ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম,কুষ্টিয়া প্রতিনিধি,২৫ মার্চ : কুষ্টিয়ার মিরপুরে আওয়ামীলীগের আনন্দ মিছিলে জাসদ নেতা-কর্মীদের হামলায় উজ্জল প্রমানিক (৩৫) নামের এক আওয়ামীলীগ কর্মীর মৃত্যুর সংবাদ পাওয়া গেছে।রোববার (২৪ মার্চ) সন্ধ্যা ৭ টার দিকে মিরপুর উপজেলার চিথলিয়া ইউনিয়নের পাহাড়পুর লক্ষীপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। মিরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ আবুল কালাম উজ্জল প্রমানিকের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তৃতীয় ধাপে রোববার কুষ্টিয়ার ৬ টি উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ৮ টা থেকে বিকেল ৪ টা পর্যন্ত তেমন কোন বিশৃঙ্খলা ছাড়াই শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু সন্ধ্যার পর হঠাৎ করেই পাল্টে যায় উপজেলার চিত্র।প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সন্ধ্যা ৭ টার দিকে চিথলিয়া ইউনিয়নের পাহাড়পুর-লক্ষীপুর বিদ্যালয় কেন্দ্রে ফলাফল গননা শেষে আওয়ামীলীগের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী কামারুল আরেফিন প্রতিদ্বদ্বী প্রার্থী জাসদের ফারুকুজ্জামান জন’র থেকে বেশি ভোট পাওয়ায় উপজেলা যুবলীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক হাফেজ মোস্তাক আহম্মেদের নেতৃত্বে একটি আনন্দ মিছিল বের হয়। মিছিলটি হাজী ওয়াহেদ মোড়ে এসে পৌছালে সেখানে একটি মুদী খানার দোকানে অবস্থান নেওয়া চিথলিয়া ইউনিয়ন জাসদের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান হাবিব ওই দোকান থেকে ওজন মাপার বাটখাড়া ছুড়ে মারে। ছুড়ে মারা ওই বাটখাড়া উজ্জলের গায়ে লাগলে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। নেতা-কর্মীরা আশংকাজনক অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে গেলে সেখানে তার মৃত্যু হয়।মিরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ আবুল কালাম জানান হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে উজ্জল প্রমানিকের মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে তারা ধারণা করছেন। তবে ময়নাতদন্ত রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পরই মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। এদিকে উজ্জল প্রমানিকের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে মিরপুর উপজেলায় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। নিহত উজ্জল পাহাড়পুর-লক্ষীপুর গ্রামের মৃত আব্দুল আজিজের ছেলে।এদিকে কুষ্টিয়ায় সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার প্রত্যাহার, স্বতন্ত্র প্রার্থীর ভোট বর্জনের মধ্য দিয়ে ৩য় ধাপে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কুষ্টিয়ার ৬টি উপজেলায় ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। রবিবার সকাল ৮টা থেকে এ ভোট গ্রহণ শুরু হয়। বিরতিহীনভাবে চলে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। সকাল থেকে কেন্দ্রগুলো ভোটার শূণ্যে থাকলেও বেলা বাড়ার সাথে সাথে ভোটারদের উপস্থিতি ছিল কিছুটা চোখে পড়ার মতো। দুই একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া কুষ্টিয়ায় শান্তিপূর্ণভাবেই ৬টি উপজেলায় ভোট গ্রহণ শেষ হয়। নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, জেলার ছয়টি উপজেলায় নির্ধারিত ৬১১টি কেন্দ্রের মধ্যে ৩৬২টি কেন্দ্রকে অধিক গুরুত্বপূর্ন বা ঝুঁকিপূর্ন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। জেলা জুড়ে পুলিশ, র্যাব আনসার ছাড়াও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মোতায়েন ছিল ১৩ প্লাটুন বিজিবি। কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় বিনা প্রতিদ্বন্দীতায় আওয়ামী লীগ মনোনিত প্রার্থী আতাউর রহমান আতা জয়ী হওয়ায় এই উপজেলায় শুধু ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানের ভোট গ্রহন অনুষ্ঠিত হয়।এদিকে খোকসা উপজেলায় প্রকাশ্যে ব্যালটে ছিল মারার অভিযোগ সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারকে প্রত্যাহার ও জাল ভোট দেয়ার অভিযোগ একজনকে আটক করেছে পুলিশ। উপজেলা রিটানিং কর্মকর্তা মাফখারা তাসনীন জানান, উপজেলার বরইচারা মাধ্যমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার প্রকাশ কুমার ভৌমিক এর বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে ব্যালট পেপারে ছিল মারার অভিযোগ ওঠে।এ বিষয়ে অভিযোগ জানালে তাকে দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করা হয়। এছাড়া একই কেন্দ্রে জাল ভোট দেয়ার সময় স্থানীয়রা একজনকে আটক করে পুলিশে দেয়। অন্যদিকে মিরপুর উপজেলায় নৌকা প্রার্থীর বিরুদ্ধে ভোট কেন্দ্র দখল ও কারচুপির অভিযোগ এনে ভোট বর্জন করেছে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী ফারুকুজ্জামান জন। বেলা ১টায় পোড়াদহ বাজারে সাংবাদিকদের বরাত দিয়ে তিনি ভোট বর্জনের ঘোষনা দেন।মুঠোফোনে তিনি জানান, উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ঘুরে দেখতে পায় বেশিরভাগ কেন্দ্র নৌকার সমর্থকরা দখল করে রেখেছে। সেই সাথে ব্যাপক ভোট কারচুপি করেছে। আমি চাইনি সাধারন মানুষের কোন ক্ষতি হোক তাই ভোট বর্জন করেছি।তবে ভোট কারচুপির অভিযোগ মিথ্যা জানিয়ে চেয়ারম্যান প্রার্থী কামারুল আরেফিন বলেন, সুষ্ঠুভাবে স্বতস্ফুর্ত ভাবে ভোটাররা তাদের ভোট প্রদান করেছে। নৌকার জোয়ার দেখে স্বতন্ত্রপ্রার্থী মিথ্যা অভিযোগ করেছে।কুষ্টিয়া জেলা রিটানিং কর্মকর্তা আসলাম হোসেন জানান, কুষ্টিয়ার ৬টি উপজেলায় শান্তিপূর্ণভাবে উপজেলা নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।