এবারের আসন্ন পৌরসভা নির্বাচন হবে দলীয়ভাবে।দলীয় প্রতীকের এই নির্বাচনে নিবন্ধিত সব দলই অংশ নিতে পারবে। তাই এই নির্বাচনকে ঘিরে দেশব্যাপী নাশকতা চালিয়ে রাজনৈতিক সংকট প্রকট ও আইন-শৃঙ্খলা অবনতি করতে চাইছে জঙ্গি সংগঠনগুলো। অনুসন্ধানে এমন তথ্য জানা গেছে।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর গোয়েন্দা সূত্রগুলো বলছে, এমন প্রেক্ষাপটে দেশব্যাপী হামলার পরিকল্পনা রয়েছে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠনগুলোর। রাজনৈতিক দলগুলোর অন্তঃকোন্দল ও দলভেদে কোন্দল উস্কে দিয়ে বিভাজনের রাজনীতিকে চাঙ্গা করে ফায়দা হাসিল করতে চাইছে জঙ্গি সংগঠনগুলো।
আইন প্রয়োগকারী সংস্থার একটি সূত্র জানায়, সারাদেশকে ১০টি ভাগে ভাগ করে নাশকতার পরিকল্পনার ছক তৈরি ও হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে জঙ্গি সংগঠনগুলো। পৌরসভা নির্বাচন উপলক্ষ্যে নির্বাচনী সভা সমাবেশে হামলা চালানো হতে পারে।
২০০৫ সালের ৮ নভেম্বর রংপুর থেকে শায়খ আবদুর রহমানের জামাতা আবদুল আউয়ালকে গ্রেফতারের সময়ও জানা যায়, জেএমবি সারা দেশকে ১০টি ভাগে ভাগ করে নাশকতার পরিকল্পনার কথা। বর্তমানেও একইভাবে ভিন্ন নামে জেএমবি তৎপরতা শুরু করেছে। একে অপরের সঙ্গে গোপন বৈঠকের মাধ্যমে নতুন দল গঠনের কাজ করছে জঙ্গি সংগঠনগুলো।
গোয়েন্দা সূত্রের দাবি, আপাতত নতুন দল গঠন করে নির্বাচনে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই জঙ্গি সংগঠনগুলোর। তাছাড়া আদর্শিক দ্বন্দ্বের কারণে অন্য দলগুলোর সঙ্গেও নির্বাচনে যাবে না সংগঠনগুলো। সেজন্য তারা দেশে বড় ধরণের নাশকতা চালিয়ে নির্বাচন বানচাল ও বিবাদমান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কোন্দল ও অবিশ্বাস তৈরিই তাদের পরিকল্পনা।
পুলিশের গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, আনসারুল্লাহ বাংলা টিমকে জঙ্গি সংগঠন উল্লেখ করে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এরপর থেকেই নিজেদের মধ্যে ও সমমনা জঙ্গি সংগঠনগুলোর মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধি পায়।
গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের দাবি, অধিকাংশ নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে হট লিঙ্ক রয়েছে নিবন্ধন বাতিল হওয়া ও মানবতাবিরোধী ইস্যুতে কাবু জামায়াতের। দল হিসেবে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল হওয়ায় আসন্ন পৌর নির্বাচনে দলীয়ভাবে অংশ নিতে পারছে না দলটি। এক্ষেত্রে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে তাদের নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ থাকলেও নির্বাচন বানচাল করতে জঙ্গি সংগঠনগুলোর নাশকতা চালানোর পরিকল্পনায় জামায়াতের মদদ রয়েছে।
বিশেষ করে জামায়াত ও ইতোপূর্বে জঙ্গি প্রভাবিত জেলাগুলো রয়েছে বিশেষ টার্গেটে। এসবই আমলে নিয়ে অভিযানও চালিয়ে যাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
জেএমবি দলীয় শক্তি ও অস্তিত্ব জানান দিতে সম্প্রতি দেশব্যাপী বিভিন্ন স্থানে প্রচারপত্র ও ভিডিওর মাধ্যমে প্রচারণা চালাচ্ছে। বিশেষ করে রংপুর বিভাগের ৮ জেলায় সদস্য সংগ্রহ ও যোগাযোগের তৎপরতার খবর পাওয়া গেছে।
ঢাকা মহানগর ডিবি পুলিশ সূত্র জানায়, সম্প্রতি বড় ধরনের জঙ্গি হামলার গোপন প্রস্তুতি বৈঠকের সময় ৪ পাকিস্তানি নাগরিকসহ রাজধানী থেকে ১৬ জনকে গ্রেফতার হয়। রিমান্ডে তাদের দেয়া তথ্যে এমনই আভাস মিলেছে।
সূত্র জানায়, গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে বর্তমান জঙ্গি নেতা ডা. ফরিদ উদ্দিন সাবেক জামায়াত নেতা। এছাড়া বিভিন্ন মামলায় হাজতবাস শেষে যারা বেরিয়ে আসা জঙ্গি সদস্যরা নতুন করে সংগঠিত হওয়ার জন্য নেতৃত্ব দিচ্ছে। এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে নাশকতার মামলায় নিজ এলাকা ছেড়ে অন্যত্র আত্মগোপনে থাকা জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা।
রংপুর বিভাগের পুলিশ রেঞ্জের ডিআইজি হুমায়ুন কবীর জানান, রংপুরে বিভাগের ৮ জেলায় জেএমবির সক্রিয় ও নিষ্ক্রিয় সদস্যদের তালিকা হালনাগাদ করছেন। মাঠপর্যায়ে তাদের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এ নিয়ে কাজ করছে। যারা এর আগে জেএমবি ও আল্লাহর দলের সদস্য হিসেবে বিভিন্ন সময়ে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছে এবং জামিনে বেরিয়ে গেছে- তাদের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের মুখপাত্র ও যুগ্ম কমিশনার (ডিবি) মনিরুল ইসলাম জানান, আনসারুল্লাহ বাংলা টিমে সবাই এক হওয়ার চেষ্টায় রয়েছে। তাদের আপাতত টার্গেট সংগঠিত হয়ে বড় হামলা চালানো। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অব্যাহত অভিযানে ও অনেকে গ্রেফতার হওয়ায় পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারছে না। তবে তারা বসে নেই। পরিকল্পনা করে যাচ্ছে। সতর্কতা হিসেবে অভিযান ও নজরদারি অব্যাহত রেখেছে গোয়েন্দা পুলিশ।