বিয়ের ৬ মাস পর স্ত্রীকে আগুনে পুুড়িয়ে হত্যা

SHARE

মোবাইল ফোনে পরিচয় অতপর বিয়ে। তবে মেহেদীর রং শুকাতে না শুকাতেই স্বামী ও শাশুড়ি কেরোসিন ঢেলে লাগিয়ে দেয়া আগুনে নিভে গেলো বাগেরহাটের কচুয়া শহীদ শেখ আবু নাসের মহিলা কলেজের ডিগ্রি ২য় বর্ষের ছাত্রী সোনিয়া আক্তারের (২০) প্রাণ প্রদীপ।

শনিবার সকালে কচুয়া উপজেলার গোপালপুর গ্রামে ভ্যানচালক বাবা মোজাহের শিকদারের বাড়িতে এখন চলছে শোকের মাতম। মৃত্যুর আগে শনিবার সকালে কচুয়া থানা পুলিশের কাছে দেয়া জবানবন্দিতে কলেজছাত্রী তার মৃত্যুর জন্য স্বামী মন্টু আকন ও তার শাশুড়িকে অভিযুক্ত করেছেন।

জানা গেছে, গত ছয় মাস আগে পিরোজপুর জেলার ভাণ্ডারিয়া উপজেলার রামপ্রসাদ ধাওয়া গ্রামের রজব আলীর ছেলে মন্টু আকনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে পরিচয়ের সূত্রে বিয়ে হয় কলেজছাত্রী সোনিয়ার। বিয়ের পর দুই মাস স্বামী মন্টুর সঙ্গে ঢাকায় বসবাস করেছেন সোনিয়া আক্তার। পরে স্বামীর সঙ্গে পিরোজপুরে ভাণ্ডারিয়া ধাওয়া গ্রামে শশুরবাড়িতে গিয়ে সোনিয়া জানতে পারেন তিনি তার স্বামীর দ্বিতীয় বউ। সেই সংসারে তার দুই সন্তানও রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সোনিয়ার সঙ্গে স্বামী মন্টু আকনের মনোমালিন্য তৈরি হয়। এক পর্যায়ে তিনি শ্বশুরবাড়ি ভাণ্ডারিয়া থেকে বাপের বাড়ি বাগেরহাটে আসার চেষ্টা চালান।

অগ্নিদগ্ধ সোনিয়ার মা মনোয়ারা বেগমের অভিযোগ শ্বশুরবাড়ি ভাণ্ডারিয়া থেকে বাগেরহাটে আসতে চাইলে গত ২৭ নভেম্বর রান্না ঘরে স্বামী ও শাশুড়ি সোনিয়াকে হাত-পা বেঁধে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারতে চেষ্টা চালান। কেরোসিন দিয়ে লাগালো আগুনে পুড়ে যায় সোনিয়ার শরীরের বেশিরভাগ অংশ। উপায়ান্তর না পেয়ে সোনিয়ার স্বামী মন্টু আকন ও তার পরিবার সোনিয়াকে প্রথমে পিরোজপুর হাসপাতালে ভর্তি করেন। পরে সেখান থেকে নেয়া হয় বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। কিন্ত সোনিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় অবশেষে সোনিয়াকে  ঢাকার বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়।

এদিকে, সোনিয়ার বাবা মোজাহার শিকদারকে মন্টু জানান, তার মেয়ে আগুনে পুড়ে বর্তমানে ঢাকায় ভর্তি রয়েছে। ভ্যানচালক মোজাহার শিকদার টাকা পয়সা জোগাড় করে ঢাকায় ছুটে যান। নিজ চোখে দেখেন মেয়ে সোনিয়ার করুণ পরিণতি। আগুনে জ¦লসে যাওয়া সোনিয়ার বাচার আশা ছেড়ে দেন সেখানকার চিকিৎসকরা। এমন সঙ্কটময় অবস্থায় ৪ ডিসেম্বর ঢাকা থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে মুমূর্ষু সোনিয়াকে বাগেরহাটে কচুয়া উপজেলার গোপালপুর বাবার বাড়িতে আনা। স্ত্রীকে রেখে চলে যায় স্বামী মন্টু আকন। স্বামী ও শাশুড়ির দেয়া আগুনে দগ্ধ সোনিয়া আক্তার আটদিন মৃত্যু যন্ত্রণা ভোগ করে শনিবার সকালে মারা যান।

কচুয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শমসের আলী জানান, মৃত্যুর আগে পুলিশের কাছে দেয়া জবানবন্দিতে সোনিয়া আক্তার তার মৃত্যুর জন্য স্বামী মন্টু আকন ও তার শাশুড়িকে অভিযুক্ত করেছেন।

ওসি আরও জানান, শনিবার সকালে নিহত সোনিয়া আক্তারের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য বাগেরহাট সদর হাসপাতাল মর্গে নেয়া হয়েছে।এ ঘটনায়  পিরোজপুর জেলার ভাণ্ডারিয়া থানায় মামলা দায়ের হবে করা হবে বলে তিনি জানান।