাগ ১৬ থেকে ২২ বছর বয়সী। আমাদের অনুসন্ধান বলছে, পাচার হওয়া তরুণীরা নিম্নবিত্ত পরিবারের সুন্দরী মেয়ে। তাই খুব সহজেই তাদের প্রলোভনে আকৃষ্ট করা যায়। আর এ দুর্বলতাকেই কৌশল হিসেবে নিয়েছে আন্তর্জাতিক নারী পাচারকারী চক্রটি।
এ চক্রের সন্ধান পায় র্যাবের একটি দল। পরে গত ২৩ নভেম্বর রাতে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ ও রাজধানীর খিলগাঁও থানার গোড়ান এলাকা থেকে আটক করে আন্তর্জাতিক নারী পাচারকারী চক্রের ছয় সদস্যকে। ওই রাতেই আটকদের হেফাজতে থাকা চার তরুণীকে উদ্ধার করা হয়, যাদের পাচার করার প্রস্তুতি চলছিল।
আটকরা জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে তারা দুবাই ও মালয়েশিয়াসহ সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিভিন্ন স্টেট ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে ড্যান্স ক্লাবে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে গত এক বছরে অর্ধ সহস্রাধিক তরুণীকে পাচার করেছে।
এদিকে পাচারের পর উদ্ধার তরুণীরা জানান, বিদেশে ড্যান্স ক্লাবে কমপক্ষে ৫০ হাজার টাকা বেতনে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলার অন্তত পাঁচ হাজার বাংলাদেশি তরুণীকে পাচার করেছে এ চক্রটি।
সূত্র: সময় নিউজ টিভি