গ্রেনেড হামলা : সাজাপ্রাপ্ত ১৬ আসামি ধরাছোঁয়ার বাইরে

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম,ঢাকা প্রতিনিধি,২১ আগস্ট : ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত ১৬ আসামি এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। তাদের গ্রেফতারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সরকারের সংশ্লিষ্টদের তৎপরতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর এ মামলার রায় ঘোষণা করা হয়। এখনো এ ১৬ পলাতককে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে তেমন কোনো অগ্রগতি নেই।সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, পলাতক আসামিদের প্রায় সবাই দেশের বাইরে আছেন। কয়েকজনের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্যও রয়েছে। এর মধ্যে ৪ জন হারিছ চৌধুরী, মোহাম্মদ হানিফ, মাওলানা তাজউদ্দিন মিয়া ও রাতুল আহমেদ বাবুর বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের নোটিশ রয়েছে। তাদেরও ফেরানো যাচ্ছে না। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সরকারের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পলাতকদের ফিরিয়ে আনতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন তারা।

এ মামলায় সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামিরা হচ্ছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান, চেয়ারপারসনের সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, কুমিল্লার মুরাদনগরের বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দার, হানিফ পরিবহনের মালিক মোহাম্মদ হানিফ, নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের শীর্ষ নেতা মাওলানা মো. তাজউদ্দিন মিয়া, রাতুল আহমেদ বাবু, মাওলানা মহিবুল মুত্তাকিন, আনিসুল মুরসালিন ওরফে মুরসালিন, মোহাম্মদ খলিল, জাহাঙ্গির আলম বদর, মো. ইকবাল, মাওলানা আবু বকর ওরফে হাফেজ লোকমান হাওলাদার, মুফতি আবদুল হাই, মাওলানা লিটন ওরফে দেলোয়ার হোসেন ওরফে জোবায়ের ও মুফতি শফিকুর রহমান।তারেক রহমান : লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানকে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে প্রক্রিয়া চলছে বলে বিভিন্ন সময় সরকারের মন্ত্রীসহ দায়িত্বশীলরা সাংবাদিকদের জানান। ২০১৪ সালে তাকে ফেরত দিতে যুক্তরাজ্য সরকারকে চিঠি দেয় ঢাকা। কিন্তু তাকে ফেরানো যায়নি। ২০০৮ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তিনি প্যারোলে মুক্তি নিয়ে লন্ডনে চলে যান। তিনি সেখানে থাকা অবস্থাতেই সম্পূরক চার্জশিটে তার নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়।মাওলানা তাজউদ্দিন মিয়া : ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পরই ভুয়া পাসপোর্টে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান মাওলানা মো. তাজউদ্দিন মিয়া। তিনি দক্ষিণ আফ্রিকায় অবস্থান করছেন বলে জানা যায়। ২০১৬ সালের নভেম্বরে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম দক্ষিণ আফ্রিকা সফর করেন। ওই সময় তিনি তাকে ফেরানোর বিষয়ে ওই দেশের সরকারের দায়িত্বশীলদের সঙ্গে প্রাথমিকভাবে আলোচনাও করেন। তবে কোনও অগ্রগতি নেই। তার নাম ইন্টারপোলের রেড নোটিশে রয়েছে।কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ : বিএনপিদলীয় সাবেক সংসদ সদস্য শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ সংযুক্ত আরব আমিরাতে রয়েছেন বলে মনে করছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্বশীলরা। ওই দেশের কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু তাকেও ফেরানো যাচ্ছে না। তার নামও ইন্টারপোলের তালিকায় ছিল। তবে তার আইনজীবীরা বিষয়টি রাজনৈতিক ইস্যু হিসেবে তুলে ধরে ইন্টারপোলের রেড নোটিশের তালিকা থেকে নাম বাদ দিতে সক্ষম হন।আনিসুল মুরসালিন ও মহিবুল মুত্তাকিন : হরকাতুর জিহাদের অন্যতম শীর্ষ জঙ্গি মাওলানা মহিবুল মুত্তাকিন, আনিসুল মুরসালিন ওরফে মুরসালিন দুই ভাই। তারা বর্তমানে ভারতের তিহার কারাগারে আছেন। তাদেরও ফেরাতে পারেনি সরকার।অন্য পলাতক আসামিদের মধ্যে হানিফ পরিবহনের মো. হানিফ থাইল্যান্ডে, রাতুল আহমেদ বাবু ইতালি কিংবা দক্ষিণ আফ্রিকায়, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দার কানাডায়, জঙ্গি নেতা শফিকুর রহমান, মুফতি আবদুল হাই, মাওলানা আবু বকর, মো. ইকবাল, খলিলুর রহমান, জাহাঙ্গীর আলম ওরফে বদর, মাওলানা লিটন ওরফে জোবায়ের ওরফে দেলোয়ার পাকিস্তানে অবস্থান করছেন বলে সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা সূত্রগুলো জানায়।জানা গেছে, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার আসামি ছিল ৫২ জন। যুদ্ধাপরাধের মামলায় জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ এবং সিলেটে সাবেক ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলা মামলায় জঙ্গিগোষ্ঠী হরকাতুল জিহাদের নেতা মুফতি আবদুল হান্নান ও তার সহযোগী শরীফ শাহেদুল বিপুলের ফাঁসি ২১ আগস্ট মামলা রায়ের আগেই কার্যকর হয়ে যায়। ফলে তাদের নাম বাদ দিয়ে আসামির সংখ্যা দাঁড়ায় ৪৯ জনে। রায় ঘোষণার সময় পলাতক ছিলেন ১৮ জন। এ বছরের শুরুতে পুলিশের সাবেক ডিআইজি খান সাঈদ হাসান ও ঢাকা মহানগর পুলিশের সাবেক ডিসি (পূর্ব) ওবায়দুর রহমান খান দেশে ফিরে আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। পলাতক রয়েছেন ১৬ জন। সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে কারাগারে আছেন ৩৩ জন।