পঞ্চাশোর্ধ্ব মো. লাল মিয়ার বাড়ি স্বরূপকাঠি উপজেলার ইন্দিরহাট এলাকায়। জীবন-জীবিকার তাগিদে স্ত্রীকে নিয়ে ঝালকাঠি আসেন ১৯৯০ সালে। বাসা ভাড়া নেন শহরের কবিরাজ বাড়ি রোড এলাকায়। কাজ করছেন শ্রমিকের। কখনো রিকশাচালক আবার কখনো কাঠুরে।
শীতের সকাল, ঘণ কুয়াশা। কুঠার হাতে নিয়ে বের হয়েছেন কাজে। শহরের গুরুদাম ব্রিজের পূর্ব ঢালে কবিরাজ বাড়ি রোডে প্রবেশমুখে কাঠুরের কাজ করছেন তিনি। এসময় কথা হয় তার সঙ্গে। লাল মিয়া বলেন, চারজনের সংসার। এক ছেলে ও মেয়ে লেখা পড়া করে। শহরে বাসা বাড়ি নিয়ে থাকা-খাওয়া ও সন্তানদের লেখা পড়ার খরচ সব তাকেই করতে হয়।
বড় ছেলে সাইদুল ইসলাম সাদ্দাম কুতুবনগর আলিম মাদ্রাসা থেকে দাখিল পরীক্ষার্থী। প্রতি ক্লাসেই তার রোল নম্বর ছিল ১ অথবা ২। মেয়ের নাম শিল্পী, সেও সুগন্ধা পৌর আদর্শ মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী। তার মেধা ভালো। ছেলে-মেয়ের লেখাপড়া ও সংসার খরচ চালাতে হচ্ছে। শুকনো মৌসুমে কাঠুরের কাজ করি। বর্ষা মৌসুমে রিকশা চালাই। সন্তানরা ছোট থাকতে পুরো সময়টাই রিকশা চালাতাম। বর্তমানে রিকশা ভাড়া কম কিন্তু খরচ বেশি হওয়ায় দুই সময়ে দুই ধরনের কাজকে বেছে নিয়েছেন তিনি।
তিনি বলেন, খাবার ও খরচের জন্য আমাদের শীত আর বর্ষা নেই। খেতে হলে কাজ করতেই হবে। তিনি ঋণগ্রস্ত কিনা এ বিষয়ে বলেন, কোনো ঋণ ছিল না। কয়েকদিন পূর্বে সমস্ত দিন রিকশা চালিয়ে রাতে বাসায় ঢুকে ঘুমিয়ে পড়ি। সকালে উঠে দেখি রিকশা চোর নিয়ে গেছে। উপায়ন্তু না পেয়ে `আশা` অফিস থেকে ঋণ নিয়ে একটি রিকশা ক্রয় করি। কিন্তু রিকশা চালানোয় আয় কম হওয়ায় শুকনো মৌসুমে কাঠুরের কাজ করি। বর্ষাকালে তো কাঠুরের কাজ কম হয় তখন রিকশা চালাই।