ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম,ঢাকা প্রতিনিধি,২৭ অক্টোবর : মোহাম্মদপুরে শিশু গৃহকর্মী জান্নাতী হত্যার ঘটনায় গৃহকর্ত্রী রোকসানা পারভিন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। জান্নাতিকে পিটিয়ে হত্যার ক্ষেত্রে তিনি যে নৃশংসতার পরিচয় দিয়েছেন তা কল্পকথার ডাইনিদের হার মানায়।শরীরে ভীষণ জ্বর নিয়ে গত মঙ্গলবার গৃহকর্ত্রীর ভয়ে লুকিয়ে ছিল শিশু গৃহকর্মী জান্নাতী (১২)। কিন্তু ঘরের কাজ না করে জান্নাতীর এই বসে থাকা সহ্য করতে পারেননি গৃহকর্ত্রী পিরোজপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সাইদ আহম্মেদের স্ত্রী রোকসানা পারভীন। টেনেহিঁচড়ে ঘরে এনে ছোট্ট জান্নাতীকে নির্দয়ভাবে মারধর করেন তিনি।
মারধরের কারণে নির্জীব হয়ে পড়লে তাকে দুই ঘণ্টা ফেলে রাখা হয় রান্নাঘরে। পরে জ্ঞান না ফেরায় বেগতিক অবস্থা দেখে রোকসানা ও সাইদ আহমেদ জান্নাতিকে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। ততক্ষণে জান্নাতি চলে গেছে না-ফেরার দেশে।পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে জান্নাতী হত্যা মামলার প্রধান আসামি রোকসানা পারভীন এসব তথ্য দিয়েছেন।মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদপুর থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) আবদুল আলিম আসামি রোকসানা পারভীনকে শুক্রবার আদালতে হাজির করেন। আসামি স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবনাবন্দি দিতে সম্মত হওয়ায় তা রেকর্ড করার জন্য আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা।আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জিয়াউর রহমান আসামির জবানবন্দি রেকর্ড করেন। জবানবন্দি রেকর্ড শেষে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।রোকসানার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন বলে জানিয়েছেন মোহাম্মদপুর থানার ওসি জিজি বিশ্বাস। তিনি বলেন, মামলার অপর আসামি রোকসানার স্বামী সাইদ আহমেদ পলাতক। তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।হত্যার আগে জান্নাতী ধর্ষণের শিকার হয়েছে এমন অভিযোগের বিষয়ে জিজি বিশ্বাস বলেন, জান্নাতীকে পিটিয়ে হত্যার কথা স্বীকার করলেও শিশুটি মৃত্যুর আগে ধর্ষিত হয়েছে এবং এতে তার স্বামীর সম্পৃক্ততা রয়েছে এমন কোনো কথা রোকসানা স্বীকার করেনি। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে ধর্ষণ বিষয়ে জানা যাবে।এদিকে মেয়ের মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছেন জান্নাতীর বাবা জানু মোল্লা। তিনি বলেন, পেট ভরে তিন বেলা ভাতের আশায় বড়লোকের বাড়িতে আমার প্রাণপাখিটারে (জান্নাতী) কাজে দিছিলাম। তারা পেট ভরে ভাত তো দিলই না উল্টো প্রাণডাই কাইড়া নিল। আমি আমার পাখির (জান্নাতী) হত্যার বিচার চাই।রোকসানাকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে পুলিশসূত্রে বলা হয়েছে, সাইদ আহমেদ একসময় বগুড়ায় চাকরিরত ছিলেন। জান্নাতির বাড়ি বগুড়ার গাবতলী। চার বছর আগে জান্নাতি সাইদের বাড়িতে গৃহকর্মী হিসেবে যোগ দেয়। এরপর সাইদের পরিবারের সঙ্গে জান্নাতিও ঢাকায় চলে আসে। সাইদ আহমেদ পরিবার নিয়ে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে স্যার সৈয়দ রোডের একটি ছয় তলা ভবনের নিচতলার নিজস্ব ফ্ল্যাটে থাকেন।এ দম্পতির সপ্তম শ্রেণিপড়ুয়া একটি ছেলে রয়েছে। গত রবিবার থেকে সাইদ ঢাকায় অবস্থান করছিলেন। ওই বাসায় জান্নাতি ছাড়া আরও দুজন গৃহকর্মী কাজ করেন। ঢাকায় আসার পর প্রায়ই সামান্য বিষয়ে জান্নাতির ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালাতেন রোকসানা। যার স্পষ্ট ছাপ ছিল জান্নাতির নিথর দেহে। লাশের পা থেকে মাথা পর্যন্ত অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন সাক্ষ্য দেয় জান্নাতি কী ধরনের ডাইনির কবলে পড়েছিল।পুলিশ সূত্র আরও জানায়, মামলা হওয়ার আগে টাকার বিনিময়ে বিষয়টি রফা করতে বহু চেষ্টা করেছিলেন সাইদ আহমেদ। কিন্তু কাজ না হওয়ায় পরে গা-ঢাকা দেন তিনি।